ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বে ১৬ বছর আগে ঘনিষ্ঠ বন্ধুকে খুন করে শাহিনে আলমের ঠাঁই হয়েছিল শ্রীঘরে; ১০ বছর জেল খাটার পর জামিনে বেরিয়ে চলতেন ছদ্মবেশে। মাস দশেক আগে মৃত্যুদণ্ডের রায় হলে দেশ ছাড়ার প্রস্তুতি শুরু করেন তিনি। তবে শেষবারের মতো পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে এ ফেরারী ধরা পড়লেন র্যাবের হাতে।
মানিকগঞ্জের ঘিওর থেকে সোমবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করার কথা জানিয়ে মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলন করেছেন র্যাব-৪ এর অধিনায়ক ডিআইজি মোজাম্মেল হক।
মঙ্গলবার ঢাকার কারওয়ান বাজারের র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “দেশের বাইরে চলে যাওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর মানিকগঞ্জে নিজ গ্রামে শেষ বারের মত পরিবারের সদস্যদের সাথে দেখা করতে আসে।
“তার আসার খবর গোয়েন্দা মারফত জানার পর আমরা অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করি।”
র্যাব জানায়, ২০০৬ সালের ২১ মে মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া থানা পুলিশ বেতুলিয়া ব্রিজের ঢাল থেকে মাথাবিহীন একটি লাশ উদ্ধার করে। একদিন বাদে ২৩ মে কাছের এলাকা টাঙ্গাইলের নাগরপুরের জগতলা এলাকার খালের পাশ থেকে দেহবিহীন মাথা উদ্ধার করা হয়। ওই লাশ উদ্ধারের ঘটনায় সাটুরিয়া থানায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা করা হয়।
ওই দিনই নিখোঁজ ভাইয়ের জন্য ধামরাই থানায় জিডি করতে যান সাইফুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি। সেখানে পুলিশের কাছ থেকে খবর পেয়ে তিনি ওই লাশকে নিখোঁজ ভাই শহিদুল ইসলাম বলে শনাক্ত করেন।
পরে তদন্তে উঠে আসে, ঘনিষ্ঠ বন্ধু শহিদুল ইসলাম ও শাহিন আলম গার্মেন্টের চাকরি ছেড়ে ২০০৪ সালে ধামরাইয়ের গোয়াড়ীপাড়ায় ‘বাংলা সমাজ উন্নয়ন সংস্থা’ নামে ক্ষুদ্র ঋণদানকারী সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। একপর্যায়ে পুরো ব্যবসা নিজের করে নিতে শহিদুলকে হত্যার ছক আঁটেন শাহিন।
এ পরিকল্পনার অংশ হিসাবে ২০০৬ সালের ২০ মে রাতে শহিদুলকে মাইক্রেবাসে তুলে গাড়ির মধ্যেই হত্যা করে মাথা ছিন্ন করো হয়। এরপর বিচ্ছিন্ন দেহ পলিথিনে নাগরপুরে নিয়ে ফেলে দেওয়া হয়।
এ মামলায় গত ১ ডিসেম্বর শাহিন আলমকে মৃত্যুদণ্ড ও তার মামাত ভাই রাজা মিয়ার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়।
এছাড়া সাহেদ, রাজা মিয়া, আব্দুল কুদ্দুস ও বিষ্ণু সুইপার নামের আরও চারজন যাবজ্জীবনে দণ্ডিত হয়।
পুলিশ ঘটনার পর শাহিন, সাহেদ ও বিষ্ণু সুইপারকে গ্রেপ্তার করতে পরলেও অন্যরা আত্মগোপনে চলে যায় জানিয়ে র্যাব কর্মকর্তা মোজাম্মেল বলেন, “প্রায় ১০ বছর কারাভোগের পর শাহিন জামিনে বের হয়ে আদালতে হাজিরা না দিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় ফেরিওয়ালাসহ নানা পেশার ছদ্মবেশ ধারণ করে চলতে থাকে।”
র্যাব-৪ অধিনায়ক বলেন, “শাহিন মূল পরিকল্পনাকারী। ‘বাংলা সমাজ উন্নয়ন সংস্থা’ নামের যে প্রতিষ্ঠান তারা গড়ে তুলেছিল, সেটি মূলত শহিদুলের কারণে প্রসার ঘটেছিল। এ অবস্থায় শাহিন ঈর্ষান্বিত হয়ে তাকে হত্যা করে।”
এ মামলায় দণ্ডিত রাজা মিয়া ও কুদ্দুসকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি।