রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন সংশোধনে বিল সংসদে

এটুআই প্রকল্পকে স্বায়ত্তশাসিত সংস্থায় রূপ দিতে যাচ্ছে সরকার।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 June 2023, 06:03 PM
Updated : 7 June 2023, 06:03 PM

ভূমি নিয়ে বিরোধ নিষ্পত্তিতে ভূমি জরিপ আপিল ট্রাইব্যুনালের বিচারক হবেন জেলা জজ। আর ভূমি জরিপ ট্রাইব্যুনালে বিচারক হিসেবে সিনিয়র সহকারী জজ বা সহকারী জজকে নিয়োগ দিতে পারবে সরকার।

এমন বিধান রেখে ১৯৫১ সালের রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ত্ব আইন সংশোধন করা হচ্ছে। বুধবার সংসদে এ সংক্রান্ত ‘স্টেট অ্যাকুইজিশন অ্যান্ড টেন্যান্সি (সংশোধন) বিল-২০২৩’ সংসদে উত্থাপন করেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী।

পরে বিলটি পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য ভূমি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়। নতুন এই সংশোধনী পাস হলে ভূমি জরিপ সংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তির দীর্ঘসূত্রতা কাটবে বলে মনে করা হচ্ছে।

আইনের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্বলিত বিবৃতিতে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জানান, ২০০৪ সালে আইন সংশোধন করে ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল ও ল্যান্ড সার্ভে আপিল ট্রাইব্যুনাল গঠনের বিধান করা হয়।

কিন্তু মামলার সংখ্যার তুলনায় ট্রাইব্যুনাল কম হওয়ায় মামলা নিষ্পত্তিতে দীর্ঘসূত্রতা এবং হাইকোর্ট বিভাগের বিচারক নিয়োগে সমস্যার কারণে ল্যান্ড সার্ভে আপিল ট্রাইব্যুনাল গঠন না হওয়ায় জনগণের বিচার প্রাপ্তি বিঘ্নিত হয়। মামলা নিষ্পত্তিতে দীর্ঘসূত্রিতা দূরীকরণ এবং ‘যথাসময়ে’ জনগণের বিচার প্রাপ্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্‌ট সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মতমাত নিয়ে আইনটি সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

বিদ্যমান আইনে বলা আছে, ভূমি জরিপ ট্রাইব্যুনালের বিচারক হবেন যুগ্ম জেলা জজেরা। সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে আলোচনা করে সরকার এই বিচারক নিয়োগ দেবে।

এই বিধানের সঙ্গে নতুন ধারা যুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, এভাবে বিচারক নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত সরকার যুগ্ম জেলা জজদের ভূমি জরিপ ট্রাইব্যুনালের বিচার কাজের ক্ষমতা দিতে পারবে। এছাড়া ভূমি জরিপ ট্রাইব্যুনাল থেকে স্থানান্তর করা মামলা নিস্পত্তির জন্য এক বা একাধিক সিনিয়র সহকারী জজ বা সহকারী জজকে ট্রাইব্যুনালের বিচারক হিসেবে সরকার নিয়োগ দিতে পারবে।

এতদিন আইনে বলা ছিল, ভূমি জরিপ আপিল ট্রাইব্যুনালের বিচারক হবেন সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারক অথবা সাবেক বিচারক। কিন্তু দীর্ঘদিনেও এই আপিল ট্রাইব্যুনাল গঠিত হয়নি।

এজেন্সি টু ইনোভেট বিল-২০২৩

জনবান্ধব তথ্যপ্রযুক্তি সেবা দিতে কাজ করা এসপায়ার টু ইনোভেট (এটুআই) প্রকল্পকে স্বায়ত্তশাসিত সংস্থায় রূপ দিতে যাচ্ছে সরকার।

এ লক্ষ্যে এজেন্সি টু ইনোভেইট বিল-২০২৩ বুধবার সংসদে উত্থাপন করেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।

পরে বিলটি পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটিতে পাঠান।

বিলে বলা হয়েছে, এই আইন কার্যকর হওয়ার পর সরকার প্রজ্ঞাপন দিয়ে এটুআই নামে একটি এজেন্সি প্রতিষ্ঠা করবে। এজেন্সি হবে একটি সংবিধিবদ্ধ সংস্থা। এই সংস্থার ১৫ সদস্যের একটি পরিচালনা পর্ষদ থাকবে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের মন্ত্রী/প্রতিমন্ত্রী/উপমন্ত্রী হবেন এর সভাপতি।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি- ইউএনডিপির অর্থায়নে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) কর্মসূচি শুরু করা হয়।

পরবর্তী সময়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় ২০১৮ সালে এটুআই প্রোগ্রামকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের অধীনে ন্যস্ত করা হয়।

২০২০ সালে অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) এর নাম পরিবর্তন করে এসপায়ার টু ইনোভেট (এটুআই) রাখা হয়।

বর্তমানে এটা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও ইউএনডিপির অধীনে বাস্তবায়ন হচ্ছে। এর মেয়াদ ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত।

প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নকে প্রকারান্তরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লালিত স্বপ্ন 'সোনার বাংলা'র পুনর্জাগরণ বলা যেতে পারে। ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এবং ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে এজেন্সি টু ইনোভেট (এটুআই) আইন-২০২৩' গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনা ‍শুরু

সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনা শুরু হয়েছে। বুধবার স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদে এ আলোচনা শুরু হয়। 

১ জুন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সংসদে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি ১৫ লাখ ৭৮ হাজার টাকার বাজেট পেশ করেন।

প্রথম দিনের বাজেট আলোচনার সরকারি ও বিরোধী দলের ৮ জন সংসদ সদস্য আলোচনায় অংশ নেন। তারা হলেন সরকারি দলের রমেশ চন্দ্র সেন, মো: মোতাহার হোসেন, নাজিম উদ্দিন আহমেদ, কাজী মনিরুল ইসলাম, রত্না আহমেদ, খালেদা খানম ও জাতীয় পার্টির রুস্তম আলী ফরাজী।

এর আগে দুই দিন আলোচনা শেষে মঙ্গলবার চলতি ২০২২-২৩ অর্থ বছরের সম্পূরক বাজেট পাস হয়।

বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকারি দলের সদস্যরা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ বাজেট বাস্তবায়নের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলায় উত্তরণের পথে দেশ আরেক ধাপ এগিয়ে যাবে।

প্রস্তাবিত বাজেটকে দেশ ও জণগণের আশা আকাঙ্খা প্রতিফলনের রূপরেখা বলে উল্লেখ করে তারা বলেন, এ বাজেট বর্তমান সরকার আমলের বিগত বাজেটগুলোর ধারাবাহিকতায় সফলভাবে বাস্তবায়িত হবে।

বাজেটের ওপর দীর্ঘ আলোচনা শেষে আগামী ২৬ জুন সংসদে পাস হওয়ার কথা আছে। এবার বাজেটের ওপর ৪০ ঘন্টা আলোচনারে সিদ্ধান্ত হয়েছে সংসদের কার্য উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে।