দশমীর দিনটি ভক্তদের কাছে একদিকে যেমন উৎসবের, অপরদিকে বেদনার। এদিন ঘোটকে চড়ে দেবী ফিরে যাবেন কৈলাসে।
Published : 24 Oct 2023, 11:55 AM
বছর ঘুরে অন্নপূর্ণার আগমনে দেশের মন্দির-মণ্ডপে আনন্দের যে লহর বইছিল, দশমী তিথিতে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা তাকে বিদায় জানাচ্ছেন অশ্রুজলে।
দশমীতে মঙ্গলবার সকাল থেকে ঢাকের বাদ্য, শঙ্খনাদ আর উলুধ্বনিতে পূজা মণ্ডপে চলছে দেবীর কাছে মঙ্গলকামনা। আনন্দ উৎসবের এই মুহূর্ত বিকালে শেষ হবে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে। ফের দেবীকে মর্ত্যের পৃথিবীতে আমন্ত্রণ জানাতে অপেক্ষা করতে হবে এক বছর।
বিজয়া দশমীর দিনটি ভক্তদের কাছে একদিকে যেমন উৎসবের, অপরদিকে বেদনার। এদিন ঘোটকে চড়ে দেবী ফিরে যাচ্ছেন কৈলাসে।
ঢাকেশ্বরী মন্দিরের প্রধান পুরোহিত ধর্মদাস চট্টোপাধ্যায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মায়ের সঙ্গে যুদ্ধে মহিষাসুর নিপাতিত হয়েছেন, তার মৃত্যু হয়েছে এবং মায়ের বিজয় হয়েছে বলে আজ শুভ বিজয়া।”
সনাতন ধর্মের বিশ্বাস অনুযায়ী, বিসর্জনের মধ্য দিয়ে ‘পিতৃগৃহ’ থেকে পুত্র-কন্যা নিয়ে দুর্গা ফিরে যাবেন কৈলাসে তার ‘স্বামীর’ ঘরে। এক বছর পর নতুন শরতে আবার তিনি আসবেন এই ধরণীতে।
রাজধানীতে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে সকাল থেকেই শুরু হয় বিজয়ার আনুষ্ঠানিকতা। পুরোহিত ধর্মদাস চট্টোপাধ্যায় বলেন, “বিজয়া দশমীতে আমরা দশ উপচারে পূজা করেছি এবং দর্পণে বিসর্জনের মধ্য দিয়ে পূজার আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়েছে। এটাকে মায়ের প্রতিবম্ব বিসর্জনও বলা যায়। সকাল ৯টা ৫৮ মিনিটের মধ্যে দর্পণে বিসর্জন করার নিয়ম রয়েছে। বিসর্জনের পর অঞ্জলি প্রদান করা হয়।”
বিজয়ার সকালে স্বামীর মঙ্গল কামনা করে নারীরা সিঁদুর খেলায় মেতে উঠবেন।
ধর্মদাস বলেন, “সিঁদুর পরিহিত নারীরা কেবল এই খেলায় অংশ নিয়ে থাকে। তারা আনন্দ করেন এবং মায়ের কাছ থেকে স্বামীর জন্য দীর্ঘায়ু কামনা করেন। সংসারের জন্য মঙ্গল কামনা করে থাকেন। বেলা ১২টায় সিঁদুর খেলা হবে।
“দর্পণে বিসর্জন এবং অঞ্জলি প্রদানের মধ্য দিয়েই মূলত পূজার আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়। পরে সিঁদুর খেলার আনন্দ হয় এবং বিকেলে বা সন্ধ্যায় প্রতিমা বিসর্জন করা হয়।”
সনাতন ধর্মের বিশ্বাস অনুযায়ী, মহালয়ার দিন ‘কন্যারূপে’ ধরায় আসেন দশভূজা দেবী দুর্গা; বিসর্জনের মধ্য দিয়ে তাকে এক বছরের জন্য বিদায় জানানো হয়। তার এই ‘আগমন ও প্রস্থানের’ মাঝে আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী থেকে দশমী তিথি পর্যন্ত পাঁচ দিন চলে দুর্গোৎসব।
দেশজুড়ে এবার ৩২ হাজার ৪০৭টি মন্দির-মণ্ডপে পূজা হচ্ছে। পঞ্জিকামতে, দেবী দুর্গা এবার মর্ত্যে এসেছেন ঘোটকে অর্থাৎ ঘোড়ায় চড়ে। ঘোড়ায় চড়েই কৈলাশে ফিরে যাচ্ছেন তিনি।
ঢাকেশ্বরী মন্দির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিজয়া দশমীতে তাদের কর্মসূচিতে রয়েছে স্বেচ্ছায় রক্তদান এবং বিকেল ৩টায় শোভাযাত্রা। পরে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে সমাপ্তি হবে এবারের শারদীয় দুর্গোৎসবের।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক চন্দ্রনাথ পোদ্দার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পূজার একটা দিক তো আরাধনা বা প্রার্থনা, আবার আরেকটি দিক হল আনন্দ উৎসব। এটা আনন্দটা সার্বজনীন একটা ব্যাপার, শ্বাশত বাঙালি ধর্মীয় সম্প্রীতির মধ্য দিয়ে এই আনন্দ উদযাপন করে। সব ধর্ম-বর্ণের মানুষ পূজার আনন্দ উৎসবে অংশ নেয়।”
ঢাকা মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের পূজা বিষয়ক উপদেষ্টা প্রণব চক্রবর্তী মন্দিরে সবার উদ্দেশে বলেন, “যারা মায়ের কাছে বিভিন্ন চাওয়া রয়েছে তারা প্রার্থনার মধ্য দিয়ে মায়ের কাছে কামনা করুন।”
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “মা তার অপার মহিমায় ভক্তের প্রার্থনায় তুষ্ট হয়ে আমাদের জীবনে শান্তিময় করে দেবেন। ভক্তরা বিজয়া দশমীতে অশ্রজলে বিদায় দেন এবং মায়ের কাছে প্রার্থনা করেন।”