চট্টগ্রামে পাহাড় কাটা ও খাল ভরাটের ঘটনা পরিদর্শনকারী বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) কর্মকর্তাদের বাধা দেওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ ও নিন্দা জানিয়েছে দেশের ৫২ জন মানবাধিকার ও পরিবেশ কর্মী।
শনিবার এএলআরডি নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদার পাঠানো এক বিবৃতিতে উদ্বেগ-নিন্দা প্রকাশের পাশাপাশি জড়িতদের শাস্তির দাবি জানানো হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার দুপুরে বেলা’র প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের নেতৃত্বে একটি দল চট্টগ্রাম নগরীর উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের লেকসিটি আবাসিক এলাকায় পাহাড় কাটা পরিদর্শনে যান। এরপর কালির ছড়া খাল ভরাটের এলাকায় গেলে তারা বাধার মুখে পড়েন। পরে প্রতিনিধি দলটি কাজ অসমাপ্ত রেখেই কাটা পাহাড় এলাকা হয়ে বায়েজিদ লিংক রোডে চলে যান।
বেলার চট্টগ্রামের সমন্বয়ক মুনীরা পারভীন জানান, বায়েজিদ লিংক রোডে যাওয়ার পর তারা জানতে পারেন একদল তরুণ লেকসিটি আবাসিক এলাকায় তাদের গাড়িটি আটকে রেখেছেন। খবর পেয়ে পুলিশ চালকসহ গাড়িটি উদ্ধার করে বায়েজিদ লিংক রোডে পাঠায়। সেখানে গাড়িতে ওঠার সময় তাদের লক্ষ্য করে ইট ছোড়া হয়।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ৯ নম্বর উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জহুরুল আলম ওরফে জসিমের নেতৃত্বে তার অনুসারীরা এই ঘটনা ঘটিয়েছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ ঘটনার নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে চিহ্নিত অপরাধীদের গ্রেপ্তার ও দ্রুত বিচারের মাধ্যমে উপযুক্ত শাস্তির দাবি জানিয়ে বিবৃতিদাতারা বলেন, ঘটনার অন্তরালে যারা আছে, তাদেরও চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার ও কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
‘‘ ভবিষ্যতে কোনো দখলদার, পাহাড়খেকো, নদীখেকো ও ভূমিদুস্য যেন এই ধরনের ঘটনা ঘটাতে সাহস না দেখায়- তার জন্য সরকারকে কার্য্কর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।”
বিবৃতিতে বলা হয়, মানবাধিকার ও অধিকারভিত্তিক সংগঠনগুলো অভিযোগের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট এলাকা পরিদর্শন করে প্রকৃত ঘটনা সংবাদমাধ্যম এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে ধরে তাদের নাগরিক দায়িত্ব পালন করে আসছে। রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে নাগরিকদের চলাফেরা ও নিরাপত্তা পাওয়ার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার। রাষ্ট্রকে সকল নাগরিকের এই অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
বিবৃতিতে স্বাক্ষরদাতাদের মধ্যে রয়েছেন- মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল, হামিদা হোসেন, অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, পিপিআরসি নির্বাহী চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান, গণস্বাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদ কে চৌধুরী, নিজেরা করি’র সমন্বয়কারী খুশি কবির, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সভাপতি জেড আই খান পান্না, সিপিডির ট্রাস্টি দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্য, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের রানা দাশগুপ্ত, গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরী, এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আনু মুহাম্মদ, নারী পক্ষ’র শিরীন হক, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহদীন মালিক, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের শাহীন আনাম, এইচডিআরসির উপদেষ্টা আবুল বারকাত, কবি ও লেখক রেহনুমা আহমেদ, ব্লাস্টের অনারারি নির্বাহী পরিচালক সারা হোসেন, সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, বাংলাদেশ আদিবাসী ফেরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, আলোকচিত্রী ও সমাজকর্মী শহিদুল আলম।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রও আলাদা বিবৃতিতে এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে।