ঢাকায় চোর কত? পুলিশের তালিকায় ৪ হাজার

পুলিশ বলছে, এখন ডাকাতির চেয়ে চুরি করাকে নিরাপদ মনে করছে অপরাধীরা, কারণ ধরা পড়লে জামিন পাওয়া সহজ হয়।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Sept 2022, 04:13 PM
Updated : 28 Sept 2022, 04:13 PM

রাজধানীতে চুরির ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় অনুসন্ধানে নেমে চার হাজার চোরের একটি তালিকা প্রস্তুত করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ।

মাদারীপুরের শিরখারা ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য আজিজুল হক ফকিরকে চুরির সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তারের পর বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে এমন তথ্য তুলে ধরেন ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম) হাফিজ আকতার।

ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে ওই সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “এখন ডাকাতির চেয়ে চুরি করাকে তারা নিরাপদ মনে করছে।”

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ইউপি সদস্য আজিজুলের চারজনের একটি দল রয়েছে, যারা রাজধানীতে প্রাইভেট কার নিয়ে চুরি করে বেড়ায়। ২০১৬ সাল থেকে ওই দলটি রাজধানীতে অন্তত ৫০০ চুরি করেছে বলে পুলিশের ধারণা।

সবশেষ মঙ্গলবার ঢাকার মিরপুর থেকে আজিজুলকে ‘চুরির বিভিন্ন সরঞ্জামসহ’ গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তার আগে বেনারসিপল্লিতে একটি শাড়ির দোকানে চুরি করেছিলেন তিনি।

হাফিজ আকতার বলেন, ঢাকা মহানগরে ডাকাতি, খুনসহ অন্যান্য অপরাধ কখনও বাড়ে, কখনও কমে। মাসে দুই-তিনটির বেশি ডাকাতি ঢাকা শহরে হয় না, তবে ঢাকার বাইরে বেশি হয়। 

“ইদানিং ডাকাতি না হয়ে চুরির সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে, কারণ চুরিটা তুলনামূলক নিরাপদ মনে করছে তারা, চুরি করে ধরা পড়লে দ্রুতই জামিন পেয়ে যায়। যাদের অল্প কিছু চুরি হয়, তারা থানা পর্যন্ত যান না, আইনের জটিলতায় তারা আসতে চান না। আর চুরি ঘটনা ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা সেভাবে তদারকি করেন না, ফলে এসব ঘটনা সবসময় উপেক্ষিত থাকে।” 

সম্প্রতি কলাবাগানের একটি বাসা থেকে ৭৩ ভরি সোনার গয়না চুরির একটি ঘটনা তুলে ধরে পুলিশ কর্মকর্তা হাফিজ আক্তার বলেন, “ছোট ছোট চুরির পাশপাশি বড় চুরির ঘটনাও বেশ ঘটছে। ওই চুরির সাথে জড়িত একটি চক্রকে তিনটি বিদেশি পিস্তল এবং ১০০ রাউন্ড গুলিসহ গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। কিছু স্বর্ণালঙ্কারও উদ্ধার করা হয় সে সময়।

“তারা আমাদের বলেছিল, রাতে গ্রিল কেটে কারো কোনো ক্ষতি না করে শুধু স্বর্ণালঙ্কার এবং টাকা নেয়। কোন ডিভাইস (মোবাইল- ল্যাপটপ) তারা নেয় না। তবে দিনের বেলায় কোনো কোনো ক্ষেত্রে তারা মোবাইল, ল্যাপটপও নিয়ে থাকে।”

হাফিজ আকতার জানান, গত এক মাসে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় ৭৩টি মামলা নথিভুক্ত হয়েছে। তবে বাস্তবে চুরির ঘটনা যে এর চেয়ে অনেক বেশি, সেটাও তিনি স্বীকার করেন।

এসব ঘটনায় অনুসন্ধান করে চার হাজার চোরের একটি ‘ডেটাবেজ’ তৈরি করা হয়েছে বলে জানান ঢাকা মহানগরের এই পুলিশ কর্মকর্তা।

তিনি বলেন, ইউপি সদস্য আজিজুল তার চারজনের দল নিয়ে সাধারণ একটি প্রাইভেট কারে ঘুরে বেড়াতেন। মাঝেমধ্যে নম্বার প্লেট পরিবর্তন করে নিতেন। ওই দলের চোরেরা গ্রিল কাটায় ‘বেশ পারদর্শী’।

তাদের সর্বশেষ চুরির ঘটনা তুলে ধরে হাফিজ আকতার বলেন, “তারা বেনারশি পল্লীতে গিয়ে একটি দোকানের গ্রিল কেটে ঢুকে তাদের স্ত্রীদের জন্য লেহেঙ্গা নেয়। জিজ্ঞাসাবাদে আজিজুল বলেছে, স্ত্রীরা লেহেঙ্গা পছন্দ না করলে আবার এসে তারা পছন্দের লেহেঙ্গা নিয়ে যাবে ঠিক করেছিল।”

একদল লোক গাড়ি নিয়ে মিরপুরের বিভিন্ন এলাকায় চুরি করছে খবর পেয়ে মঙ্গলবার রাতে কাফরুল থানা এলাকায় চেকপোস্ট বসিয়েছিল পুলিশ। সে সময় সেনপাড়া পর্বতা ঈদগাহ মাঠ এলাকায় আজিজুলকে প্রাইভেটকারসহ গ্রেপ্তার করা হয়। কিন্তু তার সঙ্গীদের সেখানে পাওয়া যায়নি।

চোর এবং ছিনতাইকারীদের গ্রেপ্তারের জন্য রাজধানীতে বিশেষ অভিযান শুরু হয়েছে জানিয়ে হাফিজ আকতার বলেন, “কোনো নির্দিষ্ট ধরনের অপরাধ বেড়ে গেলে ক্র্যাকডাউন করতে আমরা বিশেষ অভিযান চালাই।”