অধ্যাপক তাহের হত্যা: ফাঁসি আটকাতে হাই কোর্টে গেলেও সাড়া মেলেনি

১৭ বছর আগে এই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক খুনের দায়ে তার এক সহকর্মীসহ দুজনের সামনে রয়েছে ফাঁসির রশি।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 May 2023, 03:36 PM
Updated : 14 May 2023, 03:36 PM

নিম্ন আদালতে দুজনের মৃত্যুদণ্ডের যে রায় এসেছিল, তাই বহাল থাকে আপিলে, খারিজ হয় রিভিউ আবেদনও। রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণ ভিক্ষা ছাড়া আর কোনো পথই ছিল না তাদের।

এরপরও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এস তাহের আহমেদ হত্যা মামলায় দণ্ডিত এই দুজনের ফাঁসি কার্যকর স্থগিত চেয়ে হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন তাদের স্বজনরা।

তবে উত্থাপিত হয়নি মর্মে রোববার সেই আবেদন খারিজ করে দিয়েছে বিচারপতি মো. জাফর আহমেদ ও মো. বশির উল্ল্যার হাই কোর্ট বেঞ্চ।

গত ৭ মে ওই রিট আবেদনটি করেছিলেন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিনের স্ত্রী ইসরাত রহমান এবং ফাঁসির দণ্ড পাওয়া জাহাঙ্গীর আলমের ভাই মিজানুর রহমান।

ওই আবেদনে বলা হয়, এ মামলায় আসামিদের গ্রেপ্তার ও জবানবন্দি গ্রহণে সংবিধান ও সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনার ব্যত্যয় হয়েছে।

আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী তাজুল ইসলাম। বাদীপক্ষে শুনানিতে ছিলেন সাঈদ আহমেদ রাজা, নাহিদ সুলতানা যুথী, শাকিলা রওশন এবং নিহত তাহেরের মেয়ে শেগুফতা আহমেদ।

আদালতে আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী এস এম শাহজাহান ও সমরেন্দ্র নাথ গোস্বামী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ।

Also Read: অধ্যাপক তাহের হত্যা: ২ আসামির মৃত্যুদণ্ড আপিলেও বহাল

Also Read: রিভিউ খারিজ: অধ্যাপক তাহেরের দুই খুনিকে যেতে হবে ফাঁসিকাষ্ঠে

২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক এস তাহের আহমেদ নিখোঁজ হন। দুদিন পর শিক্ষক কোয়ার্টারের বাসার বাইরে ম্যানহোলে তার লাশ পাওয়া যায়।

ওই ঘটনায় পর ৩ ফেব্রুয়ারি তার ছেলে সানজিদ আলভি আহমেদ রাজশাহীর মতিহার হত্যা থানায় মামলা দায়ের করেন। তদন্ত শেষে ২০০৭ সালের ১৮ মার্চ ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ।

তাতে অধ্যাপক তাহেরের সহকর্মী মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের তৎকালীন সভাপতি মাহবুবুল আলম সালেহী, তাহেরের বাসার তত্ত্বাবধায়ক জাহাঙ্গীর, জাহাঙ্গীরের ভাই আবদুস সালাম, তাদের (জাহাঙ্গীর ও আবদুস সালাম) বাবা আজিমুদ্দীন মুন্সী এবং সালামের আত্মীয় নাজমুলকে আসামি করা হয়।

গ্রেপ্তার হওয়ার পর জাহাঙ্গীর, নাজমুল ও সালাম আদালতে ১৬৪ ধারায় দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেছিলেন, মহিউদ্দিন ও সালেহী তাদের কম্পিউটার, টাকা-পয়সা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে তাহের আহমেদকে হত্যা করার কাজে লাগান। তবে মিয়া মহিউদ্দিন আদালতে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছিলেন।

পরে পুলিশের তদন্তে উঠে আসে, তখনকার সহযোগী অধ্যাপক মিয়া মহিউদ্দিন পদোন্নতি পেতে বিভাগে আবেদন করেছিলেন। পদোন্নতির ওই কমিটিতে ড. তাহেরও ছিলেন। তিনি মহিউদ্দিনের কয়েকটি প্রতারণা প্রাথমিকভাবে ধরে ফেলেন। তদন্ত কমিটির মাধ্যমে পরে এই সব প্রতারণা প্রমাণিত হয়।

সেই অসন্তোষ থেকে মিয়া মহিউদ্দিন এই হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করেন। সে অনুযায়ী তাহেরকে বাসায় হত্যা করে লাশ ম্যানহোলে ঢুকিয়ে রাখা হয়।

৩৯ জনের সাক্ষ্য ও জেরার পর ২০০৮ সালের ২২ মে রাজশাহীর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল মহিউদ্দিন, জাহাঙ্গীর, সালাম ও নাজমুলকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। সালেহী ও আজিমুদ্দিনকে খালাস দেওয়া হয়।

নিয়ম অনুযায়ী এরপর মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য মামলার নথিপত্র যায় হাই কোর্টে। আপিলের রায়ে মিয়া মহিউদ্দিন ও জাহাঙ্গীরের মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকলেও সালাম ও নাজমুলের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

হাই কোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে এরপর আপিল বিভাগে আবেদন করেন আসামিরা। পাশাপাশি যাবজ্জীবন দণ্ডিত দুই আসামির দণ্ড বাড়াতে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ।

নয় বছর পর তা শুনানির জন্য ওঠে। দুই পক্ষের শুনানি শেষে ২০২২ সালের ৫ এপ্রিল দুই আবেদনই খারিজ করে দেয় আপিল বিভাগ।

এরপর গত ২ মার্চ মৃত্যুদণ্ডের দুই আসামিসহ তিনজনের রায় পুনর্বিবেচনার আবেদনও খারিজ হয়ে যায়।

সেদিন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন জানিয়েছিলেন, রিভিউ রায় প্রকাশের পর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করতে পারবেন। সে আবেদন খারিজ করা হলে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হবে।