জামাতুল আনসারের ৫ জঙ্গি গ্রেপ্তার

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ ও গুলিস্তান থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয় বলে র‌্যাবের ভাষ্য। 

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Dec 2022, 12:50 PM
Updated : 5 Dec 2022, 12:50 PM

নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করার কথা জনিয়েছে র‌্যাব।

রোববার রাতে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ ও গুলিস্তান থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয় বলে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান।

গ্রেপ্তাররা হলেন, মো. গোলাম সারোয়ার (২৫), সাকিব মাহমুদ (২৭), মো. ফরহাদ হোসেন (২২), মো. মুরাদ হোসেন (২১) ও মো. ওয়াসিকুর রহমান ওরফে নাঈম (২৮)।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন সোমবার কারওয়ানবাজারে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, কুমিল্লা থেকে বেশ কয়েকজন তরুণ উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে সম্প্রতি নিরুদ্দেশ হয়। র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখার একটি দল ৪ তরুণকে উদ্ধার করে ‘ডি-র‌্যাডিক্যালাইজড’ করে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়। এছাড়াও নিখোঁজ এক তরুণ বাড়িতে ফিরে যায়।

গত ৬ অক্টোবর মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ ও ময়মনসিংহ এলাকায় অভিযান চালিয়ে নিখোঁজ চার তরুণসহ উগ্রবাদী কার্যক্রমে জড়িত মোট ৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

তাদের কাছে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গত ১০ অক্টোবর রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ও কেরাণীগঞ্জ থেকে নিরুদ্দেশ তিন তরুণসহ আরও ৫ জনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

খন্দকার আল মঈন বলেন, “বিভিন্ন সময়ে নিখোঁজ তরুণদেরকে সশস্ত্র প্রশিক্ষণের জন্য বান্দরবান ও রাঙ্গামাটির দুর্গম পাহাড়ী অঞ্চলে পাঠানোর তথ্য দেন তারা। গত ২১ অক্টোবর রাঙ্গামাটি ও বান্দরবানের দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলে অভিযান চালিয়ে নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার শূরা সদস্য সৈয়দ মারুফ আহমদ মানিকসহ ৭ জন এবং পাহাড়ী বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের ৩ জনসহ মোট ১০ জনকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ গ্রেপ্তার করা হয়।”

এছাড়া গত ৩ নভেম্বর রাতে কুমিল্লার লাকসাম এলাকায় অভিযান চালিয়ে ওই সংগঠনের অর্থ বিষয়ক প্রধান সমন্বয়ক মুনতাছির আহম্মেদ ওরফে বাচ্চু, সমন্বয়ক সুজন ওরফে সোহেল এবং মো. ইসমাইল হোসেন ওরফে হানজালা ওরফে মনসুর এবং সামরিক শাখার তৃতীয় সর্বোচ্চ ব্যক্তি হেলাল আহমেদ ওরফে জাকারিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানান এই র‌্যাব কর্মকর্তা।

তিনি বলেন, “তাদের নিকট হতে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে গত ৯ নভেম্বর সংগঠনটির অন্যতম অর্থ সরবরাহকারী ২ সদস্যসহ ৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। বিভিন্ন সময়ে গ্রেপ্তারকৃতরা উগ্রবাদী সংগঠনটি সম্পর্কে বিভিন্ন চাঞ্চল্যকর ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন “

এর ধারাবাহিকতায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রোববার রাতে র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১১ নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও ও গুলিস্তান থেকে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে।

“প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায় যে, তারা জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া এর দাওয়াতী, হিজরকৃত সদস্যদের প্রশিক্ষণ ও তত্ত্বাবধান, পার্বত্য অঞ্চলে প্রশিক্ষণ পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহসহ অন্যান্য সাংগঠনিক কার্যক্রমের সাথে জড়িত ছিল,” বলেন মঈন।

তিনি বলেন, “সাম্প্রতিক সময়ে জামাতুল আনসারের বিরুদ্ধে পরিচালিত অভিযানের কারণে তারা বিভিন্ন ছদ্মবেশে আত্মগোপনে থাকে এবং সংগঠনে জ্যেষ্ঠ সদস্যদের নির্দেশনা অনুযায়ী তারা সংগঠনের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ ও প্রয়োজনীয় অন্যান্য সামগ্রী সংগ্রহ করে বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে দিত।”

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গ্রেপ্তারদের মধ্যে গোলাম সারোয়ার স্থানীয় একটি মাদ্রাসা থেকে ফাজিল পাস করে লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে একটি মিষ্টির দোকানে চাকরি করতেন।

