কল-রেডী: ৭ মার্চের সেই মাইক সংরক্ষণ করবে কে?

কল-রেডীর বর্তমান মালিকদের একজন বলছেন, ‘দেশে যথাযথ মর্যাদা না পাওয়ায়’ নিলামের জন্য ইতোমধ্যে জার্মানি পাঠানো হয়েছে ঐতিহাসিক সেই মাইক।

পাভেল রহমানবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 March 2024, 02:05 AM
Updated : 7 March 2024, 02:05 AM

একাত্তরের ৭ই মার্চ, সেই উত্তাল সময়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এসে দাঁড়ালেন মাইক্রোফোনের সামনে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জমায়েত হওয়া লাখো মানুষের উদ্দেশে বললেন, ‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’।

যে মাইক্রোফোনে ভেসে সেই বজ্রকণ্ঠ দাবানলের মত ছড়িয়েছিল বাংলার পথে-প্রান্তরে, কল-রেডীর সেই মাইক, মাইক্রোফোন, স্ট্যান্ড এখন নষ্ট হতে চলেছে সংরক্ষণের অভাবে।

স্বাধীন বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কেউ তা সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়নি বলে আক্ষেপ করলেন কল-রেডীর প্রতিষ্ঠাতা হরিপদ ঘোষের ছেলে সাগর ঘোষ, যিনি কোম্পানির বর্তমান পরিচালক।

আর তার ভাই বিশ্বনাথ ঘোষ বললেন, ‘দেশে যথাযথ মর্যাদা না পাওয়ায়’ নিলামের জন্য ইতোমধ্যে জার্মানি পাঠানো হয়েছে ঐতিহাসিক সেই মাইক। বর্তমানে সেটি বিদেশে নিলামে তোলার প্রস্তুতি চলছে।

তবে সেটাই আসল মাইক কিনা, তা যাচাই করে সেই ঐতিহাসিক নিদর্শন সংরক্ষণের কথা বলছেন গবেষকরা। জাদুঘরের মাধ্যমে সেগুলো সংরক্ষণেরও পরামর্শ দিচ্ছেন তারা।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হাসান আলী থাকেন পুরান ঢাকায়। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে হাসান বলেন, “আমার বাসার পাশেই কল-রেডীর দোকানটা। এই পথ দিয়ে যাওয়ার সময় দোকানটা দেখলেই ৭ মার্চের ভাষণের কথা মনে হয়। অনেক গুরুত্বপূর্ণ সভা-সমাবেশে এই কল-রেডীর মাইক আমরা ভিডিওতে বা ছবিতে দেখেছি।”

‘১৯৭১: গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর’ ট্রাস্টের সভাপতি অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে ব্যবহৃত একটি মাইক্রোফোন গণহত্যা জাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে।

তার ভাষ্য, “তখন তো মাইক অনেকগুলো ছিল। সেই মাইক্রোফোনকে বলা হতো ‘বুলেট’। আমাদের জাদুঘরের সংগ্রহে এমন একটা আছে। যেহেতু অনেকগুলো ছিল, ফলে তাদের কাছে আরও থাকতে পারে।” সেটা যাচাই করে সংরক্ষণ করা উচিত।

তবে সাগর ঘোষের দাবি, এই মাইকের কোনো অংশ এখনো তারা কাউকে দেননি। ফলে গণহত্যা জাদুঘরে কীভাবে গেল সেটি তারা জানেন না। সেটি আসল কিনা, তা নিয়েও তাদের সন্দেহ রয়েছে।

বিশ্বনাথ ঘোষ বলেন, “আমাদের সংগ্রহে থাকা মাইক এখন অকশনের জন্য বিদেশে রয়েছে। বাংলাদেশে যেহেতু সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে ফিরে আসছে, তাই এটা অকশনের জন্য মুম্বাই হয়ে জার্মানি গেছে। মুম্বাইয়ের একটা কোম্পানি এটাকে নিলামে তুলবে।”

সবশেষ বঙ্গবন্ধুর জীবনীনির্ভর ‘মুজিব একটি জাতির রূপকার’ চলচ্চিত্রে এই মাইকটি ব্যবহার করা হয়েছে জানিয়ে বিশ্বনাথ ঘোষ বলেন, “সিনেমার জন্য সেদিন আমি নিজেই মাইক সেট করে দিয়েছিলাম। তারা আমাদেরকে বলেছিল সিনেমায় কল-রেডীকে ১০ সেকেন্ডের জন্য প্রমোট করবে, কিন্তু তারা সেটাও করেনি। এমনকি সিনেমাটি মুক্তি পেয়েছে, আমাদের কোনো টিকেটও দেয়নি।”

