আহত সেলিমের অভিযোগ, আনসার সদস্যকে টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানানোয় সময়মতো রক্ত দেওয়া যায়নি তার স্ত্রীকে, এ কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে।
Published : 15 Jan 2024, 05:17 PM
ঢাকায় জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের আইসিইউতে থাকা এক মুমূর্ষু রোগীকে রক্ত দিতে যাওয়ার সময় টাকা দাবি করাকে কেন্দ্র করে রোগীর স্বজনদের সঙ্গে আনসার সদস্যদের মারামারিতে অন্তত চারজন আহত হয়েছেন।
রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে এই ঘটনার পর সাতমাস বয়সের শিশু সন্তান রেখে তানজিনা (৩৫) নামের ওই রোগী রাত দেড়টার দিকে মারা যান। আহত চারজনের মধ্যে তানজিনার স্বামী এবং তাদের দুই ছেলে রয়েছেন। অন্যজন আনসার সদস্য।
তানজিনার স্বামী সেলিম রেজার অভিযোগ, আনসার সদস্যকে টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানানোয় সময়মতো রক্ত দেওয়া যায়নি তার স্ত্রীকে, এ কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে।
ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীর জামাল উদ্দিন জানান, এই ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। যে আনসার সদস্যকে নিয়ে কথা উঠেছে, তাকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
হৃদরোগী তানজিনাকে গত ২৩ সেপ্টেম্বর ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। অবস্থা সংকটাপন্ন হলে সোমবার বিকালে তাকে সিসিইউতে নেওয়া হয়। এরপর চিকিৎসকরা রক্তের প্রয়োজনীয়তার কথা জানান।
সেলিম রেজা বলেন, রাত সাড়ে ১০টার দিকে রক্তের ব্যাগ নিয়ে তিনি সিসিইউর ফটকে গেলে কর্তব্যরত আনসার সদস্য রবিউল ইসলাম তাকে ঢুকতে দেননি। তখন তিনি স্ত্রীর সঙ্গে ভেতরে থাকা ছোট ছেলেকে ফটকের কাছে ডেকে আনেন। তার ছেলে তখন বলেন যে এই আনসার সদস্যকে ৫০ টাকা দিয়ে তিনি ভেতরে ঢুকেছিলেন। এরপরই আনসার সদস্য রবিউল তার কিশোর ছেলেকে চড় এবং সঙ্গে থাকা অস্ত্র দিযে মারধর করেন।
সেলিম বলেন, এসময় আরও আনসার সদস্য ছুটে এসে তার ছেলেকে বেধড়ক মারধর করেন। তার বড় ছেলে খবর শুনে ছুটে এলে তিনিও মারধরের শিকার হন। আনসার সদস্যরা তার দুই ছেলেকে ইনস্টিটিউটের নিচতলায় নিয়ে আটকে রেখে হাত পা ভেঙে দেয়।
রবিউলের আহত হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ধাক্কাধাক্কির সময় নিজের অস্ত্রের আঘাতে জখম হন এই আনসার সদস্য।
হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে কর্তব্যরত আনসার প্লাটুন কমান্ডার মনিরুল ইসলাম এই ঘটনার বিষয়ে বলেন, কোনো আনসার সদস্যই রোগীর স্বজনদের কাছ থেকে টাকা নেন না। ঘটনার সময় অতিরিক্ত কাউকে ঢুকতে না দেওয়ায় রোগীর ছেলে কর্তব্যরত আনসার সদস্যের অস্ত্র ছিনিয়ে নিয়ে সেই আনসার সদস্যকে মারধর করেন। এতে তার মাথায় গুরুতর জখম হয়।
“অস্ত্র কেড়ে নিয়ে ওই অস্ত্র নিয়ে মারধরের ঘটনা আড়াল করতেই তারা টাকা লেনদেনের বিষয়টি সামনে আনছে,” বলেন তিনি।
এদিকে ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক মীর জামাল বলেন, আনসার সদস্যরা রোগীর স্বজনদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগটি ‘অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে’ দেখা হচ্ছে।
“প্রকৃত ঘটনা কী ঘটেছে, সেটা খতিয়ে দেখতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। খুব অল্প সময়ের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।”
শেরে বাংলা নগর থানার ওসি উৎপল বড়ুয়া জানান, তারা ঘটনার পরপরই গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। রোগীর স্বজনরা দাফন শেষে অভিযোগ দেবেন বলে জানিয়েছেন। আনসার সদস্যর বা রোগীর পক্ষ থেকে অভিযোগ পেলেই মামলা হবে।
(প্রতিবেদনটি প্রথম ফেইসবুকে প্রকাশিত হয়েছিল ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে: ফেইসবুক লিংক)