“পরে গেলে ভোগান্তির শিকার হতে হয়”, বললেন গাবতলী টার্মিনালের এক যাত্রী।
Published : 29 Mar 2024, 08:28 PM
ঈদের সপ্তাহ দুয়েক বাকি থাকতেই ঢাকা থেকে মফস্বল ও গ্রামমুখী যাত্রা শুরু হয়ে গেছে।
আগেভাগে যাত্রার উদ্দেশ্য ঈদের আগে আগে বাড়ি ফেরার ভোগান্তি থেকে মুক্ত থাকা। আবার এখন টিকেটের জন্য হা-পিত্যেস নেই, দিতে হচ্ছে না বাড়তি ভাড়াও, নেই যানজটের সমস্যাও।
শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন গাবতলী ও কল্যাণপুর বাস কাউন্টার ঘুরে দেখা যায়, যাত্রীদের বেশিরভাগই ঈদ কাটাতে বাড়ি যাচ্ছেন।
তাদের কাছ থেকে তথ্য মিলেছে, স্কুল ছুটি হয়ে যাওয়ার পর শিশু এবং পরিবারের যাদেরকে আগেভাগে পাঠিয়ে দেওয়া যায়, তাদের পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কর্মজীবীরা যাবেন ছুটি শুরু হলে।
এমনও দেখা গেছে, কেউ কেউ টার্মিনালে এসেছেন বাসে ব্যাগ তুলে দিতে। সেগুলো স্বজনরা গ্রহণ করবেন। তাতে আগে আগে বাড়ি ফেরার ঝক্কি কমবে।
প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসায় ছুটি শুরু হয়েছে গত ২২ মার্চ থেকে, কলেজে ক্লাস শেষ হয়েছে গত ২৫ মার্চ। এ কারণে শিক্ষার্থীদের ঢাকা ছাড়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে।
কথা হচ্ছিল টাঙ্গাইলের মধুপুরের যাত্রী রিফাত হাসানের সঙ্গে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “স্কুল কলেজ বন্ধ হয়ে গেছে, তাই যেসব পরিবার সন্তানের জন্য ঢাকায় থাকত, তারা চলে যাচ্ছে। আমিও যাচ্ছি বাসায়, তবে আবার আসা লাগতে পারে।”
সাতক্ষীরার যাত্রী মাহিনুর রহমান। গাবতলী টার্মিনালে পরিবার নিয়ে বসেছিলেন হানিফ এন্টারপ্রাইজ বাস কাউন্টারের। তিনি বলেন, “পরে গেলে ভোগান্তির শিকার হতে হয়।”
গত বার তিনি ঈদের দুই দিন আগে বাড়ি ফিরেছিলেন। কাউন্টারে এসে ভ্যাবাচেকা খেয়ে যান। কারণ, একই আসনের টিকেট বিক্রি করা হয়েছিল দুই জনের কাছে। এ নিয়ে বেশ ঝামেলা হয়েছিল।
কল্যাণপুর বাস কাউন্টার থেকে বেলা আড়াইটায় রওয়ানা হওয়া পাবনাগামী সুপার সনি বাসের চালক মো. হাকিম বলেন, “অনেকেই ঈদ যাত্রায় বাড়ি যাচ্ছে। তবে গত বছরের এই সময়ের তুলনায় কম। মনে হচ্ছে ঈদের আগ মুহূর্তে চাপ বেশি পড়বে।”
গাবতলী বাস টার্মিনাল পুলিশ ফাড়ির পেট্রোল ইন্সপেক্টর মো. মাহফুজুল হক বকশী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মানুষজন মালামাল নিয়ে যেন সহজেই বাসে উঠতে পারে, আমাদের সে রকম প্রস্তুতি রয়েছে। দিন যত গড়াচ্ছে আমাদের ব্যস্ততা তত বাড়ছে।”
আগাম টিকেটের চাহিদা
সরকারি ছুটি শুরু হওয়ার কথা রয়েছে ১০ মার্চ থেকে। এর আগে পরে আগাম টিকেটের চাহিদাই বেশি।
কল্যাণপুরে সার্বিক পরিবহনের কাউন্টারের দায়িত্বে থাকা মো. হাসান বলেন, “সবাই অগ্রিম টিকেট কাটছে। দেখা যাচ্ছে ঈদের ৮ দিন আগে থেকে বেশি চাপ শুরু হবে। এখন ঈদ যাত্রায় অনেকেই গ্রামের বাড়ি যাওয়া শুরু করেছে, তবে খুব চাপ তৈরি হয়নি।”
৯ এপ্রিল পরিবার নিয়ে রংপুর যাবেন পোশাক শ্রমিক সাইদুর আলম। আগাম টিকেট নিতে এসেছিলেন কাউন্টারে।
পদ্মা সেতু হওয়ার গাবতলীতে বরিশাল ও খুলনা বিভাগের যাত্রী কমেছে বলে জানান হানিফ পরিবহনের কাউন্টারের দায়িত্বে থাকা কাউসার আহমেদ।
তিনি বলেন, “আগে এমন সময়ে ব্যাপক ভিড় থাকত। প্রচুর অগ্রিম টিকেট বিক্রি করতাম। এখন অল্প কিছু বিক্রি করছি মাত্র। তবে আরও কয়েকদিন পরে চাপ পড়বে।
“বেশিরভাগ যাত্রী এখন সায়েদাবাদ থেকে উঠে। এখানে যাত্রী কমে গেছে।”
যাত্রী নয়, বাসে উঠল ব্যাগ
স্নাতক সম্পন্ন করে চাকরির প্রস্তুতি নিচ্ছেন সাইফুল ইসলাম। বাড়ি টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী। তিনি দুই বন্ধুকে নিয়ে টার্মিনালে ব্যাগ নিয়ে গেলেও তারা কেউ যাত্রী না।
বাসের চালক তাদের পরিচিত। তিন জনের ব্যাগ বাসে দিয়ে দিয়েছেন। তাদের স্বজনরা সেগুলো গ্রহণ করবে।
সাইফুলের দুই বন্ধু বাড়ি ফিরবেন ঈদের আগে আগে। আর তিনি যাবেন সাইকেলে চড়ে।
শুক্রবার রাতে রওনা হবেন জেনে সাইফুলের কাছে প্রশ্ন ছিল, এই যাত্রা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায় কি না।
জবাবে বলেন, “হ্যাঁ, একটু তো ঝুঁকি আছেই। তবুও যাব। বেকার মানুষ। ঢাকায় সাইকেল দিয়েই যাতায়াত করি। টিউশন করে খরচ চালাই। এখন বাসায় যেতে অনেক ভাড়া গুনতে হবে। এর চেয়ে ভালো সাইকেল দিয়েই আস্তে ধীরে চলে যাব।”