সড়কে মৃত্যু কমছে না

সরকারের নানা উদ্যোগের পরও কমানো যাচ্ছে না সড়ক দুর্ঘটনা, প্রতি বছর সড়কে মৃত্যুর মিছিল কেবলই দীর্ঘায়িত হচ্ছে।

ওবায়দুর মাসুমবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 March 2019, 06:35 AM
Updated : 24 March 2019, 06:41 AM

পুলিশ বলছে, সড়ক মহাসড়কে ছোট যানবাহনের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া দুর্ঘটনা বাড়ার একটি বড় কারণ। দুর্ঘটনা ও হতাহতের ঘটনা কমাতে ছোট গাড়ি কমিয়ে বড় যানবাহনের দিকে নজর দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে তারা।

অন্যদিকে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি বলছে, দুর্ঘটনা রোধে কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না বলেই সড়ক দুর্ঘটনা বাড়ছে।

পুলিশ, বিআরটিএ এবং বুয়েটের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এআরআই) গত চার বছরের পরিসংখ্যান বলছে, এ সময় সড়ক দুর্ঘটনা এবং প্রাণহানি দুটোই বেড়েছে।

পুলিশ এবং বিআরটিএর হিসাবের সঙ্গে এআরআইয়ের হিসাবে পার্থক্য রয়েছে। এআরআই যে হিসাব দিচ্ছে তাতে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির সংখ্যা পুলিশ ও বিআরটিএর হিসাবের চেয়ে বেশি।

সারাদেশে দুর্ঘটনা ও হতাহতের সংখ্যা বাড়লেও
মহাসড়কে তা কমেছে। মহাসড়কে ২০১৫ সালে ১৭৭৩ জন, ২০১৬ সালে ১৭৬৯ জন, ২০১৭ সালে ১৬০১ জন এবং ২০১৮ সালে ১৪৩৯ জন দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন বলে তথ্য দিচ্ছে এআরআই।

বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক সাইফুন নেওয়াজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এআরআই যে তথ্য দিচ্ছে তা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সড়ক দুর্ঘটনার খবর বিশ্লেষণ করে তৈরি করা। সেজন্যই পার্থক্য হচ্ছে।

“সেসব দুর্ঘটনায় মামলা করা হয় বা এফআইআর হয়, সেগুলোর ওপর ভিত্তি করে পুলিশ তাদের ডেটাবেইজ করে। আর মামলা হোক বা না হোক, মোটামুটি সব তথ্যই গণমাধ্যমে চলে আসে। আমরা সেখান থেকে তথ্য নিই। এ কারণে সংখ্যাটা বেশি হয়। আমরা পুলিশের কাছ থেকেও তথ্য নিয়েছি।”

বুয়েটের এই শিক্ষক মনে করেন, বিভিন্ন সময় করা সুপারিশগুলোর পুরোপুরি বাস্তবায়ন না হওয়ায় সড়ক দুর্ঘটনা কমানো যাচ্ছে না।

তিনি বলেন, “ঢাকা শহরের জন্য বাস রুট ফ্র্যাঞ্চাইজি করা খুব জরুরি। এটা করতেই হবে। আমরা বিভিন্ন সময় এটা করতে বলেছিলাম, কিন্তু হয়নি।

“আর সড়ক মহাসড়কে যানবাহনের গতি কমাতে হবে। গতি কমাতে বাধ্য করার জন্য ডিজিটাল প্রযুক্তি আনতে হবে। যেন চালকরা গতি বাড়ালেও সেই তথ্য পুলিশের কাছে চলে আসে।”

কাজী সাইফুন নেওয়াজ বলেন, সুপারিশ বাস্তবায়নের সময় বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে রাখা এবং কাজ ঠিকমত হল কি না তা পরীক্ষা করাও জরুরি।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলছেন, সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারের কোনো আন্তরিক চেষ্টা তিনি দেখছেন না।

“দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করার মত কোনো কার্যকর পদক্ষেপ আমরা দেখছি না। সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা চলছে আল্লাহর ওয়াস্তে। নিরাপদ সড়কের জন্য দুই দফা আন্দোলনের পরও দৃশ্যমাণ কোনো কার্যক্রম নেওয়া হয়নি। যা হচ্ছে তা কেবল মুখে মুখে, ফাঁকা বুলি। সচিবালয়ে নিরাপত্তা কাউন্সিলের মিটিং ডাকলেই কি রাতারাতি দুর্ঘটনা কমিয়ে ফেলা যায়? এজন্য কাজ করতে হবে।”

তবে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিবের সঙ্গে একমত নন হাইওয়ে পুলিশের ডিআইজি আতিকুল ইসলাম।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দুর্ঘটনা কমানো যাচ্ছে না বিষয়টি এমন না। চার বছর আগে ১৭ শর মত ছিল, আমরা তা কমিয়ে ১৪ শতে আনতে পেরেছি। আমরা কিছু প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নেওয়ায় হাইওয়েতে দুর্ঘটনা কমেছে। আমরা কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি, আশা করছি এটা আরও কমবে। আমরা এসব ব্যবস্থা না নিলে হয়ত এটা আরও বেড়ে যেত।”

এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ইজিবাইক ও অটোরিকশার মত যানবাহন মহাসড়কে চলতে না দেওয়ায় সেখানে দুর্ঘটনা কমেছে। কিন্তু শহর এলাকার সড়কে ছোট যানবাহনের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে, ফলে দুর্ঘটনাও বেড়েছে।

“এই টাইপের গাড়িগুলো সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর জন্য দায়ী। এসব গাড়ি যত বাড়বে দুর্ঘটনাও তত বাড়বে। এজন্য দুর্ঘটনা রোধে একটাই উপায়, তা হল এসব গাড়ি নামানো বন্ধ করতে হবে, বড় গাড়ির সংখ্যা বাড়াতে হবে।”