মেট্রোরেলে ঢিল: আসামি শনাক্ত করতে না পেরে পুলিশের চূড়ান্ত প্রতিবেদন

সোমবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মঈনুল ইসলাম পুলিশের দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করেছেন।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 March 2024, 11:29 AM
Updated : 19 March 2024, 11:29 AM

এগারো মাস ধরে তদন্ত করে মেট্রোরেলে ঢিল ছোড়ার ঘটনায় কোনো আসামি শনাক্ত করা যায়নি। তাই মামলাটি নিষ্পত্তির জন্য চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে পুলিশ। 

তবে আসামি শনাক্ত এবং সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া গেলে মামলা পুনরুজ্জীবিত করা হবে বলেও প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। 

মামালার তদন্ত কর্মকর্তা কাফরুল থানার পরিদর্শক (অপারেশন) আব্দুল বাতেন ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। 

কাফরুল থানার সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা এসআই রয়েল জিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সোমবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মঈনুল ইসলাম পুলিশের দেওয়া এ চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করেছেন।”

চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “মামলার অভিযোগে অজ্ঞাতনামা আসামির বিরুদ্ধে মেট্রোরেল আইন-২০১৫ এর ৩৫ ও ৪৩ ধারাসহ দণ্ডবিধি ৪২৭ ধারায় অপরাধ প্রাথমিকভাবে সত্য প্রতীয়মান হয়েছে। 

“কিন্তু মামলা হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন কলাকৌশলে তদন্ত অনুসন্ধান করা এবং সংঘটিত ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত রেলে স্থাপন করা সিসি ক্যামেরা পর্যবেক্ষণসহ ঘটনাস্থলের আশপাশের বিভিন্ন সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করে ঘটনার সঙ্গে জড়িত প্রকৃত আসামি শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। সেহেতু মামলাটি আরও তদন্ত করে ভবিষ্যতে সুফল পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ।”

Also Read: মেট্রোরেলে ঢিল: তদন্ত গুটিয়ে এসে আটকে গেছে ৩ ভবনে

Also Read: মেট্রোরেলে ঢিল ঠেকাবে কে

Also Read: মেট্রোরেলে ঢিল: কয়েকটি বাড়ি ঘিরে তদন্ত

কাল সাড়ে ১১ টার দিকে আগারগাঁও থেকে উত্তরা উত্তর স্টেশনে যাওয়ার পথে মেট্রোরেলের জানালায় ঢিল ছুড়ে মারার ঘটনা ঘটে। এতে কেউ হতাহত না হলেও জানালার কাঁচ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

এ ঘটনায় মেট্রোরেল আইন-২০১৫ এর ৩৫ ও ৪৩ ধারাসহ দণ্ডবিধি ৪২৭ ধারায় মামলা করেন মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ। মেট্রোরেলের লাইন অপারেশন শাখার সহকারী ব্যবস্থাপক সামিউল কাদের বাদী হয়ে রাজধানীর কাফরুল থানায় মামলাটি দায়ের করেন।

এতে একাধিক অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করা হয়। এ ঘটনায় মেট্রোরেলের প্রায় দশ লাখ টাকা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। 

এটি ছিল মেট্রোরেল আইনে দায়ের করা প্রথম মামলা। 

মামলার পর যে স্থানে ঘটনা ঘটেছে, তার আশপাশের কয়েকটি ভবন চিহ্নিত করে তদন্তে নামে কাফরুল থানা পুলিশ। 

সে সময় কাফরুল থানার ওসি হাফিজুর রহমান বলেছিলেন, তিনি বলেন, “যে এলাকায় ঢিল ছোঁড়ার ঘটনা ঘটে, সে এলাকার ৭/৮টি ভবনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই ভবনের বাসিন্দাদের ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে। “ওই এলাকার চিহ্নিত বাড়িগুলোকে তদন্তের আওতায় এনে পর্যায়ক্রমে বাসিন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।”

Also Read: জানালায় ঢিল: মেট্রোরেল আইনে প্রথম মামলা

Also Read: মেট্রোরেলে ঢিল, জানালা ক্ষতিগ্রস্ত

তবে মেট্রোরেল পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক সে সময় বলেছিলেন, ভিডিও ফুটেজ দেখে কোন জায়গা থেকে ঢিলটা ছোঁড়া হয়েছে তা শনাক্ত করা হয়েছে, ওই ভবনের অধিকাংশ মানুষ সরে গেছে। 

“কতদিন পালিয়ে থাকবে? হয়তো দেশের বাইরেও চলে যেতে পারে। কিন্তু সেখান থেকেও আমরা আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা আছে, আমরা তাকে ধরে আনব,” এমনটাই বলেছিলেন তিনি।

মামলা হওয়ার দুই মাস পর কাফরুল থানার ওসি হাফিজুর রহমান তাদের তদন্ত কার্যক্রম গুটিয়ে তিনটি ভবনের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে আনার কথা বলেন। 

সেসব ভবনের বাসিন্দাদের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা করে পাঁচজনকে একাধিকবার জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়। কিন্তু তারা কেউই ঢিল ছোঁড়ার কথা স্বীকার করেননি বলে জানিয়েছিলেন ওসি। 

নিরীহ কেউ যেন হয়রানির শিকার না হন, তাই রয়েসয়ে এগোনোর কথা বলা হয় পুলিশের পক্ষ থেকে। 

এতকিছুর পরও শেষ পর্যন্ত কোনো আসামি শনাক্ত করতে না পেরে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিল পুলিশ।