সনদ বাণিজ্যে জড়িত থাকার অভিযোগে তার স্ত্রী গ্রেপ্তার ও রিমান্ডের পর চেয়ারম্যানের ওএসডি করার খবরও সংবাদমাধ্যমে এসেছে।
Published : 22 Apr 2024, 01:30 AM
সনদ বাণিজ্য জালিয়াতি চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে স্ত্রী গ্রেপ্তার হওয়ার পর বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান আলী আকবর খানকে ডেকেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।
এ বোর্ডের জাল সনদ ও নম্বরপত্র তৈরির বিষয়ে তথ্য জানতে চেয়ারম্যানকে মঙ্গলবার ডাকা হয়েছে বলে জানান ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার হারুন অর রশীদ।
রোববার মধ্যরাতে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "আমরা চেয়ারম্যানকে মঙ্গলবার আসতে বলেছি। তার কাছে আমরা জাল সনদ ও নম্বরপত্র তৈরির বিষয়ে জানতে চাইব।"
ডিএমপির ডিবি প্রধান হারুন বলেন, তার অফিসের কর্মচারীরা কীভাবে এ ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িত হল সেই তথ্য এবং বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে এসব বিষয়ে তথ্য প্রকাশের পরও কেন ব্যবস্থা নেওয়া হল না সেগুলোর বিষয়ে তার কাছে জানতে চাওয়া হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জালিয়াতির যে ঘটনা ঘটেছে তার দায় তিনি এড়াতে পারেন না।
এরই মধ্যে চেয়ারম্যানের স্ত্রী সেহেলা পারভীনকে শনিবার গ্রেপ্তার করে দুই দিনের রিমান্ডে পেয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ।
রোববার সংবাদ সম্মেলনে গ্রেপ্তার ও সনদ জালিয়াতির বিষয়গুলো তুলে ধরে গোয়েন্দা পুলিশ।
স্ত্রী গ্রেপ্তার, সংবাদ সম্মেলন ও রিমান্ডের ঘটনার মধ্যে এদিন রাতে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানকে আলী আকবর খানকে ওএসডি করার খবর বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রচার করা হয়।
ডিবির ডেকে পাঠানো এবং ওএসডির বিষয়ে রোববার মধ্যরাতে আলী আকবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গোয়েন্দা পুলিশের কেউ মধ্যরাত পর্যন্ত তাকে কিছু বলেননি বা ফোন করেননি।
“তবে যদি ডাকে তাহলে যাব।”
ওএসডি হওয়ার খবর প্রচার প্রসঙ্গ তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত আদেশ পাননি।
”তবে এতগুলো টিভি স্টেশনে যখন খবর প্রচার করা হচ্ছে তা ঠিকই হবে হয়ত। কাল হয়ত আদেশ পেতে পারি “
সনদ জালিয়াতির এ ঘটনায় এরই মধ্যে কয়েকদফায় ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যাদের মধ্যে তিনজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
জালিয়াত চক্রের সঙ্গে ‘অর্থ লেনদেন’: কারিগরি বোর্ডের চেয়ারম্যানের স্ত্রী রিমান্ডে
গোয়েন্দা কর্মকর্তা হারুন বলেন, যেসব জাল সনদ এরই মধ্যে বোর্ডের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে সেগুলো কীভাবে চিহ্নিত করা হবে সে বিষয়েও চেয়ারম্যানের কাছে জানতে চাওয়া হবে।
”এসব জাল সার্টিফিকেট দিয়ে কেউ চাকরি করছে, কেউ দেশের বাইরে চলে গেছে, তা চিহ্নিত করে বাতিল করার দায়িত্বও বোর্ড কর্তৃপক্ষের।"
শনিবার উত্তরা ১৮ নম্বর সেক্টরের রাজউক অ্যাপার্টমেন্ট থেকে আকবর খানের স্ত্রী সেহেলা পারভীনকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।
এরপর রোববার ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ বলেন, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের জাল সনদ, রেজিস্ট্রেশন কার্ড ও প্রবেশপত্র তৈরিতে জড়িত একটি চক্রের সঙ্গে সেহেলা পারভীনের টাকা-পয়সা লেনদেনের ‘প্রমাণ’ পাওয়া গেছে।
“এই চক্রটি গত কয়েক বছরে পাঁচ হাজারের বেশি জাল সার্টিফিকেট মার্কশিট বানিয়ে লাখ লাখ টাকা আয় করেছে।”
সেহেলা ছাড়াও এ অভিযোগে আগে আরও পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়; তাদের তিনজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।
জালিয়াত চক্রের সঙ্গে ‘অর্থ লেনদেন’: কারিগরি বোর্ডের চেয়ারম্যানের স্ত্রী গ্রেপ্তার
পাঁচ হাজারের বেশি সনদ ও মার্কশিট বাণিজ্যের অভিযোগে গত ১ এপ্রিল কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সিস্টেম অ্যানালিস্ট এ টি এম শামসুজ্জামান ও একই প্রতিষ্ঠানের চাকরিচ্যুত কর্মচারী ফয়সাল হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গত ৫ এপ্রিল কুষ্টিয়া সদর এলাকা থেকে ‘গড়াই সার্ভে ইনস্টিটিউটে’ পরিচালক সানজিদা আক্তার কলিকে প্রেপ্তার করা হয়। পরে তিনজনই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
কলির দেওয়া জবানবন্দিতে কারিগরি বোর্ডের চেয়ারম্যান আলী আকবর খানের স্ত্রীর নাম আসে বলে জানান গোয়েন্দা কর্মকর্তা হারুন।
পুলিশ এরপর শামসুজ্জামান, ফয়সাল ও কলির ব্যবহৃত ডিভাইস পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে গত বৃহস্পতিবার কামরাঙ্গীরচরের হিলফুল ফুযুল টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম কলেজের অধ্যক্ষ গোলাম মোস্তফা ওরফে মোস্তাফিজুর রহমানকে এবং শুক্রবার যাত্রাবাড়ী এলাকার ঢাকা টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের (মেডিকেল) পরিচালক মাকসুদুর রহমান ওরফে মামুনকে (৪০) গ্রেপ্তার করে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, চেয়ারম্যানের স্ত্রী সেহেলা পারভীনের সঙ্গে শামসুজ্জামান ও সানজিদা আক্তার কলির ‘ঘনিষ্ঠ’ সম্পর্ক রয়েছে।
সনদ বাণিজ্যের অভিযোগে কারিগরি বোর্ডের সিস্টেম অ্যানালিস্ট গ্রেপ্তার
তাদের মধ্যে ‘অর্থ লেনদেন হত’ জানিয়ে হারুন বলেন, “সিস্টেম অ্যানালিস্ট একেএম শামসুজ্জামান সরকারি পাসওয়ার্ড, অথরাইজেশন ব্যবহার করে টাকার বিনিময়ে জাল সার্টিফিকেটগুলোকে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে আপলোড করত, তাই ধরা পড়ার সম্ভাবনা থাকত না। এছাড়া তারা হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে টাকা বিনিময়ের তথ্য আদান-প্রদান করত।”
এ চক্রের সঙ্গে জড়িত আরও ২৫ থেকে ৩০ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে বলে পুলিশের সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।