কল-রেডী সহোদরদের ক্ষোভ

পুরান ঢাকায় কল-রেডীতে গিয়ে দেখা যায়, কয়েকজন কর্মী কাজে ব্যস্ত। তাদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে, তারা সাগর ঘোষের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। তবে এ সময় দোকানে ছিলেন না সাগর ঘোষ।

পরে মোবাইল ফোনে তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে কিছুটা ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কেবল ৭ মার্চ এলেই সাংবাদিকরা আমাদের খোঁজ নিতে আসে। এ বিষয়ে কথা বলতে আর ভালো লাগে না। কল-রেডী নিয়ে তো আগেও বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। কিন্তু আমাদের পাশে এসে কেউ দাঁড়ায়নি। নানান সংকটের মধ্য দিয়ে আমাদের যেতে হচ্ছে। এখন তো আর মাইকের ব্যবসা চলে না। তবুও পারিবারিক ব্যবসা আঁকড়ে আছি।”

ক্ষোভ প্রকাশ করে সাগর ঘোষ বলেন, “৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু যে মাইক্রোফোনে ভাষণ দিয়েছিলেন, সেই মাইক্রোফোনটি আমাদের কাছে আছে। এছাড়া বিভিন্ন ঐতিহাসিক ভাষণের সাক্ষী হয়ে থাকা আরও কিছু মাইক্রোফোন, স্ট্যান্ড, এমপ্লিফায়ারসহ অন্যান্য সরঞ্জাম রয়েছে, যেগুলো ইতিহাসের সাক্ষী। কিন্তু এগুলো সংরক্ষণের জন্য কোনো প্রতিষ্ঠান থেকেই আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়নি। আমরা আমাদের মত কিছু রেখে দিয়েছি, কিছু নষ্ট হয়ে গেছে।”

৭ মার্চের ঐতিহাসিক সেই মাইক্রোফোনটি দেখার আগ্রহ প্রকাশ করলে সাগর বলেন, “এটা আমাদের দোকানে নেই। এখানে থাকলে তো নষ্ট হয়ে যাবে। যদি সরকার বা কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে এটি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়, তবে এনে দেব।”

মাইক্রোফোনটি নিলামের জন্য বিদেশে পাঠানোর যে তথ্য বিশ্বনাথ ঘোষ দিয়েছেন, সে বিষয়ে প্রশ্ন করলে সাগর বলেন, “আমার ভাই যেটা বলেছেন, ঠিক আছে।” 

কল-রেডী ‘সঠিকভাবে মূল্যায়িত হচ্ছে না’ অভিযোগ করে বিশ্বনাথ ঘোষ বলেন, “১৫ বছর ধরে আমাদের দল আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়, সবাই সবকিছু পাচ্ছে, হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হয়ে গেছে সবাই, কিন্তু আমাদের স্টাফরা? আমরা যা কিছু করছি, স্বীকৃতি তো বাদ দেন- দশ হাজার টাকা করেও আমাদের স্টাফদের সন্মানি যদি দেওয়া হত, তা-ও ভাবতাম যে আমাদের দিকে একটা দৃষ্টি আছে। কিন্তু ১৫ বছরের মধ্যে যদি আমরা একবার উনার (প্রধানমন্ত্রী) কাছে যাইতাম যে আমাদের সাহায্য সহযোগিতা করেন, নেভার।

“নেত্রীর চার ভাগের একভাগ প্রোগ্রামও আমরা পাচ্ছি না। এখন সব প্রোগ্রাম হচ্ছে ইভেন্টের (ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ফার্ম) মাধ্যমে।  ইভেন্টওয়ালারা যদি আমাদের ডাকে তাহলে আমরা ইভেন্টের মাধ্যমে যাই। কিন্তু সরাসরি আর সেইভাবে প্রোগ্রাম আমরা পাচ্ছি না। আগে যেভাবে সরাসরি আমাদের সাথে কানেকশন ছিল এখন ওইভাবে আর নেই।”

তিনি বলেন, “একটা পদক দিলেই সেটার কি মূল্যায়ন হয়ে যায়? যেদিকে আমাদেরকে দেখতেই পারছে না কাজই দিচ্ছে না, যেই পার্টির সঙ্গে আমরা এত বছর ধরে যুক্ত ৪৭ সাল থেকে, সেই পার্টি আমাদের দেখছে না।”

