দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন সাংবাদিকদের এ তথ্য দিয়েছেন।
Published : 16 Mar 2025, 05:03 PM
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর সিতাংশু কুমার (এস কে) সুর চৌধুরী, তার স্ত্রী সুপর্ণা সুর চৌধুরী ও মেয়ে নন্দিতা সুর চৌধুরীর বিরুদ্ধে ‘জ্ঞাত আয়বহির্ভূত’ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে পৃথক মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক।
রোববার দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন সাংবাদিকদের এ তথ্য দিয়েছেন।
তিনি বলেন, দুদকের উপপরিচালক নাজমুল হুসাইন বাদী হয়ে মামলা তিনটি করেছেন।
এর আগে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পদ বিবরণী না দেওয়ায় ২০২৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর এস কে সুর, তার স্ত্রী ও কন্যার বিরুদ্ধে প্রথম মামলা করেছিল দুদক।
তার পর গেল ১৪ জানুয়ারি রাজধানীর সেগুনবাগিচা এলাকা থেকে এস কে সুরকে গ্রেপ্তার করে দুদক। সেদিনই তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
এস কে সুরের বিরুদ্ধে নতুন যে মামলাটি করতে যাচ্ছে দুদক, সেখানে অভিযোগ করা হয়েছে যে তিনি সরকারি কর্মচারী থাকা অবস্থায় ‘ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির মাধ্যমে’ তার স্ত্রী ও মেয়ের নামে ব্যাংক হিসাবে সন্দেহজনক লেনদেন করেছেন। ‘দুর্নীতির মাধ্যমে’ অর্জিত অর্থ বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় উত্তোলন করে ‘অবৈধ সম্পদের’ প্রকৃতি, উৎস, অবস্থান ও মালিকানা গোপন করেছেন।
তিনি ১ কোটি ৯৯ লাখ ৮৮ হাজার ১০১ টাকা, ১ লাখ ৬৯ হাজার ৩০০ মার্কিন ডলার, ৫৫ হাজার ইউরো ও ১ হাজার ৫ দশমিক ৪ গ্রাম স্বর্ণালংকার বাবদ ৫ কোটি ৯৬ লাখ ৫৩ হাজার ৯৭৯ টাকার সম্পদ ‘জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণভাবে’ অর্জন করেছেন।
এস কে সুর চৌধুরীর স্ত্রী সুপর্ণা সুর চৌধুরীর বিরুদ্ধে অনুমোদন করা মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে স্বামীর ‘ক্ষমতার অপব্যবহার ও অবৈধ সহযোগিতায় ব্যাংক হিসাবে ‘সন্দেহজনক’ লেনদেনের মাধ্যমে’ ৪ কোটি ১০ লাখ ১৪ হাজার ৮২ টাকার ‘জ্ঞাত আয়বহির্ভূত’ সম্পদ অর্জন করেছেন তিনি।
মেয়ে নন্দিতা সুর চৌধুরীর মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, তিনি পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে ‘দুর্নীতির’ আশ্রয় নিয়ে ব্যাংক হিসাবে ৭৪ লাখ ৭১ হাজার ৪৭৭ টাকার ‘অবৈধ’ লেনদেন করেছেন। তিনি ‘অসাধু উপায়ে’ সম্পদ অর্জন করেছেন।
এই মামলায় এস কে সুরকেও আসামি করা হয়েছে।
পি কে হালদারের আর্থিক কেলেঙ্কারিতে নাম আসায় ২০২২ সালে এস কে সুরের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। ওই বছরের মার্চে তাকে দুদকে তলব করা হয়।
ক্ষমতার পালাবদলের পর গত বছরের ২৭ অক্টোবর নিজ স্বাক্ষরে সেই আদেশ ও সম্পদ বিবরণী ফরম গ্রহণ করেন। কিন্তু আদেশ পাওয়ার ২১ কার্যদিবসের মধ্যে সম্পদ বিবরণী দাখিল করেননি এস কে সুর।
এরপর ২৩ ডিসেম্বর ‘আর্থিক অনিয়মের’ অভিযোগে এস কে সুরের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক।
এর আগে সে বছর ২৮ অগাস্ট এস কে সুর, তার স্ত্রী সুপর্ণা সুর চৌধুরী ও কন্যা নন্দিতা সুর চৌধুরীর আয়কর নথি জব্দের আদেশ দেয় আদালত।
এস কে সুর চৌধুরী ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে ডেপুটি গভর্নরের পদ থেকে অবসরে যাওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংকের উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেন।
অভিযোগ আছে, এস কে সুর ডেপুটি গভর্নর থাকাকালে এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার হালদারের (পি কে হালদার) ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় ‘সহযোগিতা’ করেছেন এবং ‘সুবিধা’ নিয়েছেন।
পি কে হালদারের কেলেঙ্কারিতে নাম আসায় ২০২১ সালের জুলাইয়ে এস কে সুর ও তার স্ত্রীর ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ দেয় এনবিআর।
সে বছর ১৫ মার্চ হাই কোর্ট এক এক আদেশে প্রশ্ন তোলে, এস কে সুর চৌধুরীকে কেন গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না।
তবে ২০২২ সালের ২৯ মার্চ দুর্নীতি দমন কমিশনের জিজ্ঞাসাবাদে হাজির হওয়ার পর তাকে আর প্রকাশ্যে দেখা যায়নি।
পিকে হালদার নানা কৌশলে নামে-বেনামে অসংখ্য কোম্পানি খুলে শেয়ারবাজার থেকে বিপুল পরিমাণ শেয়ার কেনেন এবং ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে ও পরে নিজের আত্মীয়, বন্ধু ও সাবেক সহকর্মীসহ বিভিন্ন ব্যক্তিকে পর্ষদে বসিয়ে চারটি ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ নেন।
এসব কোম্পানি থেকে তিনি ঋণের নামে বিপুল অংকের টাকা সরিয়ে বিদেশে পাচার করেছেন এবং এ কাজে বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছু কর্মকর্তার ‘যোগসাজশ’ ছিল বলে তদন্তকারীদের ভাষ্য। পিকে হালদারের বিরুদ্ধে একাধিক মামলাও দায়ের করেছে দুদক।
দেশ ছাড়ার পর দুই বছর আগে ভারতে গ্রেপ্তার হন পি কে হালদার।