মুনিয়ার মৃত্যু: দ্বিতীয় মামলা থেকেও বসুন্ধরার এমডির অব্যাহতি

মুনিয়ার বোনের করা ‘আত্মহত্যায় প্ররোচনার’ মামলা থেকেও অব্যাহতি পেয়েছিলেন আসামিরা।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 March 2024, 10:56 AM
Updated : 20 March 2024, 10:56 AM

কলেজছাত্রী মোসারাত জাহান মুনিয়াকে ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগে করা মামলা থেকে বসুন্ধরার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীরসহ ৮ জনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

বাদীপক্ষের নারাজি আবেদন নাকচ করে পিবিআইয়ের দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদন আমলে নিয়ে বুধবার ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৮ এর বিচারক শওকত আলী এ আদেশ দেন।

সংশ্লিষ্ট আদালতের বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর মোহাম্মদ রেজাউল করিম এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

অব্যাহতি পাওয়া অপর আসামিরা হলেন আনভীরের বাবা আহমেদ আকবর সোবহান, মা আফরোজা সোবহান, স্ত্রী সাবরিনা সোবহান, শারমিন, সাইফা রহমান মিম, মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা এবং ইব্রাহিম আহমেদ রিপন।

তাদের পক্ষে আইনজীবী হিসাবে আদালতে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আব্দুর রহমান হাওলাদার ও সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার শাহাদাত শাওন।

২০২১ সালে ২৬ এপ্রিল রাতে ঢাকার গুলশানের একটি ফ্ল্যাট থেকে গলায় ওড়না প্যাঁচানো অবস্থায় ২১ বছর বয়সী মোশারাত জাহান মুনিয়ার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

মুনিয়া ঢাকার মিরপুর ক্যান্টনম্যান্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তার বাড়ি কুমিল্লার মনোহরপুরে; পরিবার সেখানেই থাকে। মৃত্যুর মাস দুয়েক আগে এক লাখ টাকায় ভাড়া নেওয়া ওই ফ্ল্যাটে উঠেছিলেন তিনি।

সেই রাতেই আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ এনে আনভীরের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় মামলা করেন মুনিয়ার বোন নুসরাত জাহান তানিয়া। মামলায় বলা হয়, ‘বিয়ের প্রলোভন’ দেখিয়ে সায়েম সোবহান আনভীর সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন মুনিয়ার সঙ্গে। ওই বাসায় তার যাতায়াত ছিল। কিন্তু বিয়ে না করে তিনি উল্টো ‘হুমকি’ দিয়েছিলেন।

মুনিয়ার মৃতদেহ উদ্ধারের পর সেখান থেকে তার মোবাইলসহ বিভিন্ন ধরনের আলামত উদ্ধার করে পুলিশ, যার মধ্যে ছয়টি ডায়েরি ছিল। সিসিটিভির ভিডিও পরীক্ষা করে মুনিয়ার ফ্ল্যাটে আনভীরের যাতায়াতের ‘প্রমাণ পাওয়ার’ কথাও সে সময় পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল।

তবে তদন্ত শেষে প্রতিবেদনে মুনিয়ার ‘আত্মহত্যায়’ আনভীরের ‘সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি’ জানিয়ে ২০২১ সালের ১৯ জুলাই আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে পুলিশ।

পুলিশের ওই প্রতিবেদনে অনাস্থা (নারাজি) জানিয়ে মুনিয়ার বোন অন্য কেনো সংস্থার মাধ্যমে মামলাটি তদন্তের আবেদন করেছিলেন। তা খারিজ করে ঢাকার মহানগর হাকিম রাজেশ চৌধুরী ২০২১ সালের ১৮ অগাস্ট চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করে সায়েম সোবহান আনভীরকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেন।

ওই বছর ৬ সেপ্টেম্বর আনভীর ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে ‘হত্যা ও ধর্ষণের’ মামলা করেন মুনিয়ার বোন। ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৮ এর বিচারক বেগম মাফরুজা পারভীন তার বক্তব্য শুনে পিবিআইকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।

১৩ মাসের মাথায় ২০২২ সালের আনভীরসহ ৮ জনকে অব্যাহতির আবেদন করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে তদন্ত সংস্থাটি।

আদালতে জমা দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদনে তদন্ত কর্মকর্তা বলেছেন, “আমি বিস্তারিত তদন্ত করে দেখেছি, আত্মহত্যার সময় আনভীর সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। শারীরিক সম্পর্কের প্রমাণ পাওয়া গেছে, কিন্তু জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। যে কারণে আমি ‘তথ্যগত ভুল’ উল্লেখ করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিলাম।”

পরে এ প্রতিবেদনেও নারাজি আবেদন করেন মুনিয়ার বোন। গত ১০ মার্চ নারাজির আবেদনের ওপর শুনানি হলেও আদেশ দেওয়া হয়নি।

সেই শুনানিতে বাদীপক্ষের আইনজীবী এম. সরোয়ার হোসেন বলেছিলেন, “পিবিআইয়ের তদন্তেই আসামিদের অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে।”

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আমি এ ‘অন্যায় আদেশের’ বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাব।“

আরো পড়ুন

Also Read: বসুন্ধরার এমডিসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে ‘ধর্ষণ ও হত্যার’ মামলা মুনিয়ার বোনের

Also Read: মুনিয়ার মৃত্যুর মামলা থেকে বসুন্ধরা এমডিকে অব্যাহতি