তুরাগ থানার ওসি মোস্তফা আনোয়ার বলেন, “ভিকটিম আমাদের হেফাজতে আছে। মামলার প্রস্তুতি চলছে।”
Published : 30 Mar 2024, 09:06 AM
টাঙ্গাইলের আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম কিবরিয়া ওরফে বড় মনিরের বিরুদ্ধে ঢাকায় এক কলেজছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে।
শুক্রবার রাতে জরুরি সেবার ‘৯৯৯’ নম্বর থেকে কল পেয়ে পুলিশ রাজধানীর তুরাগ থানার এলাকার প্রিয়াংকা সিটি আবাসিক এলাকায় বড় মনিরের ফ্ল্যাট থেকে ওই কলেজছাত্রীকে উদ্ধার করে। তাকে অস্ত্রের মুখে ওই বাড়িতে নিয়ে ধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ।
তবে বড় মনির ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে গেছেন বলে পুলিশের ভাষ্য।
তুরাগ থানার ওসি মোস্তফা আনোয়ার শনিবার ভোরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “টাঙ্গাইলের গোলাম কিবরিয়া ওরফে বড় মনিরের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভিকটিম আমাদের হেফাজতে আছে। মামলার প্রস্তুতি চলছে।”
ওই ছাত্রীর বাবার অভিযোগ, ফেইসবুকে পরিচয়ের সূত্র ধরে শুক্রবার রাতে গাড়িতে করে ওই বাড়িতে নিয়ে অস্ত্রের মুখে ধর্ষণ করা হয় তার মেয়েকে।
এ ঘটনার উপযুক্ত বিচার দাবি করেছেন তিনি।
বড় মনির জেলা বাস মিনিবাস মালিক সমিতির মহাসচিব এবং টাঙ্গাইল-২ (গোপালপুর-ভূঞাপুর) আসনের সংসদ সদস্য তানভীর হাসান ওরফে ছোট মনিরের বড় ভাই।
আগের একটি ধর্ষণের মামলায় বর্তমানে জামিনে আছেন টাঙ্গাইল শহর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বড় মনির।
এক কিশোরীর করা ধর্ষণের মামলায় গত বছর গ্রেপ্তার হয়েছিলেন গোলাম কিবরিয়া ওরফে বড় মনির।
গত বছরের ৫ এপ্রিল রাতে টাঙ্গাইল সদর থানায় ওই কিশোরীর করা মামলায় মনিরের স্ত্রী নিগার আফতাবকেও আসামি করা হয়।
টাঙ্গাইলের ওই মামলার নথি থেকে জানা যায়, সম্পত্তি নিয়ে ভাইয়ের সঙ্গে বিরোধ হলে মামলার বাদী কিশোরী বিষয়টি গোলাম কিবরিয়া ওরফে বড় মনিরকে জানান। কিবরিয়া সমস্যা সমাধান করে দেওয়ার আশ্বাস দেন। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য ২০২২ সালের ১৭ ডিসেম্বর শহরের আদালত পাড়ায় একটি ১০ তলা ভবনের চতুর্থ তলার ফ্ল্যাটে কিশোরীকে যেতে বলেন।
কিশোরীর অভিযোগ, সেখানে যাওয়ার পর তার মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে একটি কক্ষে আটকে রেখে ‘ধর্ষণ’ করেন বড় মনির। ঘটনা প্রকাশ করলে ‘মেরে ফেলার হুমকি’ দেন।
প্রথমবার ‘ধর্ষণের সময় তোলা ছবি দেখিয়ে’ বড় মনি পরে আরও কয়েকবার ‘ধর্ষণ করেন’ বলে মামলায় অভিযোগ করেছেন কিশোরী।
মামলায় তিনি বলেছেন, ধর্ষণের ফলে তিনি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। এ কথা গোলাম কিবরিয়া ওরফে বড় মনিরকে জানালে তাকে গর্ভের সন্তান নষ্ট করার জন্য চাপ ও হুমকি দিতে থাকেন ওই আওয়ামী লীগ নেতা।
তাতে রাজি না হওয়ায় গত বছরের ২৯ মার্চ রাত ৮টার দিকে বড় মনির ওই কিশোরীকে ‘তুলে নিয়ে যান’ এবং একটি কক্ষে তালাবন্ধ করে রেখে আবারও ‘ধর্ষণ’ করেন। তার স্ত্রী নিগার আফতাবও সেখানে ওই কিশোরীকে ‘মারপিট’ করেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে মামলায়।
পরে মেয়েটির একটি সন্তান হয়। এ মামলায় গত বছরের ১৫ মে টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম মো. মাহমুদুল মহসীনের আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করেন বড় মনির। বিচারক তা নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
পরে উচ্চ আদালতে জামিনের জন্য যান বড় মনির। তখন আদালত বড় মনির ও সদ্যজাত শিশুর ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদন দাখিল করতে বলে।
ডিএনএ টেস্ট: সেই শিশুর বাবা বড় মনির নন, আপিল বিভাগে জামিন
গত ৯ অক্টোবর আপিল বিভাগে দাখিল করা ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ধর্ষণের শিকার নারীর গর্ভে জন্ম নেওয়া নবজাতকের বাবা বড় মনির নন।
নবজাতকের ডিএনএর সঙ্গে বড় মনিরের ডিএনএ মেলেনি বলে পিবিআইর দেওয়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদন পক্ষে থাকায় গত বছরের ৯ অক্টোবর বড় মনিরকে জামিন দেয় আপিল বিভাগ।
অন্যদিকে গত বছরের ১৮ নভেম্বর ওই ধর্ষণ মামলার বাদী কিশোরীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।