আগের মত কাজ না পাওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, “… একজন চিফ, উনি হয়ে গেছেন ইভেন্টের মালিক। উনি সব কাজ একসঙ্গে নিয়ে যান। একজন সাবেক মন্ত্রীর সংস্থাও একসাথে সব কাজ প্যাকেজ নিয়ে নেয়, তাহলে আমাদের রইল কি। উনি সাউন্ড দেবে, সব দেবে, হ্যান দিবে আমার কাছে এসে শুধু ৬০টা মাইকের জন্য ৬০ হাজার টাকা দিবে। এই কাজের জন্য আমি যাব না। প্রয়োজনে প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেব। যেখানে প্রধানমন্ত্রীর সব কাজই আমরা করি সেখানে যদি মনে হয় যে শুধু ৬০টা মাইক লাগানোর জন্য আমরা যাব, তো কি বলব আমি।”

সংরক্ষণ করবে কে?

ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকা কল-রেডীর সেই ঐতিহাসিক নিদর্শন সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়নি কেউই। প্রজন্মের সামনে ইতিহাসকে তুলে ধরতে এই নিদর্শন সংরক্ষণ করা জরুরি বলে মনে করেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কল-রেডীর ইতিহাস তো সবাই জানে। শুধু ৭ই মার্চ নয়, আমাদের আন্দোলন সংগ্রামের নানা অধ্যায়ে তারা জড়িয়ে আছে। তাদের কাছে যে নির্দশনগুলো আছে, সেগুলো যাচাই করে যদি প্রকৃতই হয়— তবে সেগুলো সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া উচিত। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর, জাতীয় জাদুঘর এবং গণহত্যা জাদুঘরের কেউ দায়িত্ব নিয়ে এই নিদর্শন সংরক্ষণ করা উচিত।”

বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের সেই মাইক বা মাইক্রোফোন সংরক্ষণে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল কিনা জানতে চাইলে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘরের সদস্য সচিব ও কিউরেটর মো. নজরুল ইসলাম খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এটি জাদুঘরের বিবেচনাধীন আছে। তবে জাদুঘরে এটা যুক্ত করতে হলে ট্রাস্টের অনুমোদন বা সিদ্ধান্ত লাগবে। এ বিষয়ে ট্রাস্টের সঙ্গে কথা বললে ভালো হয়।”

ট্রাস্টি বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাশুরা হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এ বিষয়টি নিয়ে আমাদের এখানে কাজ হচ্ছে কিনা, জেনে বলতে হবে। তবে কেউ যদি মনে করেন তাদের কাছে এরকম ঐতিহাসিক কোনো নিদর্শন আছে, তারা ব্যক্তিগত সংগ্রহ থেকে সেটি ট্রাস্টকে দিতে চান, তবে তারা ট্রাস্টকে একটা চিঠি দিয়ে অবহিত করলে ট্রাস্টের পক্ষ থেকেও যোগাযোগ করা হবে।

“তবে ঐতিহাসিক নিদর্শন আসল কিনা, মানে ওই সময়ের ব্যবহৃত মাইক্রোফোন বা সরঞ্জাম কিনা, সেটি যাচাই করার একটা ব্যাপারও আছে। যাচাইয়ের পর ট্রাস্ট অনুমোদন করলেই সেটি জাদুঘরে যুক্ত হতে পারে।”

গবেষক মুনতাসীর মামুন বলেন, “গণহত্যা জাদুঘরেও এ ধরনের ঐতিহাসিক নিদর্শন সংরক্ষণ করছে। তারা যদি ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলো আমাদের দিতে চান, তবে আমরা তাদের নামেই এটি সংরক্ষণ করব। অবশ্যই সেটি যাচাই করে আমাদের জাদুঘরের সংগ্রহ তালিকায় যুক্ত করা হবে।”

জাদুঘর সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, কল-রেডীর ওই ঐতিহাসিক মাইকটি বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে সংগ্রহের ব্যাপারে প্রাথমিক আলাপও হয়েছিল। কল-রেডীর লোকজন মূলত অনেক টাকা দাবি করেছে। আর সেটি যাচাই করার বিষয়ও আছে। এজন্য বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর কর্তৃপক্ষ বিষয়টি বিবেচনাধীন রেখেছে।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে কল-রেডীর পরিচালক সাগর ঘোষ বলেন, “এটি আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বা বঙ্গবন্ধু পরিবারের কারো কাছেই দিতে চাই। অন্য কারো কাছে দেব না। অনেকেই এটা নিয়ে ব্যবসা করবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি আমাদের বলেন, তবে আমরা দেব।”

