র্যাব বলছে, গ্রেপ্তার হওয়া 'সন্ত্রাসীরা' ঢাকা ও আশপাশের নির্বাচনী এলাকায় ‘ভাড়াটে সন্ত্রাসী’ হিসেবে যাতায়াত করত।
Published : 04 Jan 2024, 02:07 PM
নির্বাচন ঘিরে ‘সহিংসতা-বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির’ পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে রাজধানী থেকে ৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
এ বাহিনীর মুখপাত্র বলছেন, গ্রেপ্তার নয়জন ‘কব্জি কাটা গ্রুপ’ এবং ‘বিরিয়ানী সুমন গ্রুপ’ নামের দুটি সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্য। ঢাকা ও আশপাশের নির্বাচনী এলাকায় তারা ‘সন্ত্রাসী হিসেবে ভাড়া খাটেন’।
তারা হলেন- ‘টাকলা’ হায়াত (৪০), মো. সাগর (১৯), মো. ইসমাইল হোসেন (১৯), মো. সুমন (৪৫), মো. সুমন ওরফে বিরিয়ানী সুমন (২৮), মো. বাদল (২৬), মো. আকাশ (১৯), মো. রাব্বি (২৮) ও মো. রাসেল (৩৮)।
তাদের গ্রেপ্তারের খবর জানাতে বৃহস্পতিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে সংবাদ সম্মেলনে আসেন র্যাবের সদরদপ্তরের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন। তিনি বলেন, মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ এলাকায় অভিযান চালিয়ে বুধবার র্যাব-২ সদস্যরা ওই নয়জনকে গ্রেপ্তার করে।
“নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তারা মোহাম্মাদপুর এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের পাশাপাশি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পরিকল্পনা করছিল। এ উদ্দেশ্যে এই দুই গ্রুপ এলাকায় ধারালো অস্ত্রসহ শো-ডাউন, বিভিন্ন স্থানে জনসাধারণকে ভয়ভীতি দেখানোসহ বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রম করার পরিকল্পনা করছিল।”
মঈন বলেন, “পেশীশক্তি প্রদর্শনের জন্য ভাড়াটে সন্ত্রাসী হিসেবে ঢাকার আশেপাশের বিভিন্ন নির্বাচনি এলাকাতেও তারা এই কয়েকদিন যাতায়াত করেছে।"
কিছুদিন ধরে মোহাম্মদপুর এলাকায় পরপর কয়েকটি ছিনতাই ও সন্ত্রাসী হামলার ঘটনার তদন্তে নেমে র্যাব ‘কব্জি কাটা গ্রুপ’ এবং ‘বিরিয়ানী সুমন গ্রুপ’ এর সন্ধান পায় বলে মঈনের ভাষ্য।
তিনি জানান, গ্রেপ্তারদের নামে ঢাকার বিভিন্ন থানায় ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও মাদকের মামলা আছে থানায়। তারা প্রত্যেকেই এসব মামলায় জেলও খেটেছেন।
র্যাব বলছে, ওই দুই গ্রুপের সদস্যরা গাড়ির হেলপার ও ড্রাইভার, দোকান কর্মচারী, নির্মাণ শ্রমিক, পুরাতন মালামাল ক্রেতা, সবজি বিক্রেতার পরিচয়ের আড়ালে মোহাম্মদপুর ও আশেপাশের এলাকায় ডাকাতি, ছিনতাই ও চাঁদাবাজি করে বেড়াতেন। পাশাপাশি ‘ভাড়াটে সন্ত্রাসী’ হিসেবে কাজ করতেন। এলাকায় প্রভাব বিস্তারের চেষ্টায় নিজেদের মধ্যেও তারা মারামারিতে জড়িয়েছেন বিভিন্ন সময়ে।
সংবাদ সম্মেলনে কমান্ডার মঈন বলেন, 'কব্জি কাটা' গ্রুপটি পরিচালিত হয় আনোয়ার ও টাকলা হায়াতের নেতৃত্বে। এ দলের সদস্যরা ‘আনোয়ার সিন্ডিকেট’ নামেও পরিচিত।
“এই গ্রুপের সদস্যরা আগে ‘আনোয়ার গ্রুপ’ নামে কাজ করত। নিজেদের মধ্যে অন্তর্কোন্দলের কারণে তারা তিনটি গ্রুপে বিভক্ত হয়। আর 'বিরিয়ানি সুমন' গ্রুপটি চালাচ্ছে সন্ত্রাসী সুমন।"
এই দুই দলের কর্মকাণ্ডের বিবরণ দিয়ে মঈন বলেন, "তারা মোহাম্মদপুর, আদাবর, বেঁড়িবাধ ও ঢাকা উদ্যান এলাকায় চাঁদাবাজি, ছিনতাই, ডাকাতিসহ অন্যান্য সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ব্যক্তির স্বার্থ হাসিলের জন্য টাকার বিনিময়ে ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী হিসেবে কাজ করেছে। এছাড়া মোহাম্মদপুর এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের জন্য বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজও করত।"
গ্রেপ্তার ‘টাকলা হায়াত’ সন্ত্রাসী আনোয়ারের অন্যতম প্রধান সহযোগী জানিয়ে কমান্ডার মঈন বলেন, "আগে টাকলা হয়াত মোহাম্মদপুরে মাদকের ব্যবসা করত। সন্ত্রাসী আনোয়ারের অবর্তমানে সে গ্যাংটি পরিচালনা করে আসছে এবং বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রমে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছে। তার বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় মাদক, ছিনতাই ও মারামারির ঘটনায় একাধিক মামলা রয়েছে এবং অনেক মামলায় সে জেলও খেটেছে। "
সাগর, ইসমাইল ও সুমন 'কব্জি কাটা' গ্রুপের সদস্য জানিয়ে কমান্ডার মঈন বলেন, এই তিনজন টাকলা হায়াতের নেতৃত্বে ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ডাকাতি করা ছাড়াও মাদক ব্যবসা চালিয়ে আসছে।
‘বিরিয়ানী সুমন’ এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন ধরণের সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করা জন্য ১৫ থেকে ২০ জনকে নিয়ে দল গড়েছেন বলে জানান র্যাব কর্মকর্তা মঈন।
তিনি বলেন, বাদল, আকাশ, রাব্বি ও রাসেল ‘বিরিয়ানী’ সুমনের সহযোগী। তাদের সবার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।