নিজেদের সংখ্যালঘু মনে করবেন কেন: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “কখনো নিজের ভেতর হীনমন্যতা নিয়ে আসবেন না বা নিজেদের আলাদা কিছু ভাববেন না।”

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 August 2022, 05:10 PM
Updated : 18 August 2022, 05:10 PM

হিন্দু সম্প্রদায় নিজেদের সংখ্যালঘু মনে করবে কেন সেই প্রশ্ন রেখে সকল ধর্মের মানুষ সমানভাবে নিজেদের অধিকার ভোগ করবে বলে আশ্বস্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বৃহস্পতিবার বিকালে জন্মষ্টমীর শুভেচ্ছা জানিয়ে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে শ্রী শ্রী জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদ এবং বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের নেতাদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে তিনি এই কথা বলেন।

“আমরা এখানে চাই যে, আমাদের সকল ধর্মের মানুষ সমানভাবে নিজের অধিকার নিয়ে বসবাস করবে এবং আমি হিন্দু সম্প্রদায়ের, সনাতনী হিন্দু সম্প্রদায়, সকলকে আমি এটাই বলবো যে, আপনারা এই দেশেরই মানুষ।

“এই মাটিতে আপনাদের সমান অধিকার। আমার যতটুকু অধিকার, আপনাদেরও সেই অধিকার। এভাবে সকলেরই সমান অধিকার আছে। কাজেই এখানে সব সময় আপনারা… কখনোই নিজেদেরকে সংখ্যালঘু বা ওই রকম মনে করবেন কেন?

“আপনারা মনে করবেন আপনারা এই দেশেরই নাগরিক। সমানভাবে নাগরিক অধিকার আপনারা ভোগ করবেন এবং আমরা সেইভাবেই আপনাদেরকে দেখতে চাই।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “কখনো নিজের ভেতর ওই হীনমন্যতা নিয়ে আসবেন না বা নিজেদেরকে আলাদা কিছু ভাববেন না।

ভাববেন, এই দেশের আপনারা নাগরিক, আপনারা মালিক।

“আমরা সবাই যে, এই দেশে আমরা জন্মেছি তারা, এই দেশে বসবাস করি এই দেশের নাগরিকত্ব পেয়েছি। কাজেই নাগরিক হিসেবে আমাদের সমান অধিকার থাকবে।”

আত্মবিশ্বাস নিয়ে চলার আহ্বান জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, “আমি মনে করি এই আত্নবিশ্বাস নিয়ে যদি চলতে পারেন তাহলে কখনোই এই দুষ্ট লোকেরা… সেটা সব ধর্মের থেকেই কিন্তু হয়।

“কাজেই কেউ আর কিছু করে ক্ষতি সাধন করতে পারবে না, যদি এই ঐক্যটা আমাদের সকলের মধ্যে থাকে, এই বিশ্বাসটা থাকে। সেই বিশ্বাসটা নিয়েই সবাইকে চলতে হবে। আমি আপনাদের কাছে সেটাই চাই।”

তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মানবপ্রেমী ছিলেন এবং স্বাধীনতার পর তিনি যে সংবিধান দিয়েছিলেন সেখানে চার মূল নীতি ছিল জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্ম নিরপেক্ষতা।

“ধর্মনিরপেক্ষতাকে তিনি গুরুত্ব দিয়েছিলেন এবং সকল ধর্মের মানুষ সমানভাবে ধর্ম পালন করবে এবং এই মাটিতে যাদের জন্ম, সকলে অধিকার নিয়েই বাস করবে এটাই ছিল তার লক্ষ্য।”

জাতির পিতাকে হত্যার পর হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপরই সব থেকে আঘাত এসেছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “কারণ ৭৫ এ জাতির পিতাকে হত্যার পর প্রথমে ঘোষণা দিয়েছিল বাংলাদেশকে ইসলামিক রাষ্ট্র হিসেবে।

“যদিও জনমতের চাপে সেটা করতে পারেনি। কিন্তু উদ্দেশ্যটা তাদের এটাই ছিল। বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন এদেশের এক শ্রেণির মানুষ কখনোই মেনে নিতে পারেনি।

“কিন্তু আওয়ামী লীগ সব সময় জাতির পিতার সেই চেতনায়ই বিশ্বাস করে এবং সকল ধর্মের সমান অধিকার থাকবে।”

বাংলাদেশের যে কোনো অনুষ্ঠানে সবাই সমানভাবে অংশগ্রহণ করে থাকে উল্লেখ করে বাংলাদেশের মানুষের অসাম্প্রদায়িক মনোভাবের কথাও অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

“বাংলাদেশের এই সুন্দর পরিবেশটা নষ্ট করার জন্য অনেক চেষ্টা করা হয়। একেকটা শ্রেণি কিন্তু আছে। এটা কিন্তু শুধু একটা ধর্মে না সব ধর্মেই কিন্তু এ জাতীয় কিছু আছে যারা মাঝে মাঝেই একেকটা সমস্যা সৃষ্টি করে।”

