গ্রামীণ টেলিকম: আইনজীবীর কাছে ২৬ কোটি টাকার হিসাব চেয়েছে হাই কোর্ট

ইউসুফ আলী ‘অ্যাডভোকেট ফি’ হিসেবে যে অর্থ নিয়েছেন, তা আদালত দেখছে না বলে দাবি তার আইনজীবীর।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 August 2022, 12:13 PM
Updated : 2 August 2022, 12:13 PM

গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারীদের পাওনা আদায় সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইউসুফ আলী ‘ফি হিসেবে’ ১৬ কোটি টাকা পেয়েছেন বলে হাই কোর্টকে জানিয়েছেন তার আইনজীবী। এছাড়া শ্রমিকদের থেকে পাওয়া ‘অন্যান্য খরচ’ বাবদ আরও ১০ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে বলে আদালতকে জানানো হয়।

আদালতের নির্দেশে মঙ্গলবার বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের হাই কোর্ট বেঞ্চে ইউসুফ আলীর দাখিল করা প্রতিবেদনে এই হিসাব দেওয়া হয়।

তবে এই ১৬ কোটি টাকা ইউসুফ আলী আদৌ ‘ফি’ হিসেবে পেয়েছেন কি না এবং ‘অন্যান্য খরচ’ বাবদ আরও ১০ কোটি কে, কী বাবদ পেয়েছেন, বৃহস্পতিবার তা ‘পরিষ্কারভাবে’ হলফনামা আকারে দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট।

আদালতে শ্রমিক-কর্মচারীদের আইনজীবী ইউসুফ আলীর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আহসানুল করিম, সাঈদ আহমেদ রাজা, রবিউল আলম বুদু, অনীক আর হক। অন্যদিকে গ্রামীণ টেলিকমের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোস্তাফিজুর রহমান খান।

পরে আহসানুল করিম সাংবাদিকদের বলেন, “ইউসুফ আলী এবং অন্যান্য আইনজীবী যারা ছিলেন, তাদেরকে ১৬ কোটি টাকা প্রদান করা হয়। আরও ১০ কোটি টাকা ট্রেড ইউনিয়নের একাউন্টে আছে। সুতরাং যে টাকা প্রদান করা হয়েছে, তা ফি বাবদই প্রদান করা হয়েছে।”

আদালতে শ্রমিকদের পক্ষ থেকে এবং ট্রেড ইউনিয়নের পক্ষ থেকেও একই কথা বলা হয়েছে উল্লেখ করে এই আইনজীবী বলেন, “তারাও বলেছে, এটা শ্রমিকদের ফি বাবদ প্রদান করা হয়েছে। টেলিকমের কাছ থেকে অ্যাডভোকেট ইউসুফ আলী সাহেব কোনো টাকা গ্রহণ করেননি, তাদের অন্য কোনো অ্যাডভোকেটও গ্রহণ করেননি।”

Also Read: গ্রামীণ টেলিকমকর্মীদের আইনজীবী বললেন, অর্থ পেয়েছি ফি হিসেবে

তবে ইউসুফ আলী ‘অ্যাডভোকেট ফি’ হিসেবে যে অর্থ নিয়েছেন, এটি আদালত ‘বিষয়বস্তু’ হিসেব দেখছে না বলে দাবি করেন আহসানুল করিম।

তিনি বলেন, “কোর্টের মুখ্য বিষয় ছিল এই যে ট্রানজেকশন এর স্বচ্ছতা কী, তা দেখার জন্য। ইউসুফ আলী সাহেব কত টাকা নিয়েছেন, এটা পরিষ্কার করেছেন, কোর্টের এটি বিষয়বস্তু না। কোর্ট শুধু দেখতে চেয়েছে, ট্রানজেকশন যেটি হয়েছে এর স্বচ্ছতা কী? এফিডেভিট যেটি ছিল, সেটি কোর্টের দৃষ্টিতে মনে হয়েছে এটি সম্পূর্ণভাবে পরিষ্কারভাবে উল্লিখিত হয়নি।”

এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য বৃহস্পতিবার দিন রেখেছে আদালত। সেদিন ইউসুফ আলীকে এ বিষয়ে ‘পরিষ্কারভাবে’ আদালতকে জানাতে হবে।

Also Read: গ্রামীণ টেলিকম: পাওনা পরিশোধের যৌথ প্রতিবেদন চেয়েছে হাই কোর্ট

আইনজীবী আহসানুল বলেন, “সেই দিন এফিডেভিট আকারে ইউসুফ আলী সাহেবকে বলতে হবে যে, কত টাকা তিনি ফি হিসেবে পেয়েছেন, আদৌ তিনি ফি হিসেবে পেয়েছেন কি না, কত টাকা তিনি গ্রহণ করেছেন। বাদ বাকি টাকা, যেটি ২৬ কোটি টাকার মধ্যে ১০ কোটি টাকা অন্যান্য বাবদ খরচের কথা বলা হয়েছে, এই ১০ কোটি টাকা কে পেল, সেটি পরিষ্কারভাবে বলতে বলা হয়েছে।”

এর আগে গত ৩০ জুন গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারীদের পাওনা ৪৩৭ কোটি টাকা পরিশোধের বিষয়ে উভয় পক্ষকে যৌথভাবে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছিল হাই কোর্ট। সেই অনুযায়ী মঙ্গলবার তারা আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে।

গত ২৩ মে শ্রমিক-কর্মচারীদের পাওনা ৪৩৭ কোটি টাকা পরিশোধের আশ্বাসে গ্রামীণ টেলিকম ও তার প্রতিষ্ঠাতা নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে করা ১১০টি মামলা প্রত্যাহার করার বিষয়টি আদালতকে উভয় পক্ষ জানিয়েছিল।

এর আগে গত ফেব্রুয়ারিতে কর্মীদের পক্ষ থেকে গ্রামীণ টেলিকমের অবসায়ন চেয়ে হাই কোর্টে একটি মামলা করা হয়। এছাড়া উচ্চ আদালতে আরও দুটি রিট আবেদন এবং তিনটি আদালত অবমাননার অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল।

Also Read: ইউনূস ও গ্রামীণ টেলিকমের বিরুদ্ধে কর্মীদের মামলা প্রত্যাহার

এছাড়া পাওনা পরিশোধ চেয়ে শ্রম আদালতে আরও ১০৪টি মামলা করেছিলেন গ্রামীণ টেলিকমের ১৭৬ কর্মী।

এদিকে গ্রামীণ টেলিকমের কর্মীদের আইনজীবী ইউসুফ আলীকে ১২ কোটি টাকা দেওয়ার বিনিময়ে গ্রামীণ টেলিকমের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলো আপসের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

ওই সময় কর্মীদের আইনজীবী ইউসুফ আলী সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ১৭৬ জন কর্মীর মধ্যে আট জন বাদে বাকি ১৬৮ জন তাদের টাকা বুঝে পেয়েছেন। আটজনের মধ্যে চারজন মারা গেছেন, তাদের উত্তরাধিকারী নিয়ে জটিলতা রয়েছে। অন্য চারজন বিদেশে আছেন, তাদের পাওয়ার অব অ্যাটর্নি নিয়ে জটিলতাও আছে।

আইনজীবী হিসেবে গ্রামীণ টেলিকমের কর্মীদের কাছ থেকে তিনি অর্থ পেয়েছেন জানালেও টাকার অঙ্ক তখন প্রকাশ করেননি।