“তিনি এর আগে গ্রেপ্তার নেয়ামত উল্লাহর জামাতা। শ্বশুরের মাধ্যমে দুই বছর আগে তিনি জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার আদর্শে অনুপ্রাণিত হন। তথাকথিত হিজরতের উদ্দেশ্যে বের হওয়া তরুণদেরকে কুমিল্লার বিভিন্ন সেইফ হাউজে রাখা ও পার্বত্য অঞ্চলে প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে প্রেরণ সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমের সাথে তিনি জড়িত ছিলেন,” বলেন মঈন।

তিনি বলেন, কুমিল্লা থেকে নিখোঁজ তিন তরুণকে (নেহাল, আসমানী ও নিলয়) দৌলতগঞ্জ রেলস্টেশনের নিকটবর্তী সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গিয়েছিল, তাদের সঙ্গে ছিলেন সারওয়ার।

গ্রেপ্তারদের মধ্যে সাকিব মাহমুদ গাইবান্ধা থেকে মাধ্যমিক করে একটি টেলিকম প্রতিষ্ঠানে মার্কেটিংয়ের কাজ করতেন। তিনি জামাতুল আনসারের শুরা সদস্য, উপদেষ্টা ও প্রশিক্ষণের তত্ত্বাবধায়ক শামিন মাহফুজের আপন ভাতিজা বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।

মঈন বলেন, “তিনি ৩ বছর আগে শামিন মাহফুজের মাধ্যমে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ায় যোগ দেন। গাইবান্ধা অঞ্চলে তিনি সংগঠনের দাওয়াতী কার্যক্রমের সাথে জড়িত ছিলেন। তিনি এ সংগঠনের একজন সশস্ত্র প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সদস্য।

“গাইবান্ধায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একজন সদস্য ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে কটূক্তি করায় সংগঠনের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশনায় তাকে হত্যার পরিকল্পনা করতে থাকে সাকিব। সেজন্য আরও ৩ থেকে ৪ জন সদস্যকে একত্রিত করে। তবে তার আগেই গ্রেপ্তার হয়। তার বিরুদ্ধে ২০২০ সালে গাইবান্ধা সদর থানায় একটি হত্যাচেষ্টা মামলা রয়েছে।”

র‌্যাবের সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ফরহাদ হোসেন ও মুরাদ হোসেন সহোদর। ফরহাদ উচ্চ মাধ্যমিক এবং মুরাদ মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। তারা জামাতুল আনসারের শুরা সদস্য এবং অর্থ ও গণমাধ্যম শাখার প্রধান মোশারফ হোসেন ওরফে রাকিবের শ্যালক।

মঈন বলেন, “তিন বছর পূর্বে মোশারফ হোসেনের মাধ্যমে তারা উক্ত সংগঠনের সাথে জড়িত হয়। তারা রাজধানীর গুলিস্তান এলাকায় সংগঠনের অর্থ দিয়ে ‘ট্রাস্ট টেলিকম’ নামে একটি মোবাইল এক্সেসরিজের দোকান পরিচালনা করতেন এবং দোকানের লভ্যাংশ সংগঠনের প্রশিক্ষণসহ অন্যান্য সাংগঠনিক কার্যক্রমে ব্যয় করতেন।

“এছাড়া মুন্সীগঞ্জে তারা একটি গরু-ছাগলের খামার পরিচালনা করতেন। সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা কর্মীরা বিভিন্ন সময়ে তাদের খামারে গিয়ে মিটিং করত। পার্বত্য অঞ্চলে প্রশিক্ষণ পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী, বস্ত্র, নিত্য প্রয়োজনীয় অন্যান্য দ্রব্যাদি এবং বোমা তৈরির জন্য কতিপয় সামগ্রীস ফরহাদ ও মুরাদ সংগ্রহ করত এবং পরে মগবাজারে গ্রেপ্তার ওয়াসিকুর রহমান নাঈমের কাছে পৌঁছে দিত।”

ওয়াসিকুর রহমান ওরফে নাঈম রাজধানীর একটি মাদ্রাসা থেকে হিফজ শেষ করেন। ২ বছর আগে তিনি জামাতুল আনসারে যোগ দেন বলে র‌্যাবের ভাষ্য।

মঈন বলেন, “রাজধানীর মগবাজার এলাকায় সংগঠনের অর্থ দিয়ে ষোল আনা নামে একটি আতরের দোকান পরিচালনা করতেন এবং লাভের টাকা সংগঠনের প্রশিক্ষণসহ অন্যান্য সাংগঠনিক কার্যক্রমে ব্যয় করতেন। তিনি সংগঠনের দাওয়াতী কার্যক্রম ও পার্বত্য অঞ্চলে প্রশিক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহের কার্যক্রমের সাথে জড়িত ছিলেন।”

তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানান খন্দকার আল মঈন।