এমন যে কোনো ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “তবে একটা জিনিস আমি দুঃখের সঙ্গে বলছি, যখন কোনো একটা ঘটনা ঘটল সেই ঘটনাটাকে এমনভাবে দেশে, বিদেশে, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এমনভাবে এটা প্রচার করা হয়, মনে হয় যেন এদেশে হিন্দুদের কোনো অধিকারই নাই। এমন একটা ভাব দেওয়া হয়।”

“কিন্তু ঘটনার পরে আমাদের যে অ্যাকশনগুলো… আমরা যে … সে যে ধর্মেরই হোক তাকে আমরা গ্রেপ্তার করি তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেই, সেই বিষয়টা কিন্তু তুলে ধরা হয় না।”

সরকার প্রধান বলেন, “এমনকি এটা করতে গিয়ে অনেক সময় অনেক মুসলমানও কিন্তু পুলিশের গুলিতে মারা গেছে, সেই মন্দির রক্ষা করতে গিয়ে। এই রকম ঘটনাও আছে। যেটা কুমিল্লায় ঘটেছিল।

“কিন্তু এই কথাগুলো কিন্তু বলা হয় না। সেখানে প্রচারটা করা হয় বোধহয় হিন্দুরা ভীষণ খারাপ অবস্থায় এখানে আছে।”

হিন্দু সম্প্রদায়ের সঙ্গে যখনই কোনো ঘটনা ঘটেছে আওয়ামী লীগ তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।

করোনাভাইরাস মহামারীর ধাক্কায় বিশ্ব অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়ার পাশপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে স্যাংশান এবং পাল্টা স্যাংশানকে ‘মরার উপর খড়ার ঘা’ হিসেবে অভিহিত করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “তার ফলে আজকে প্রত্যেকটা জিনিসের দাম বেড়ে গেছে।”

ইউরোপের বিভিন্ন দেশে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের যে সমস্ত জিনিস আমদানি করতে হয়, তার দামও যেমন বেড়েছে, পরিবহন খরচও বেড়েছে। কাজেই আমাদের কিছু কৃচ্ছ্র সাধন করতে হবে।”

তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, “যেটা স্বাভাবিকভাবে বাড়ার কথা সেটা না, কেউ আবার এখানে অধিক মুনাফার জন্য কিছু অতিরঞ্জিত করছে।

“কাজেই সেখানে আমরা মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করছি। সেখানে আমরা খোঁজ খবর নিচ্ছি।”

সাধারণ মানুষ যাতে ন্যায্যমূল্যে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য কিনতে পারে সেজন্য সরকার ব্যবস্থা নেবে এবং এরই মধ্যে যে সমস্ত পদক্ষেপ নিয়েছেন সেটাও অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন সরকার প্রধান।

সংকটের এই সময়ে দেশের বিত্তশালীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আপনারা মানুষের পাশে দাঁড়ান। কেউ আরাম আয়েশে থাকব আর কেউ কষ্ট পাবে সেটা তো হবে না।

“সকল মানুষ সমান অধিকারটা ভোগ করবে এবং যারা যারা বিত্তবান তাদের দায়িত্ব হচ্ছে বিত্তহীনদের প্রতি নজর দেওয়া, দেখা এবং তাদের পাশে দাঁড়ানো।

“শুধু নিজেরা ভোগ করলে সেই ভোগে কিন্তু শান্তি আসে না বরং মানুষের সেবা করলে শান্তি আসবে। এটা হল বাস্তব কথা।”

সরকার প্রধান বলেন, “আমরা যে ধর্মের কথাই চিন্তা করি প্রত্যেক ধর্মই কিন্তু মানবতার কথা বলে গেছে। প্রত্যেক ধর্মই কিন্তু অসাম্প্রদায়িক চেতনার কথা বলে গেছে। কাজেই শ্রীকৃষ্ণ কিন্তু সেই কথাই বলে গেছেন।”

বক্তব্যের শেষে প্রধানমন্ত্রী হিন্দু সম্প্রদায়কে উদ্দেশ্য করে বলেন, “আপনারা ধর্ম পালন স্বাধীনভাবে করবেন। এবং ধর্ম যার যার উৎসব সবার। এই উৎসবে সবাই আমরা যোগ দেব এবং সকলে এক সাথেই পালন করবে সেটাই আমরা চাই।

“মনীষীরা যে কথা বলে গেছেন, সকল ধর্মের জন্য এটা প্রযোজ্য। সকলেই শান্তির কথা বলেছেন। সংঘাতের কথা বলেননি। উন্নতির কথা বলেছেন। মানুষকে ক্ষতি করার কথা বলেননি। আমরা সেটাই মেনে চলব। সেটাই আমি চাই।”

জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে দেশের মানুষের কল্যাণে সরকারের নেওয়া নানা পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।

“মানবতার প্রেম, মানবতার জন্য কাজ করা, মানবতার উন্নতি করা এটাই আমাদের লক্ষ্য। এটাই আমরা বিশ্বাস করি। আর সেই বিশ্বাস নিয়েই আমরা চলি।”

ভিডিও কনফারেন্সে রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দির ও চট্টগ্রামের জে.এম.সেন হল প্রান্তে শ্রী শ্রী জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদ এবং বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।