আফসোস নিয়েই পৃথিবী ছেড়ে গেলেন সনির বাবা

দুই দশক আগে ছাত্রদলের দুই পক্ষের সংঘর্ষের মধ্যে প্রাণ হারান বুয়েট শিক্ষার্থী সাবেকুন নাহার সনি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Feb 2023, 04:15 AM
Updated : 11 Feb 2023, 04:15 AM

ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করছিলেন হাবিবুর রহমান ভুইঞা, তার আফসোস ছিল মেয়ের খুনের জন্য দায়ীদের শাস্তি দেখতে না পারায়। সেই আফসোস নিয়েই চিরবিদায় নিলেনি তিনি।

দুই দশক আগে ছাত্রদলের দুই পক্ষের সংঘর্ষের মধ্যে প্রাণ হারানো বুয়েট শিক্ষার্থী সাবেকুন নাহার সনির বাবা হাবিবুর।

শনিবার সকালে ঢাকার ইবনে সিনা হাসপাতালে মারা যান তিনি। ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে বেশ কিছুদিন ধরে তিনি এই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

হাবিবুর রহমানের ভাগ্নে অধ্যাপক মামুন মোল্লা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তাকে গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরের বিজেশ্বর গ্রামে বাবা-মায়ের পাশে সমাহিত করা হবে।

২০০২ সালের ৮ জুন বুয়েটে দরপত্র নিয়ে ছাত্রদলের দুই পক্ষের সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান কেমিকৌশল বিভাগের ৯৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী সনি।

তিন ছেলে-মেয়ের বাবা হাবিবুর চাকরি করতেন বিটিসিএলে। স্ত্রী দিলারা বেগম সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তা ছিলেন।

মেয়েকে হারানোর পর ‘সন্ত্রাসমুক্ত শিক্ষাঙ্গনের’ দাবি নিয়ে রাজপথে নামেন হাবিবুর। সেই সময় সন্ত্রাসমুক্ত শিক্ষাঙ্গনের দাবিতে সভা-সমাবেশে নিয়মিত মুখ হয়ে উঠেছিলেন তিনি।

চাকরি থেকে অবসরে যাওয়া হাবিবুর রহমানের ক্যান্সার ধরা পড়ে গত বছরের সেপ্টেম্বরে। এরপর তার শরীরিক অবস্থা দ্রুত খারাপ হতে থাকে বলে জানান তার ছেলে মাকসুদুর রহমান রানা।

রানা জানান, তার বাবার কথা বলতে কষ্ট হলেও মাঝেমধ্যে বড় মেয়ে সনির কথা বলেন।

“যাদের গোলাগুলিতে সনির মৃত্যু হল, ১৯ বছরেও তাদের শাস্তি হল না বলে আফসোস করতেন।”

Also Read: বুয়েটছাত্রী সনির বাবার ক্যান্সার, চিকিৎসা চালাতে ‘বিপদে’ পরিবার

বুয়েট ছাত্রদল সভাপতি মোকাম্মেল হায়াত খান মুকি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএম হল ছাত্রদলের মুশফিক উদ্দিন টগরের পক্ষের সংঘর্ষের মধ্যে পড়েছিলেন সনি।

দীর্ঘ আন্দোলনের পর আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। বিচারে নিম্ন আদালতে মুকি, টগর ও নুরুল ইসলাম সাগরের মৃত্যুদণ্ডের রায় হয়।

২০০৬ সালের ১০ মার্চ হাই কোর্ট তাদের মৃত্যুদণ্ডাদেশ বাতিল করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়। এছাড়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত এস এম মাসুম বিল্লাহ ও মাসুমকে খালাস দেয় হাই কোর্ট।

টগর কারাগারে থাকলেও মুকি পালিয়ে যান অস্ট্রেলিয়ায়, সাগরও পলাতক। ফলে তাদের সাজা ভোগ করতে হচ্ছে না।

সনি হত্যার দিনটিকে প্রতি বছর বুয়েটে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন ‘সন্ত্রাসবিরোধী ছাত্র প্রতিরোধ দিবস’ হিসেবে পালন করে। এছাড়া সনি মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন ৮ জুন ‘সন্ত্রাসমুক্ত শিক্ষাঙ্গন’ দিবস হিসেবে পালন করে।

বুয়েটের ছাত্রী হলটি সনির নামে করার দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ওই হলের নাম ‘সাবেকুন নাহার সনি হল’ রাখে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

Also Read: ছাত্রদলের সংঘাতে নিহত শিক্ষার্থী সনির নামে হল বুয়েটের ছাত্রীহল