বুয়েটছাত্রী সনির বাবার ক্যান্সার, চিকিৎসা চালাতে ‘বিপদে’ পরিবার

বুয়েটে দরপত্র নিয়ে ছাত্রদলের দুই পক্ষের সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে ২০০২ সালের ৮ জুন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান কেমিকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী সনি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Jan 2023, 07:25 AM
Updated : 29 Jan 2023, 07:25 AM

দুই দশক আগে ছাত্রদলের সংঘর্ষের মধ্যে প্রাণ হারানো বুয়েট শিক্ষার্থী সাবেকুন নাহার সনির বাবা হাবিবুর রহমান ভুইঞা ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে। তার চিকিৎসার খরচ চালাতে গিয়ে বিপাকে থাকা পরিবার পাশে চাইছে সরকারকে। 

চাকরি থেকে অবসরে যাওয়া হাবিবুর রহমান ভুইঞার শরীরে ক্যান্সারের উপস্থিতি ধরা পড়ে গত বছরের সেপ্টেম্বরে। এরপর তার শরীরিক অবস্থা দ্রুত ‘খারাপ’ হতে থাকে বলে জানান তার ছেলে মাকসুদুর রহমান রানা।

তিন ছেলে-মেয়ের বাবা হাবিবুর রহমান ভুইঞা চাকরি করতেন বিটিসিএলে। স্ত্রী দিলারা বেগম সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তা ছিলেন। মেয়েকে হারানোর পর ‘সন্ত্রাসমুক্ত শিক্ষাঙ্গনের’ দাবি নিয়ে রাজপথে নামেন হাবিবুর। সেই সময় সন্ত্রাসমুক্ত শিক্ষঙ্গনের দাবিতে সভা-সামাবেশের নিয়মিত মুখ হয়ে উঠেছিলেন তিনি।

উত্তরার আহসানিয়া মিশন ক্যান্সার হাসপাতালে হাবিবুর রহমান চিকিৎসাধীন আছে জানিয়ে রানা বলেন “বাবার ব্লাড ক্যান্সার (নন হজকিন লিম্ফোমা) শনাক্ত হয়েছে। ডাক্তাররা তাকে কেমোথেরাপির ছয়টি ডোজ নিতে বলেছেন।

“প্রথম ডোজ নেওয়ার পর গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন বাবা। এখন তার নিউমোনিয়া হয়েছে। নল দিয়ে খাওয়াতে হচ্ছে। “

নিউমোনিয়া থেকে সেরে ওঠার পর হাবিবুর রহমানের ক্যান্সার চিকিৎসার পরের ধাপ শুরু হবে বলে জানান তার ছেলে। তবে এখন তাদের চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে চিকিৎসার খরচ।

“চিকিৎসার খরচ মেটানোর সামর্থ্য হারাচ্ছি আমারা। আশা করছি সরকারসহ শুভানুধ্যায়ীদের পাশে পাওয়া যাবে।“

রানা জানান, তার বাবার কথা বলতে কষ্ট হলেও মাঝেমধ্যে বড় মেয়ে সনির কথা বলেন।

“যাদের গোলাগুলিতে সনির মৃত্যু হল, ১৯ বছরেও তাদের শাস্তি হল না বলে এখনও আফসোস করেন।“

২০০২ সালের ৮ জুন বুয়েটে দরপত্র নিয়ে ছাত্রদলের দুই পক্ষের সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান কেমিকৌশল বিভাগের ৯৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী সনি।

বুয়েট ছাত্রদল সভাপতি মোকাম্মেল হায়াত খান মুকি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএম হলের টগর গ্রুপের সংঘর্ষের মধ্যে পড়েছিলেন তিনি।

দীর্ঘ আন্দোলনের পর আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। বিচারে নিম্ন আদালতে মুকি, টগর ও নুরুল ইসলাম সাগরের মৃত্যুদণ্ডের রায় হয়।

২০০৬ সালের ১০ মার্চ হাই কোর্ট তাদের মৃত্যুদণ্ডাদেশ বাতিল করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়। এ ছাড়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত এসএম মাসুম বিল্লাহ ও মাসুমকে খালাস দেয় হাই কোর্ট।

মুকি পরে পালিয়ে যান অস্ট্রেলিয়ায়। সাগরও পলাতক রয়েছেন। কারাগারে রয়েছেন টগর।

সনি হত্যার দিনটিকে প্রতিবছর বুয়েটে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন ‘সন্ত্রাসবিরোধী ছাত্র প্রতিরোধ দিবস’ হিসেবে পালন করে। এ ছাড়া সনি মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন ৮ জুন ‘সন্ত্রাসমুক্ত শিক্ষাঙ্গন’ দিবস হিসেবে পালন করে।

বুয়েট শিক্ষার্থীদের ছাত্রী হলটি সনির নামে করার দাবির প্রেক্ষিতে ওই হলের নাম ‘সাবেকুন নাহার সনি হল’ রাখে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

পুরনো খবর

Also Read: সনি হত্যার ২০ বছর: দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতকদের গ্রেপ্তারের দাবি