“কেউ মনে করে ভোট দিতে এলে আমার বিপদ, আবার কেউ মনে করে আমাদের ভোট না দিয়ে যাবে কোথায়?”, ইসির সঙ্গে বৈঠক শেষে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ নেতা রানা দাশগুপ্ত।
Published : 11 Oct 2023, 03:29 PM
সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি নিয়ে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করেছে বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ।
বুধবার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে এই বৈঠকে ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ও গুজব নিয়ে বিশেষ নজর রাখা এবং নির্বাচনী প্রচারে সাম্প্রদায়িকতা বক্তব্য বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানানো হয়।
ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্তের নেতৃত্ব পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দল এ বৈঠকে অংশ নেয়। নির্বাচন কমিশনের নেতৃত্বে ছিলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল।
আলোচনা শেষে রানা দাশগুপ্ত বলেন, “আতঙ্কটা বেড়ে গেছে। আমাদেরকে দাবা খেলার ঘুঁটি হিসেবে রাজনৈতিক ময়দানে ব্যবহার করা হয়েছে। কেউ মনে করে ‘ভোট দিতে এলে আমার বিপদ’, আবার কেউ মনে করে ‘আমাদের ভোট না দিয়ে যাবে কোথায়’।”
তিনি বলেন, “আমরা পরিষ্কার করে বলেছি, সবাই মিলে ভোট দিতে চাই। ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে বলেছি, আমরা সহিংসতামুক্ত নির্বাচন চাই। নির্বাচনী প্রচারণায় সাম্প্রদায়িকতাকে যে ব্যবহার করা, তার অবসান চাই।”
সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ, গুজব ছড়িয়ে নির্বিঘ্নে ভোটদানের পরিবেশ বিঘ্নের অপচেষ্টা হয় তা বন্ধ করার দাবিও জানান ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের এই নেতা।
নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে এসব বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হলেও রানা দাশগুপ্ত আস্বস্ত হতে পারেননি।
কারণ হিসেবে তিনি বলেন, “অতীতেও নির্বাচনের আগে ইসির কাছ থেকে আশ্বাস পেয়েছি। কিন্তু আশ্বাস সময় সময় আশ্বাসের মধ্যে থেকেছে, আমরা আশ্বস্ত হতে পারিনি।
“সিইসি আমাদের আশ্বাস ও আশ্বস্ত করেছেন। আমরা ইসি ত্যাগ করব, কিন্তু অতীতের অভিজ্ঞতার যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে।”
‘সাম্প্রদায়িক সংঘাতের দায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে নিতে হবে’
বৈঠক শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার- সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল সাংবাদিকদের বলেন, “নির্বাচনের আগে হোক কিংবা পরে হোক সাম্প্রদায়িক সহিংসতা-সংঘাত হলে তার দায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নিতে হবে।”
বৈঠকের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “তারা (ঐক্য পরিষদ) বলেছেন- বাংলাদেশে অনেক সময় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ধর্মীয় বা সাম্প্রদায়িক সংঘাত ও সহিংসতা হয়েছে। তাদের আশঙ্কা আগামীতেও এই ধরনের সাম্প্রদায়িক সংঘাত ব সহিংসতা হতে পারে।
“আমাদের কাছে আবেদন রেখেছেন আমরা যেন বিষয়টা বিবেচনায় নেই, আমাদের দিক থেকে করণীয় যা আছে তা যেন করি। আমরা বিষয়টাকে খুব গুরুত্ব সহকারে নিয়েছি। আমরাও এটাও বলেছি যে- আমাদের আসলে বিষয়টা দেখবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।”
তফসিলের পর নির্বাচনের সংশ্লিষ্ট সব বিষয় ইসির অধীনে চলে আসবে জানিয়ে সিইসি বলেন, “নির্বাচনের ১৫ দিন পর পর্যন্ত ইসির কিছুটা নিয়ন্ত্রণ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর থাকে, সেদিকে নজর রাখা হবে।
“আমরা চিঠি দিয়ে সরকারের ডিসি-এসপিদের, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ যারা যারা এর সঙ্গে দায়িত্বপ্রাপ্ত, তাদেরকে আমরা অবহিত করব, দেশে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যেন কোনো সাম্প্রদায়িক সংঘাত বা সহিংসতা যাতে না হয়।”
সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ‘কখনো সভ্য আচরণ হতে পারে না’ মন্তব্য করে সিইসি বলেন, “আমরা এই ধরনের অমানবিকতাকে কখনই প্রশ্রয় দিই না। আমরা তাদেরকেও অনুরোধ করেছি যে সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আপনারা আপনাদের শঙ্কার কথা ব্যক্ত করে রাখেন।”