“আমি একা না, সবাই তাই নিতাছে”, অতিরিক্ত ভাড়া চাওয়ার বিষয়ে এক মোটর সাইকেল চালকের বক্তব্য।
Published : 13 Aug 2023, 06:40 PM
শ্রাবণের টিপ টিপ বৃষ্টি তীব্র গরম থেকে স্বস্তি দিলেও রাজধানীতে চলাচলের ভোগান্তির পাশাপাশি যাতায়াত খরচ বাড়িয়ে দিয়েছে।
নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে এমনিতে চাপে থাকা মানুষদের জন্য এই খরচ বাড়তি চাপ হয়ে উঠেছে।
রিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মোটর সাইকেল বা অ্যাপে চলা প্রাইভেটকার, বৃষ্টির কারণে সব বাহনেই ভাড়ার বাড় বাড়ন্ত দেখা গেছে সপ্তাহের প্রথম দিন রোববার। কেবল বাসে সে সুযোগ ছিল না। তবে ছিল ভোগান্তি।
যাত্রীরা জানালেন, এমন আবহাওয়ায় চালকরা ভাড়া কমাতে চান না। তারা যা দাবি করেন, তার নিচে নামেন না। স্বাভাবিক সময়ে দুই থেকে আড়াইশ টাকা ভাড়া যেখানে, সেখানে আদায় হয়েছে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা।
মতিঝিলে একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মী ইসরাত জাহান মৌ। বৃষ্টিতে আধভেজা অবস্থায় রিকশায় করে রোববার সকালে পৌঁছেছেন কর্মস্থলে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “রাতে যে পরিমাণ হয়েছিল, ভেবেছিলাম সকালে বৃষ্টি আর হবে না। কিন্তু দেখলাম বন্ধ হওয়ার লক্ষণও নেই। সাড়ে ৮টায় সবুজবাগের বাসা থেকে বের হই। অনেক অপেক্ষার পর একটি রিকশায় করে মতিঝিল। স্বাভাবিক সময়ে এই দূরত্বের রিক্সা ভাড়া ৬০ থেকে ৭০ টাকা। আজ ভাড়া গুনতে হয়েছে ১৩০ টাকা।”
মতিঝিলেই বেসরকারি একটি শিপিংলাইনসের কর্মী আতিক উল্লাহ ফয়েজ অফিসে আসেন মানিকনগর থেকে। এমনিতে ভাড়া ৪০ টাকা, বৃষ্টিমুখর সকালে দিতে হয়েছে ১০০ টাকা।
রাজধানীতে বৃষ্টি মানেই ভোগান্তি। ভারি বর্ষণে পুরান ঢাকার যাত্রাবাড়ী, কাজলা, শনির আখড়া, মাতুয়াইলসহ বহু এলাকার সড়কে পানি জমে যায়। জামা কাপড় ভিজে একাকার অবস্থা হয়ে যায়।
এ কারণে অফিসগামী কেউ কেউ এখন বাড়তি পোশাক সঙ্গে বা অফিসে রেখে দেন।
মতিঝিলের চাকরিজীবী আতিক উল্লাহ বলেন, “রেইনকোট ব্যবহার করি। তারপরও অনেক সময় ভিজে যায় শরীরের কিছু অংশ। তাই ব্যাগে করে অতিরিক্ত এক সেট পোশাক নিয়ে আসি। অফিসে এসে বদলে ফেলি তা।’’
আইনজাবী নয়ন শিকদারও যাত্রাবাড়ী থেকে সেখানে চলাচল করেন মোটরসাইকেলে। পুরান ঢাকার সদরঘাটের কাছে থাকা জজকোর্ট লাগোয়া আইনজীবী সমিতির অফিসে তার চেম্বার।
তিনি বলেন, “কোনো মতে একটা টি-শার্ট বা জামা পরে তার ওপর রেইনকোট ব্যবহার করি। কোর্টে এসে সঙ্গে আনা আইনজীবীর পোশাক পরি। বেশিরভাগ আইনজীবীই তাই করেন।’’
