দেশের নানা প্রান্তের জনপ্রিয় খাবার মিলছে একখানে। মুজিব’স বাংলাদেশ ফুড ফেস্টিভ্যাল- টেস্ট অব বাংলাদেশ এ ভোজন রসিকদের ভিড় প্রথম দিনেই।
Published : 04 May 2023, 11:02 PM
চট্টগ্রামের মেজবানি মাংসে মজেছেন কেউ, কারও পাতে চুইঝালের মাংস। আছে খাগড়াছড়ির ব্যাম্বু চিকেন, ঐতিহ্যবাহী মারমা খাবার ‘মুন্ডি’। কেউ কেউ নিচ্ছেন দিনাজপুরের মুগডালের পাঁপড়ের স্বাদ, কারও নজর মুক্তাগাছার মন্ডা, কুষ্টিয়ার কুলফি কিংবা নাটোরের কাঁচাগোল্লায়।
বৃহস্পতিবার বনানীতে শুরু হওয়া ‘মুজিব’স বাংলাদেশ ফুড ফেস্টিভ্যাল- টেস্ট অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক খাবার উৎসবে দেখা গেল এ চিত্র।
এ দিন বনানীর মূল সড়ক থেকেই পাশের মোস্তফা কামাল আতাতুর্ক পার্কে আলোকসজ্জার দেখা মিলছিল। টিকেট কেটে ভেতরে ঢুকতেই নাকে ধাক্কা দিল ভাজা মাংসের সুবাস। খেতে খেতে এদিক-ওদিক হাঁটছেন অনেকেই। কেউ কেউ ব্যস্ত খাবারের ছবি তোলা আর সেলফিতে। পার্কের মাঝে বসানো টেবিল চেয়ারগুলো খালি নেই। কোনো টেবিলে বিরিয়ানি বসেছেন কেউ কেউ আর কোনো টেবিলে ছিটরুটি ও হাঁসের মাংসের ভুনা।
সবচেয়ে বেশি ভিড় চোখে পড়ল দিনাজপুরের স্টলটিতে। কৌতূহল নিয়ে এগোতেই দেখা গেল, সেখানে মুগডালের পাঁপড় ভাজা হচ্ছে। ১০ টাকার পাঁপড় খেতে ভিড় জমিয়েছেন অনেকে। তাদের দিয়ে কুলিয়ে উঠতে পারছেন না বিক্রেতা নারী। কুড়মুড় শব্দে সবার মুখে ভাঙছে পাঁপড়।
হাজীর বিরিয়ানি নিজেদের ঐতিহ্য ধরে রেখে শালপাতার ঠোঙায় বিক্রি করছে বিরিয়ানি। সেখান থেকে বিরিয়ানি নিয়ে উৎসবস্থলের মাঝখানে রাখা চেয়ার-টেবিলে বসছেন অনেকে।
‘বোবা বিরিয়ানি’র স্টলের সামনেও ভিড়। মোহাম্মদপুরের ‘ফায়জানে মদিনা বিরিয়ানি’ নামের দোকানটি কী করে বোবা বিরিয়ানি হল, সেই কথা দর্শনার্থী আর ক্রেতাদের বলছিলেন দোকানটির মালিকপক্ষের একজন মো. ইমরান।
তিনি বলছিলেন, তাদের দোকানে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করেন ওয়াকিল নামের বাকপ্রতিবন্ধী এক কর্মী। ওয়াকিলের কারণে গত কয়েক বছরের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি ভোজন রসিকদের কাছে ‘বোবার বিরিয়ানি’ হিসেবে খ্যাতি পেয়েছে। লোকজন ওয়াকিলকেও দেখতে চান। তিনি মূল দোকান সামলাচ্ছেন, এ উৎসবে যোগ দেননি।
বান্দরবানের ঐতিহ্যবাহী মারমা খাবার মুন্ডি বিক্রি করছে চিং’স কিচেন। পাহাড়ি এ খাবার চেখে দেখতে সমতলের লোকেদের ভিড় স্টলের সামনে। পাতলা ঝাল-টক স্বাদের স্যুপের মধ্যে সরু নুডলসের শুটকি আর ধনে পাতার কড়া গন্ধ। চুক চুক শব্দ তুলে সেই খাবারই গিলছেন আর ঝালের চোটে লাফাতে দেখা গেল দল বেঁধে আসা কিছু শিক্ষার্থীদের।
খাগড়াছড়ির সিস্টেম রেস্তোঁরার স্টলে চলছে ব্যাম্বু চিকেন রান্না। কাঁচা বাঁশে মুরগি ঢুকিয়ে কাঠকয়লার চুলায় পোড়ানো হচ্ছে মুরগি। এর সুবাস ছড়াচ্ছে পুরো মেলায়।
চট্টগ্রামের বারকোড ক্যাফের মেজবানি মাংস, সিলেটের পানসি রেস্তোরাঁর কষা মাংসের ডাক এড়াতে পারেননি অনেকেই। এসব খাওয়ার পর রসনা আরও তৃপ্ত করতে আছে বিমানবন্দর স্টেশনের বিখ্যাত রাজার রাজকীয় চা, আছে পুরান ঢাকার ছোটনের আগুন পান কিংবা কুষ্টিয়ার কুলফি মালাই।
বাদ পড়ে যাচ্ছে কিছু? ভোজন রসিকদের জন্য আরও রয়েছে নাজিরাবাজারের বিসমিল্লাহর কাবাব, মোহাম্মদপুর জেনেভা ক্যাম্পের মোস্তাকিমের চাপ, বিউটির লাচ্ছি-ফালুদা, নাটোরের কাঁচাগোল্লা, বগুড়ার দই, নওগাঁর প্যাড়া সন্দেশ।
বনানী পার্কের উৎসব স্থলে পাঁচ তারকা হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল, প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও, শেরাটনের স্টলেও প্রথম দিনে ভিড় ছিল বেশ।
উৎসবে ৪৩টি স্টলের মধ্যে ৩৯টিই খাবার-দাবারের। শনিবার পর্যন্ত চলবে এ আয়োজন, যা খোলা থাকবে সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত।
যে কারণে এ আয়োজন
আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশি খাবার তুলে ধরাই আয়োজনের মূল লক্ষ্য বলে জানিয়েছে আয়োজক ট্যুরিজম বোর্ড এবং বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় উৎসব উদ্বোধন করে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, “বাংলাদেশ অঞ্চলভেদে বিভিন্ন খাদ্যের জন্য বিখ্যাত এবং আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত। তাই ব্রান্ডিংয়ের মাধ্যমে এগুলোকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করতে হবে।
“সেই ফখরুদ্দিন বাবুর্চি এখন নেই। তাই বলে কি তার রন্ধন প্রক্রিয়া বিলুপ্ত হয়ে যাবে? এই ধরনের ঐতিহ্যগুলোকে আমাদের সংরক্ষণ করতে হবে।”
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী, সচিব মোকাম্মেল হোসেন, বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তাহির মুহাম্মাদ জাবের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।