আনারকলি অপরাধী হলে ‘সর্বোচ্চ প্রশাসনিক শাস্তি’

অপরাধ প্রমাণ হলে সর্বোচ্চ প্রশাসনিক শাস্তি হতে পারে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মুহম্মদ ফারুক খান।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 August 2022, 02:14 PM
Updated : 10 August 2022, 02:14 PM

বাসায় মাদক ‘রাখার’ অপরাধে ইন্দোনেশিয়ায় আটকের পর দেশে ফিরিয়ে আনা কূটনীতিক কাজী আনারকলির বিরুদ্ধে ‘কঠোর অবস্থান’ নিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

বুধবার সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। কমিটি জানতে চাইলে মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হয়।

দেশের ভাবমূর্তির সঙ্গে জড়িত এ ঘটনাটি নিয়ে কঠোর অবস্থান ব্যক্ত করে ওই কূটনীতিকের অপরাধ প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ প্রশাসনিক শাস্তির কথা বলা হয়েছে।

বৈঠকের পর কমিটির সভাপতি মুহম্মদ ফারুক খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ইন্দোনেশিয়া ফেরত ওই কূটনীতিকের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিষয়টি আমাদের দেশের ভাবমূর্তির সাথে সম্পৃক্ত।

“তার বিষয়ে মন্ত্রণালয়ও কঠোর অবস্থানে। ইতোমধ‌্যে তাকে ওএসডি করা হয়েছে। এছাড়া একটি কমিটি তদন্তের কাজ করছে। ওই কর্মকর্তার অপরাধ প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ প্রশাসনিক শাস্তি হতে পারে।”

ইন্দোনেশিয়ায় কী ঘটেছিল সেটা জানার জন‌্য দেশটির সরকারের কাছেও চিঠি দিয়ে অনুরোধ করা হয়েছে বলেও জানান কমিটির সভাপতি।

বাসায় ‘বিপুল পরিমাণ মারিজুয়ানা রাখার’ অভিযোগে ইন্দোনেশিয়ায় বাংলাদেশ মিশনের উপপ্রধান কাজী আনারকলি আটক হওয়ার পর তাকে জাকার্তা থেকে দেশে ফেরানোর খবর বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়।

সেখানে বলা হয়, জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে দক্ষিণ জাকার্তায় আনারকলির অ্যাপার্টমেন্টে অভিযান চালায় ইন্দোনেশিয়া সরকারের মাদক নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ।

এরপর তাকে আটক করা হলেও ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী কূটনৈতিক দায়মুক্তির কারণে ছেড়ে দেওয়া হয়। পরে ইন্দোনেশিয়া সরকারের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে তাকে ঢাকায় ফিরিয়ে আনা হয়।

বিভিন্ন দেশের বাংলাদেশ মিশনে এ ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের কারণে ইতোপূর্বে কতজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব‌্যবস্থা নেওয়া হয়েছে-কমিটির পক্ষ থেকে তা জানতে চাওয়া হবে বলে জানান ফারুক খান।

তিনি বলেন, “গত ১০ বছরে বিভিন্ন মিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কী ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে এবং তাদের বিরুদ্ধে কী ধরনের শাস্তিমূলক ব‌্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তার তথ‌্য চাওয়া হবে।

“আমরা ওই তথ‌্য সব মিশনে পাঠানোর সুপারিশ করব।”

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির এই বৈঠকে গত ৬-৭ অগাস্ট চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই’র সফর নিয়েও আলোচনা হয়।

মন্ত্রণালয় জানায়, গত ৭ অগাস্ট পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে বৈঠকে ৯৯ শতাংশ বাংলাদেশি পণ‌্য ও সেবা বিনাশুল্কে চীনে প্রবেশাধিকারের সিদ্ধান্ত এসেছে।

এর আগে ৯৮ শতাংশ বাংলাদেশি পণ‌্য ও সেবা বিনাশুল্কে চীনে প্রবেশাধিকার পেত। পরে কমিটির পক্ষ থেকে যে এক শতাংশ পণ‌্য ও সেবার জন্য শুল্ক দিতে হবে সেই তথ‌্য জানতে চাওয়া হয়।

এ বিষয়ে ফারুক খান বলেন, “৯৯ শতাংশ পণ‌্য বিনাশুল্কে যাবে এটা ভালো কথা। কিন্তু কোন কোন পণ‌্যগুলোকে শুল্ক দিয়ে রপ্তানি করতে হবে। সেই তালিকাটি আমরা জানতে চেয়েছি।

“কারণ দেখা যাবে, ওই এক শতাংশের মধ্যেই রয়েছে আমাদের রপ্তানিযোগ‌্য গুরুত্বপূর্ণ পণ‌্যগুলো।”

রোহিঙ্গা ইস‌্যুতে চীন এবং আসিয়ান দেশগুলোর সর্বশেষ অবস্থানের কথা উল্লেখ করে ফারুক খান বলেন, রোহিঙ্গা ইস‌্যুতে বাংলাদেশের দিকে সমর্থন বেড়েছে।

এদিকে সংসদ সচিবালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বৈঠকে প্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী আমদানির ক্ষেত্রে অন্যান্য দেশকেও বিকল্প হিসেবে রাখার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়।

বৈঠকে সংসদ সদস্যদের বিভিন্ন দেশের ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে জটিলতা নিয়ে আলোচনা হয় এবং দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের সুপারিশ করা হয়। এছাড়া প্রবাসীদের জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়ার প্রক্রিয়া সহজ করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়।

ফারুক খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, নুরুল ইসলাম নাহিদ, গোলাম ফারুক খন্দকার প্রিন্স, হাবিবে মিল্লাত, নাহিম রাজ্জাক ও নিজাম উদ্দিন জলিল (জন) অংশ নেন।