অতিরিক্ত পোশাক না আনলে চাকরি করা যাবে না বলেও মনে করেন ব্যাংকার আসিফ ইব্রাহিম। তিনি বলেন, “অফিসে এক সেট কাপড় রাখি সবসময়। জুতাও রেখেছি। অফিসে একটু আগে এসেই বদলে ফেলি। নইলে আধ ভেজা কাপড়ে এসি পরিবেশে ঠান্ডা লেগে যায়।’’
পানি জমে যাওয়ায় অফিসগামীদের অনেককে জুতা হাতে নিয়ে প্যান্ট মুড়িয়ে চলাচল করতে হয়েছে। পাঁচ মিনিটের হাঁটা পথও রিকশায় চড়ার কথা জানিয়েছেন সরকারি চাকরিজীবী জাবেদ আলম।
তিনি বলেন, “বাসা থেকে পাঁচ মিনিট লাগে কাজলা বাসস্ট্যান্ডে আসতে। হেঁটেই যাই। কিন্তু ছাতা নিয়ে বের হলেও পা রাখা যাচ্ছে না বৃষ্টির পানিতে। তাই ২০ টাকার ভাড়া ৫০ টাকা দিয়ে রিকশায় এলাম।’’
ভাড়া বেশি নেওয়ার কথা স্বীকার করে মধ্যবয়সী রিকশা চালক হারুন মিয়া বলেছেন বৃষ্টিতে ভিজে বেশিক্ষণ চালাতে না পারার কথা।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “ভাড়া তো বেশিই দেওন লাগব। আমরা তো বৃষ্টির মইধ্যে বাইর হইছি দুইডা ট্যাকার নাইগা। ঠান্ডা বৃষ্টিতে দুই-তিন ঘণ্টার পর তো আর শরীর চলে না, তহন আবার খরচ আছে। এর মধ্যেই যদি তিন-চাইর শ না কামাইতে পারি তাইলে জমার টাকা (রিক্সা মালিকের ভাড়া) দিমু ক্যামনে?’’
বৃষ্টির পানিতে ভেজা শরীরের ঠান্ডাভাব কাটাতে ঘন ঘন চাসহ খাদ্যে খরচ বেড়ে যায় যায় বলে জানালেন তিনি।
মিরপুর-১০ থেকে বাসে করে মতিঝিল আসা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী রায়হান কবির বলেন, “ভাড়া বেশি দিতে হয়নি। তবে বৃষ্টিতে বাস কম, উঠতে হয়েছে অনেক অপেক্ষার পর। যানজটও বেশি ছিল। এই পথ আসতে এমনিতে এক থেকে দেড় ঘণ্টা লাগে সকালে। আজ লাগল দুই ঘণ্টার বেশি।’’
বেলা ১টার দিকে মোটরসাইকেলে করে মতিঝিল থেকে গুলশান-২ যেতে চালক আবির হাসানের সঙ্গে কথা বলে মোহাম্মদ রবিউল ভাড়া ঠিক করলেন ৪৫০ টাকা। স্বাভাবিক সময়ে এই পথের জন্য লাগে সর্বোচ্চ ২৫০ টাকা।
এত বেশি ভাড়া নেওয়ার কারণ ব্যাখ্যায় আবির হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বৃষ্টিতে মোটরসাইকেল চালাতে কষ্ট হয় বেশি, সাবাধানে থাকতে হয় সব সময়, যানজটও বেশি হয়। তাই ভাড়া একটু বেশি। আমি একা না, সবাই তাই নিতাছে।’’
অটোরিকশায় করে মতিঝিল থেকে জিগাতলা যেতে ওবায়দুল সরকার ভাড়া ঠিক করলেন ৫০০ টাকা। অনেকক্ষণ দরদাম করেও রাজি করতে পারেননি কাউকে। অগত্যা চালকের দাবি মেনে নিয়ে এগোতে হল তাকে। এমনিতে এই পথে ভাড়া লাগে দুইশ থেকে আড়াইশ টাকা।
দীর্ঘ বৃষ্টির পর কিছুটা বিরতি দিয়ে চলা হালকা থেকে ভারি এ বৃষ্টিপাত আরো দু’একদিন চলার আভাস দিয়ে রেখেছে আবহাওয়া অফিস।