খালেদার আবেদনের ওপর কয়েকদফা শুনানির পর গত ২৮ অগাস্ট হাই কোর্টের একই বেঞ্চ আদেশের জন্য বুধবার দিন ঠিক করে দিয়েছিল।
Published : 30 Aug 2023, 03:53 PM
নাইকো দুর্নীতি মামলায় অভিযোগ গঠনের আদেশ বাতিল চেয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার করা আবেদন খারিজ করে দিয়েছে হাই কোর্ট।
বুধবার বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আমিনুল ইসলামের বেঞ্চ এই আদেশ দেয়।
দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা মামলাটি বর্তমানে সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে।
আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী কায়সার কামাল, জয়নাল আবেদীন ও বদরুদদ্দোজা বাদল।
দুর্নীতি দমন কমিশনের পক্ষে ছিলেন মোহাম্মদ খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন।
খালেদার আবেদনের ওপর কয়েকদফা শুনানির পর গত ২৮ অগাস্ট হাই কোর্টের একই বেঞ্চ আদেশের জন্য বুধবার দিন ঠিক করে দিয়েছিল।
চলতি বছরের ১৯ মার্চ খালেদা জিয়াসহ আট আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে এ মামলার বিচার শুরুর আদেশ দেন কেরানীগঞ্জ
কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থাপিত ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৯ এর বিচারক শেখ হাফিজুর রহমান।
এই অভিযোগ গঠনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে গত ১৭ মে খালেদার পক্ষে হাই কোর্টে আবেদন করেন আইনজীবী কায়সার কামাল।
কানাডীয় প্রতিষ্ঠান নাইকোর সঙ্গে ‘অস্বচ্ছ’ চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রের আর্থিক ক্ষতি ও দুর্নীতির অভিযোগে ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর খালেদা জিয়াসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে এ মামলা দায়ের করেন দুদকের সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ মাহবুবুল।
২০০৮ সালের ৫ মে ১১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়, সেখানে রাষ্ট্রের প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা আর্থিক ক্ষতি করার অভিযোগ আনা হয় তাদের বিরুদ্ধে।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন- তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, বাপেক্সের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মীর ময়নুল হক, বাপেক্সের সাবেক সচিব মো. শফিউর রহমান এবং নাইকোর দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট কাশেম শরীফ।
এ ছাড়া সাবেক আইনমন্ত্রী বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ, সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেন এই মামলায় আসমি থাকলেও তারা মারা যাওয়ায় অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
নাইকো মামলায় অভিযোগ গঠন বাতিলে খালেদার আবেদনের আদেশ বুধবার
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে সব মিলিয়ে ৩৭টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় তার ১০ বছর এবং জিয়া এতিমখানা দুর্নীতি মামলায় ৭ বছরের সাজা হয়েছে।
কোভিড মহামারীর সময় ওই দুই মামলায় সাজা খাটার মধ্যেই পরিবারের আবেদনে ২০২০ সালের মার্চে সাজা স্থগিত করে নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়াকে সাময়িক মুক্তি দেয় সরকার।
বাসায় থেকে চিকিৎসা করার এবং বিদেশে না যাওয়ার শর্তে তিনি গুলশানের বাসায় থাকছেন।
খালেদা জিয়া ন্যায়বিচার পাচ্ছেন না: আইনজীবী
খালেদা জিয়া আদালতে ন্যায়বিচার পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল; যিনি এই মামলায় দলীয় চেয়ারপারসনের আইনজীবী হিসাবেও কাজ করছেন।
বুধবার নাইকো দুর্নীতি মামলায় অভিযোগ গঠনের আদেশ বাতিলে খালেদার আবেদন হাই কোর্টে খারিজ হওয়ার পর তিনি বিএনপি সমর্থক আইনজীবীদের নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে এই প্রতিক্রিয়া জানান।
কায়সার কামাল বলেন, ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সালে নাইকোর সঙ্গে চুক্তি হয়েছিল শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন তৎকালীন সরকারের। এই ঘটনায় শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া দুজনের বিরুদ্ধেই মামলা হয়েছিল। কিন্তু ২০১০ সালে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলাটি আদালত বাতিল করলেও খালেদা জিয়ার মামলাটি চলমান। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলাটি বাতিল হলেও রাষ্ট্রপক্ষ কিংবা দুর্নীতি দমন কমিশন আপিল করেনি।
তিনি বলেন, “খালেদা জিয়া আদালতে ন্যায়বিচার পাচ্ছেন না। বারবার তার প্রতি অন্যায় ও অবিচার করা হচ্ছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী। তার রাজনৈতিক ইতিহাসে পরাজয়ের কোনো গ্লানি নেই। সে কারণেই তিনি বারবার ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”
হাই কোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করবেন কি না- প্রশ্ন করা হলে এই আইনজীবী বলেন, “বিএনপি চেয়ারপারসন এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আমরা তার সঙ্গে দেখা করে বিস্তারিত নির্দেশনা নিয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব। খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের প্রতি অবিচার করা হলেও তারা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।”
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস কাজল, বদরুদ্দোজা বাদলসহ অন্য আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।