গ্রামীণ টেলিকম: পাওনা পরিশোধের যৌথ প্রতিবেদন চেয়েছে হাই কোর্ট

আদালতের বাইরে ‘সমঝোতায়’ গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারীদের পাওনা ৪৩৭ কোটি টাকা পরিশোধের বিষয়ে উভয় পক্ষকে যৌথভাবে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 June 2022, 03:50 PM
Updated : 30 June 2022, 03:50 PM

এ বিষয়ক এক শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের হাই কোর্ট বেঞ্চ আগামী ২ অগাস্টের মধ্যে কর্মীদের অর্থ পরিশোধের বিষয়টি হলফনামা আকারে দাখিল করতে বলেছে।

আদালতে গ্রামীণ টেলিকমের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোস্তাফিজুর রহমান খান। কর্মচারীদের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ইউসুফ আলী।

এর আগে ২৩ মে শ্রমিক-কর্মচারীদের পাওনা ৪৩৭ কোটি টাকা পরিশোধের আশ্বাসে গ্রামীণ টেলিকম ও তার প্রতিষ্ঠাতা নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে করা ১১০টি মামলা প্রত্যাহার করার বিষয়টি আদালতকে উভয় পক্ষ জানিয়েছিল।

এর আগে গত ফেব্রুয়ারিতে কর্মীদের পক্ষ থেকে গ্রামীণ টেলিকমের অবসায়ন চেয়ে হাই কোর্টে একটি মামলা করা হয়। এছাড়া উচ্চ আদালতে আরও দুটি রিট আবেদন এবং তিনটি আদালত অবমাননার অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল।

এছাড়া পাওনা পরিশোধ চেয়ে শ্রম আদালতে আরও ১০৪টি মামলা করেছিলেন গ্রামীণ টেলিকমের ১৭৬ কর্মী।

এদিকে গ্রামীণ টেলিকমের কর্মীদের আইনজীবী ইউসুফ আলীকে ১২ কোটি টাকা দেওয়ার বিনিময়ে গ্রামীণ টেলিকমের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলো আপসের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

বৃহস্পতিবার শুনানির সময় বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকার বলেন, “আমরা শুনেছি, টাকার বিনিময়ে কর্মচারীদের আইনজীবী পক্ষপাতদুষ্ট ছিলেন এবং কর্মচারীরা সমঝোতার মাধ্যমে মামলা নিষ্পত্তি করতে বাধ্য হয়েছেন।”

বিচারক বলেন, “আদালত ব্যবহার করে কোনো অনিয়ম করা চলবে না। সবকিছু আইন অনুযায়ী না হলে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হবে।”

“শুধু বাংলাদেশেই নয়, এই উপমহাদেশে এমন কোনো আইনজীবী নেই, যিনি একটি মামলায় ১২ কোটি টাকা ফি নিতে পারেন,” বিস্ময় প্রকাশ করে এমন মন্তব্য করেন বিচারপতি।

এর পর আদালত গ্রামীণ টেলিকম ও কর্মচারীদের পক্ষে পরিশোধ করা অর্থ প্রত্যেককে কত টাকা দেওয়া হয়েছে তার একটি তালিকাসহ সংশ্লিষ্ট নথিপত্রও জমা দিতে নির্দেশ দেয়।

পরে কর্মীদের আইনজীবী ইউসুফ আলী সাংবাদিকদের বলেন, ১৭৬ জন কর্মীর মধ্যে আট জন বাদে বাকি ১৬৮ জন তাদের টাকা বুঝে পেয়েছেন। আটজনের মধ্যে চারজন মারা গেছেন, তাদের উত্তরাধিকারী নিয়ে জটিলতা রয়েছে। অন্য চারজন বিদেশে আছেন, তাদের পাওয়ার অব অ্যাটর্নি নিয়ে জটিলতাও আছে।

এই আইনজীবী বলেন, “আমাদের জানামতে, মোট ৪৩৭ কোটি টাকা, গ্রামীণ টেলিকম একটি সেটেলম্যান্ট একাউন্ট করেছিল, যেটির সিগনেটরি হলেন কোম্পানির এমডি এবং ট্রেড ইউনিয়নের সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক। ওই একাউন্টে পুরো ৪৩৭ কোটি টাকা ট্রান্সপার করা হয়। সেই একাউন্ট থেকে প্রত্যেক পাওনাদার ব্যক্তিকে তাদের পাওয়া হিসেবে করে পরিশোধ করা হয়েছে।”

এক প্রশ্নের জবাবে এই আইনজীবী ইউসুফ আলী বলেন, “আজকে মামলাটি এসেছে বেসিক্যালি আদালত জানতে চেয়েছেন- ঠিক মত লেনদেন হয়েছে কিনা, সব শ্রমিক ঠিক মত টাকা পয়সা পেয়েছে কি না, এই বিষয়টি কোর্টকে এফিডেভিট আকারে দুই পক্ষকে যৌথভাবে জানাতে বলেছে। আমরা আগামী ২ অগাস্ট জানাবো বলে আদালতের কাছে সময় চেয়ে নিয়েছি।”