জাল সনদ বেচছিল তারা, দিচ্ছিল ‌অনলাইন ‘যাচাই সুবিধা’

গ্রেপ্তার নারী ছাড়া অন্যদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 May 2023, 02:11 PM
Updated : 5 May 2023, 02:11 PM

ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে চারজনকে গ্রেপ্তারের পর গোয়েন্দা পুলিশ বলছে, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের জাল সনদ তৈরি করে বাণিজ্য করে আসছিলেন তারা। এমনকি ‘অনলাইন যাচাই’ সুবিধাও দিচ্ছিল চক্রটি।

রামপুরা ও লালবাগ এলাকায় বৃহস্পতিবার রাত ও শুক্রবার সকালে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তারা হলেন- জিয়াউর রহমান, নুরুন্নাহার মিতু, ইয়াসিন আলী ও বুলবুল আহমেদ বিপু। এদের মধ্যে বিপু একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়রে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপ কমিশনার মশিউর রহমান জানান, বৃহস্পতিবার রাতে রামপুরা এলাকায় অভিযান চালিয়ে প্রকৌশলী জিয়াউর রহমান ও তার স্ত্রী নুরুন্নাহার মিতুকে গ্রেপ্তার করা হয়।

তাদের দেওয়া তথ্যে শুক্রবার সকালে লালবাগ বড়ঘাট মসজিদ এলাকার কাশ্মিরি গলির একটি বাসা থেকে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার ইয়াসিন আলী এবং দারুল ইহসান ইউনিভার্সিটির পরিচালক বুলবুল আহমেদ বিপুকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের জাল সনদ বিক্রি করে আসছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন পর্যায়ের একাডেমিক সনদ, মার্কশিট, খাম ও নগদ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।

পুলিশ কর্মকর্তা মশিউর বলেন, ‍“‍‍‍অনেকদিন ধরে নীরবে হাতে হাতে বিপুল টাকার বিনিময়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন চলমান এবং বন্ধ হয়ে যাওয়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েশন এবং পোস্ট গ্রাজুয়েশন, বিভিন্ন বোর্ডের সেকেন্ডারি ও হায়ার সেকেন্ডারি পরীক্ষার মার্কশিট ও সার্টিফিকেট বিক্রয় করে আসছিল তারা।

“‍‍‍এই সার্টিফিকেট ও মার্কশিটগুলো বোর্ড অথবা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সরবরাহ করা মূল কাগজ দিয়েই তৈরি করা হয় এবং সেগুলোকে কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে অনলাইনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়, যাতে অনলাইন ভেরিফিকেশনে সত্য পাওয়া যায়।”

অনেকদিন ধরে পাওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করে প্রযুক্তি সচেতন এই অপরাধীদের গ্রেপ্তার করা হয় জানিয়ে ডিএমপির লালবাগ বিভাগের উপ কমিশনার বলেন, “‍লালবাগের দুই কক্ষের বাসাতে দামি ল্যাপটপ, ডেস্কটপ প্রিন্টার, স্ক্যানার, এমব্স মেশিন স্থাপন করে বিভিন্ন ইউনিভার্সিটি থেকে সংগ্রহ করা ব্ল্যাংক মার্কশিট সার্টিফিকেট এখানে বিভিন্ন ব্যক্তিদের নামে ছাপানো হতো।

‍“এছাড়া ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার ইয়াসিন আলী বিভিন্ন ছাপাখানা থেকে সব রকমের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য সম্বলিত অতি সূক্ষ্ম জাল সনদের কাগজ ছাপিয়ে এনে নিজেও বিভিন্ন গ্রাহকদেরকে জাল সার্টিফিকেট, মার্কশিট, প্রত্যায়নপত্র দিত।”

পুলিশ কর্মকর্তা মশিউর বলেন, ‍“কোনো রকমের ভেরিফিকেশন হবে না-এ রকম সার্টিফিকেট, মার্কশিট, প্রত্যয়নপত্র সরবরাহ করত চক্রটি; আর দেশে-বিদেশে অনলাইনে ভেরিফিকেশন হবে এ রকম মার্কশিট, সার্টিফিকেট সরবরাহ করা হতো বেশি টাকার মাধ্যমে।

‍“এসব অপরাধের সঙ্গে কতিপয় বিশ্ববিদ্যালয় ও বোর্ডের বেশ কিছু ব্যক্তির নাম পরিচয় পাওয়া গেছে, যারা অনলাইন ভেরিফিকেশন করে সার্টিফিকেট বিক্রির সাথে সরাসরি জড়িত।”

নুরুন্নাহার মিতু ছাড়া গ্রেপ্তার অন্যদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে বলে জানান তিনি।