ইতিহাসের সাক্ষী কল-রেডী

১৯৪৮ সাল। দেশভাগের পর পর পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজারে মাইকের ব্যবসা শুরু করেন বিক্রমপুরের শ্রীনগর থানার মঠবাড়িয়া গ্রামের সহোদর দুই ভাই দয়াল ঘোষ ও হরিপদ  ঘোষ। প্রথমে প্রতিষ্ঠানের নাম ছিল আই এম অলওয়েজ রেডি, অন কল অ্যাট ইয়োর সার্ভিস বা আরজা (এআরজেএ) অথবা 'আরজু' ইলেকট্রনিক্স।

বছরখানেক পরই নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় 'কল-রেডী'। মূলত লাইটিং, সাজসজ্জার সামগ্রী ভাড়া দিত আরজু ইলেক্ট্রনিক্স। বিয়ে-শাদিতে লাইটের সঙ্গে গ্রামোফোনও ভাড়া নিত লোকজন। দোকানটি পরিচিত হয়ে ওঠে অল্প দিনেই। সেই সঙ্গে চাহিদাও বাড়তে থাকে, চাহিদা অনুযায়ী যোগান দিতে পাশের দেশ ভারত থেকে কয়েকটি মাইক নিয়ে আসেন তারা। কিন্তু তা দিয়েও চাহিদা পূরণ হচ্ছিল না। মাইকের কারিগরি জানা থাকায় হরিপদ ঘোষ নিজেই যন্ত্রপাতি কিনে কয়েকটি হ্যান্ডমাইক তৈরি করেন।

দেশ ভাগের পর থেকেই পূর্ব পাকিস্তানে আন্দোলন দানা বাঁধতে শুরু করে। আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা মাইক ভাড়া নিতে শুরু করেন আরজু লাইট হাউস থেকে। চাহিদা বাড়তে থাকে দিনে দিনে। চাহিদা মেটাতে তাইওয়ান, জাপান, চীন থেকে আনা হয় মাইক। বিদেশ থেকে আনা হত মাইকের মূল অংশ। হরিপদ ঘোষ নিজের দোকানের কারিগর দিয়ে বাকি অংশ তৈরি করিয়ে নিতেন।

বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের পর থেকে সভা-সমাবেশ বাড়তে থাকে এবং সামাজিক আর ধর্মীয় অনুষ্ঠানের প্রয়োজনেও মাইকের ব্যবহার বৃদ্ধি পায়। তাই মাইক সার্ভিসের সঙ্গে মিল রেখে 'কল-রেডী' নামটিই ঠিক করা হয়। প্রয়োজনে কল করলেই যেন মাইক রেডি থাকে; সেই অর্থে ‘কল-রেডী’।

১৯৫৪ সালে কল-রেডীর কর্মী ছিল ২০ জন। কাজের চাপ বৃদ্ধি পেলে বাড়তি লোক নিয়ে সামাল দিতে হত। মাঝেমধ্যে তাদের ছোট দুই ভাই গোপাল ঘোষ ও কানাই ঘোষও সাহায্য করতেন।

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থান এবং ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনের সভা-সমাবেশেও কল-রেডীর মাইকে বক্তব্য দিয়েছেন নেতারা।

বঙ্গবন্ধু ছাড়াও কল-রেডীর মাইকে বক্তব্য দিয়েছিলেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকসহ অনেকে। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে বিদেশের নেতাদের মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা, ভারতের ইন্দিরা গান্ধী, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন, ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি কল-রেডী মাইক্রোফোনে ভাষণ দেন।

৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু কল-রেডীর মাইকে ভাষণ দিয়েছিলেন। আবার ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে কল-রেডীর মাইক্রোফোনের সামনে দাঁড়িয়ে ভাষণ দিয়েছিলেন।

কল-রেডীর মাইকে ভাষণ দিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও। পুরান ঢাকার ৩৬ ঋষিকেশ দাস লেনে কল-রেডীর আদি কার্যালয়।

[প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি অনুপম মল্লিক আদিত্য]