গ্রামীণ টেলিকমকর্মীদের আইনজীবী বললেন, অর্থ পেয়েছি ফি হিসেবে

আদালতের বাইরে ‘সমঝোতা’ করে দেওয়ার নামে কয়েক কোটি টাকা নেওয়ার অভিযোগের মুখে থাকা গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারীদের আইনজীবী ইউসুফ আলী দাবি করেছেন, ‘স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায়’ মক্কেলদের থেকে ফি হিসেবে অর্থ পেয়েছেন তিনি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 July 2022, 12:21 PM
Updated : 3 July 2022, 05:51 PM

গত কিছু দিন ধরে এ নিয়ে আলোচনার মধ্যে রোববার সুপ্রিম কোর্টে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন সর্বোচ্চ আদালতের এই আইনজীবী।

তবে ‘মক্কেল ফি’ হিসেবে কত টাকা পেয়েছেন, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাব দিতে রাজি হননি এই আইনজীবী। তিনি বলেছেন, তার এবং তার সহযোগীদের ছয়টি ব্যাংক হিসাব বাংলাদেশ ব্যাংকের বিএফআইইউ জব্দ করেছে।

গ্রামীণ টেলিকমের প্রায় দুইশ শ্রমিক-কর্মচারী তাদের পাওনা ৪৩৭ কোটি টাকা আদায়ে আদালতে মামলা করেছেন। সেই মামলায় শ্রমিকদের পক্ষে লড়ছেন ইউসুফ আলী।

সম্প্রতি একটি অনলাইন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, গ্রামীণ টেলিকমের কর্মীদের আইনজীবী ইউসুফ আলীকে ১২ কোটি টাকা দেওয়ার বিনিময়ে গ্রামীণ টেলিকমের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলো আদালতের বাইরে ‘সমঝোতায়’ মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয়েছে।

এর মধ্যে বাদী-বিবাদী পক্ষ থেকে হাই কোর্টকে জানানো হয়, পাওনা পরিশোধের আশ্বাসে দুই পক্ষের সমঝোতা হয়েছে, ফলে ১১০টি মামলা চালাতে চান না তারা।

এদিকে সংবাদ প্রতিবেদন নজরে এলে গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারীদের পাওনা ৪৩৭ কোটি টাকা পরিশোধের বিষয়ে উভয় পক্ষকে যৌথভাবে প্রতিবেদন দাখিল করতে গত বৃহস্পতিবার নির্দেশ দেয় হাই কোর্ট।

ওই দিন শুনানির সময় বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকার বলেন, “আমরা শুনেছি, টাকার বিনিময়ে কর্মচারীদের আইনজীবী পক্ষপাতদুষ্ট ছিলেন এবং কর্মচারীরা সমঝোতার মাধ্যমে মামলা নিষ্পত্তি করতে বাধ্য হয়েছেন।”

তিনি বিস্ময় প্রকাশ করে বলেছিলেন, “শুধু বাংলাদেশেই নয়, এই উপমহাদেশে এমন কোনো আইনজীবী নেই, যিনি একটি মামলায় ১২ কোটি টাকা ফি নিতে পারেন।”

ওই সংবাদ প্রতিবেদন ও অভিযোগের বিষয়ে আইনজীবী ইউসুফ আলী রোববার বলেন, “আষাঢ় মাসে একটা আষাঢ়ে গল্প তৈরি করা হয়েছে। গল্পটা হচ্ছে- আমি নাকি গ্রামীণ টেলিকমের কাছ থেকে ঘুষ নিয়ে গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক যারা আমার মক্কেল আছেন, তাদেরকে বঞ্চিত করে একটা সেটেলমেন্ট করেছি।”

মক্কেলরা ‘অত্যন্ত স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায়’ ফি দিয়েছেন দাবি করে তিনি বলেন, “আমাকে টাকা দেওয়া হয়েছে একাউন্ট পেয়ি চেকের মাধ্যমে। ইউনিয়ন তাদের একাউন্ট থেকে আমার একাউন্টে টাকা পাঠিয়েছে। আমার ফিস পরিশোধ করেছে। তাদের মতো করে তারা দিয়েছে, এটা নিয়ে আমি কিছুই বলিনি। এই বিষয়ে আমার মক্কেলদের কারও কোনো অভিযোগ করেনি, করবেও না হয়ত।”

কত টাকা পেয়েছেন- সাংবাদিকদের এ প্রশ্নে ইউসুফ আলী বলেন, “আমি কত পেয়েছি এই কথা আমি বলতে চাই না। আমার মক্কেল আমাকে যেটা দিয়েছে, আমি সেটা পেয়েছি।”

সাংবাদিকদের প্রশ্ন ছিল- শোনা যাচ্ছে ২৬ কোটি, আবার শোনা যায় ১২ কোটি, কোনটি সত্য? তখন তিনি বলেন, “এটার কোনোটিই সত্য নয়। আমি বার বার বলছি, আমার ফিস পরিশোধ হয়েছে একাউন্ট পেয়ি চেকের মাধ্যমে।”

ব্যাংক একাউন্ট জব্দের বিষয়ে তিনি বলেন, “আমি সাংবাদিক বন্ধুদের থেকে শুনে ব্যাংকে গিয়ে দেখেছি আমার সমস্ত একাউন্ট ফ্রিজ করা হয়েছে। আমার পারসোনালি তিনটা, আমার পার্টনারের দুইটা এবং আমার চেম্বারের একটি একাউন্ট, সেটিও ফ্রিজ করা হয়েছে। মোট ছয়টি একাউন্ট ফ্রিজ করা হয়েছে।”