আওয়ামী লীগ নেতা ও কৃষি খামারি দুরন্ত বিপ্লবের মৃত্যু নিয়ে ‘জাস্টিস ফর দুরন্ত বিপ্লব’ নামে একটি বই প্রকাশিত হয়েছে; যেটিকে ‘দুরন্ত বিপ্লব হত্যাকাণ্ডের ডকুমেন্টারি এভিডেন্স বা দালিলিক সাক্ষ্য’ বলছে তার পরিবার।
শ্রাবণ প্রকাশনী থেকে বের হওয়া ৩২৮ পৃষ্ঠার সংকলনটি তার বোন শাশ্বতী বিপ্লব সম্পাদনা করেছেন।
শনিবার দূরন্ত বিপ্লবের জন্মদিনে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বইটির প্রকাশনা উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
এতে সংকলনটি প্রকাশের পেছনে তিনটি উদ্দেশ্য রয়েছে জানিয়ে শাশ্বতী বিপ্লব বলেন, দুরন্ত বিপ্লবের মৃতু ঘিরে তৈরি হওয়া কিছু প্রশ্ন নির্মোহভাবে রেখে যাওয়া, দুরন্ত বিপ্লবের মৃত্যুতে সামজিক যোগাযোগমাধ্যমে যে হাহাকার ও ভালোবাসার প্রকাশ ঘটেছে, সেগুলোর মূল্য দেওয়া এবং দুরন্ত বিপ্লব নিখোঁজ হওয়ার দিন থেকে অসংখ্য মানুষ আমার ও আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ।”
সংকলনের বাইরেও কিছু গুরুত্বপূর্ণ ‘তথ্য-উপাত্ত ও সূত্র’ পিবিআইয়ের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
দুই যুগ আগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন দুরন্ত। রাজনীতিতে এখন আগের মতো সক্রিয় না থাকলেও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কৃষি ও সমবায় বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য ছিলেন তিনি।
গত কয়েক বছর ধরে কেরানীগঞ্জের বাস্তায় সোনামাটি অ্যাগ্রো ফার্ম নামে একটি কৃষি খামার চালাচ্ছিলেন তিনি।
২০২২ সালের ৭ নভেম্বর সন্ধ্যায় কেরানীগঞ্জ থেকে মোহাম্মদপুরে মায়ের বাড়িতে যাওয়ার পথে তিনি নিখোঁজ হন; দুদিন পর দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় জিডি করে তার পরিবার।
এরপর ১২ নভেম্বর বিকালে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার পাগলা ঘাট এলাকার বুড়িগঙ্গা থেকে ভাসমান একটি লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে স্বজনরা এটিকে দুরন্ত বিপ্লবের বলে শনাক্ত করে।
পরদিন তার লাশের ময়নাতদন্তের পর চিকিৎসক সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, দুরন্ত বিপ্লব ‘হত্যাকাণ্ডের শিকার’ হয়েছেন।
এরপরই বিপ্লবের ছোটবোন শাশ্বতী বিপ্লব দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানায় অজ্ঞাতদের আসামি করে মামলা করেন।
এদিকে চিকিৎসক ও পরিবার হত্যার সন্দেহের কথা বললেও পুলিশ এটিকে দুর্ঘটনা বলে আসছিল; ঘটনার ছায়া তদন্তে নেমে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনও (পিবিআই) একই কথা জানায়।
সংকলনটি উপস্থাপনে শাশ্বতী বিপ্লব বলেন, “জাস্টিস ফর দুরন্ত বিপ্লব বইটি আসলে একটি সংকলন। দিনপঞ্জিও বলা যেতে পারে।
“৭ নভেম্বর ২০২২ থেকে ৭ জানুয়ারি ২০২৩ পর্যন্ত মোট ৬২ দিনের ঘটনাপ্রবাহ গ্রন্থিত আছে এই বইয়ে। দৃরন্ত বিপ্লবের হঠাৎ করে নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়া, শীতলক্ষ্যায় তার মরদেহ খুঁজে পাওয়া থেকে শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তদন্ত, গণমাধ্যমের ভূমিকা ও বন্ধু-স্বজনদের প্রতিক্রিয়া যতটা সম্ভব তুলে আনার চেষ্টা করেছি।”
তিনি বলেন, “এই মামলায় ময়নাতদন্ত রিপোর্ট সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করে যাওয়া হচ্ছে, যা খুবই বিস্ময়কর। এমন বৈজ্ঞানিক একটা বিষয়কে কিছু অনুমানের ভিত্তিতে খারিজ করে দেওয়া হয়েছে।
“পুরো তদন্ত প্রক্রিয়ায় সুরতহাল প্রতিবেদনকে সম্পূর্ণভাবে পাশ কাটিয়ে যাওয়া হয়েছে। ময়নাতদন্তের চেয়েও সুরতহাল প্রতিবেদনটি আরও ভয়ঙ্কর। তার আঘাতের চিহ্নগুলো পাশ কাটিয়ে যাওয়া হয়েছে।”
দুরন্ত বিপ্লবের ছোট ভাই দুর্জয় বিপ্লব বলেন, “আমরা দুজন পিঠাপিঠি ভাই৷ আমার ভাই খুব স্বপ্নবাজ ছিলেন। আমার ভাইয়ের শারীরিক মৃত্যুর মাধ্যমে আমার ভাইয়ের স্বপ্নেরও মৃত্যু হয়েছে…বাংলাদেশের মানুষের খুব অদ্ভুত মৃত্যু হয়।
“কিন্তু যখন তা নিজের পরিবারের সঙ্গে ঘটে তখন আর মেনে নেওয়া যায় না। বিচারহীনতার সংস্কৃতি দেশে ছিল, এখনও অনেক বড় বড় হত্যার বিচার এদেশে হয়নি৷ এই সংস্কৃতি যখন নিজের পরিবারের ওপর আসে তখন তা খুব দুঃসহ হয়ে ওঠে।"
এদিকে সংকলনটি প্রকাশের সিদ্ধান্তের পর থেকে অপরিচিত নম্বর থেকে ‘ভৌতিক কল’ পাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন প্রকাশক রবীন আহসান।
তিনি বলেন, “রাত দুইটা-তিনটায়ও এসব কল আসছে। কল ধরার পর অপর প্রান্ত থেকে অগোছালো কথা বলা হচ্ছে। এটা খুবই ভয়ের ব্যাপার।”
আরও পড়ুন