এর আগে শরীয়তপুরের মুখ্য বিচারিক হাকিম ও দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে তলব করেছিল হাই কোর্টের একই বেঞ্চ।
Published : 16 Oct 2023, 12:26 AM
হাই কোর্টের জামিন পাওয়া কয়েকজন আসামি এবং তাদের স্বজনকে নির্যাতন করে ৭২ লাখ টাকার চেক লিখে নেওয়ার ঘটনায় এক আইনজীবীসহ আরও দুই পুলিশকে তলব করেছে হাই কোর্ট।
রোববার বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আমিনুল ইসলামের বেঞ্চ এ আদেশ দেয়।
যাদের তলব করা হয়েছে, তাদের মধ্যে আছেন শরীয়তপুর মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতের জিআরও, পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার কর্মকর্তা সুরজ উদ্দিন এবং এক আইনজীবী।
আগামী ২ নভেম্বর তাদের আদালতে হাজির হতে বলা হয়েছে। এ নিয়ে এ ঘটনায় ছয়জনকে তলব করা হল।
একইসঙ্গে হাই কোর্টে জামিন পাওয়া আসামিকে কারাগারে পাঠানোর ঘটনায় শরীয়তপুরের মুখ্য বিচারিক হাকিমকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন বাপ্পী, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আনিসুর রহমান। পুলিশ কর্মকর্তাদের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট শাহ মঞ্জুরুল হক।
এর আগে একই ঘটনায় গত ১৩ জুন আরও তিনজনকে তলব করা হয়েছিল। তারা হলেন শরীয়তপুরের নড়িয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল মনির, পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার ওসি শেখ মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান এবং শরীয়তপুরের মুখ্য বিচারিক হাকিম।
এছাড়া ওই সময় পুলিশের মহাপরিদর্শককে এ ঘটনায় তার অবস্থান ব্যাখ্যা করতে বলা হয়েছিল।
হাই কোর্টের এ আদেশের পর গত ২০ অগাস্ট পুলিশ কর্মকর্তারা আদালতে হাজির হয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করেন এবং লিখিত ব্যাখ্যা জমা দেন।
পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, হাই কোর্ট থেকে জামিন পাওয়া কয়েকজন আসামি ও তাদের স্বজনদের ওপর নির্যাতন চালিয়ে ৭২ লাখ টাকা নেওয়ার অভিযোগ ওঠে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল মনির ও ওসি শেখ মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে।
ভুক্তভোগী আসামির বড় ভাই আবু জাফর ঠান্ডু শরীয়তপুর জেলা পুলিশ সুপার বরাবর এ বিষয়ে অভিযোগ করেন। এরপর ওই ঘটনা তদন্তে শরীয়তপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) মোহাম্মদ বদিউজ্জামানকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি করা হয়।
এর মধ্যে গত ১১ জুন বিষয়টি আদালতের নজরে আনেন আইনজীবী মজিবুর রহমান। তখন আদালত লিখিত আবেদন দাখিল করতে বলে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেয়।
১৩ জুন একই আদালতে আবেদন করেন আইনজীবী মজিবুর রহমান।
অভিযোগে বলা হয়, গত ২৩ মে দ্রুত বিচার আইনে পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানায় একটি ছিনতাই মামলা হয়। মামলায় শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার নাওডোবা আহম্মেদ চোকদার কান্দি এলাকার সাদ্দাম চোকদার, বকুল চোকদারসহ নয়জনকে আসামি করা হয়। সেই মামলায় ২৯ মে সাদ্দাম, বকুল, সাইদুল উচ্চ আদালত থেকে জামিনে বের হন।
জামিনে আসার পর ৩০ মে রাতে তারা এ মামলার আরেক আসামি আনোয়ারকে নিয়ে ঢাকা কেরানীগঞ্জ সাদ্দামের বন্ধু আলমগীর চোকদারের বাসায় যান। ওইদিন রাতে তথ্য পেয়ে সেই বাসায় হাজির হন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল মনির ও ওসি মোস্তাফিজুর রহমান, জাজিরা উপজেলার এক ছাত্রনেতাসহ ১০/১২ জন পুলিশ সদস্য।
অভিযোগে বলা হয়, সে সময় সাদ্দাম তাদের জামিনের কাগজ দেখালে তা ছিঁড়ে ফেলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার। পরে পুলিশ সাদ্দাম ও বকুলকে লাথি, কিল-ঘুষি, চড়-থাপ্পড়সহ পুলিশের লাঠি, কাঠ, হাতুড়ি দিয়ে বেধড়ক মারধর করেন। এক পর্যায়ে প্লায়ার্স দিয়ে হাত ও পায়ের নখ তুলে ফেলা হয়। সাদ্দাম পানি পান করতে চাইলে ছোট ভাই বকুলকে দাঁড় করিয়ে মুখে প্রস্রাব করতে বলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল মনির। পরে সাদ্দামের শরীরে প্রস্রাব করেন বকুল। এমন নির্যাতন চলে রাত ১টা থেকে পরদিন ৩১ মে সকাল ৮টা পর্যন্ত।
এরপর ওই চারজনকে গামছা ও কালো কাপড় দিয়ে চোখ বেঁধে গাড়িতে করে জাজিরা প্রান্তে পদ্মা সেতুর নিচে নেওয়া হয়। পরে সাদ্দাম ও বকুল এবং সাইদুল ও আনোয়ারকে পৃথক দুই স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়।
অভিযোগে বলা হয়, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও ওসি সাদ্দাম-বকুলকে বলেন – সাইদুল-আনোয়ারকে ‘ক্রসফায়ারে’ দেওয়া হয়েছে, ৭২ লাখ টাকা না দিলে তাদেরও দেওয়া হবে।
এভাবে সারাদিন রেখে রাতে পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানায় এনে ৭২ লাখ টাকা চাঁদা চেয়ে বেত, কাঠ, কোদালের বাঁট, লাঠি দিয়ে আবার বেধড়ক মারা হয় সাদ্দাম ও বকুলকে। সারারাত চলে সেই নির্যাতন। এরপর টাকার জন্য বকুলের স্ত্রী সানজিদা, দুই বছরের সন্তান, বাবা রশিদ চোকদার, মা রমেলা ও চাচাতো ভাই আবু জাফর ঠান্ডুকে থানায় এনে সারারাত আটকে রাখা হয়; শারীরিক নির্যাতন করা হয়।
পরে স্বজনরা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও ওসির কাছে পাঁচটি চেকের মাধ্যমে ৭২ লাখ টাকা দিলে নির্যাতন থেকে মুক্তি মেলে সাদ্দাম ও বকুলের। দুদিন যন্ত্রণায় চিৎকার করলেও তাদের খাবার ও ওষুধ দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগে বলা হয়।
পুরনো খবর
শরীয়তপুরের দুই পুলিশ কর্মকর্তা ও বিচারককে হাই কোর্টে তলব
শরীয়তপুরের মুখ্য বিচারিক হাকিমকে তলব হাই কোর্টে
শরীয়তপুরের সেই এএসপি, ওসির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