বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রশ্ন তোলার অধিকার নেই: শাহরিয়ার

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পরবর্তী বৈঠকে প্রতিবেদন নিয়ে আপত্তিগুলো তুলে ধরবে সরকার।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 March 2023, 04:38 PM
Updated : 21 March 2023, 04:38 PM

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বার্ষিক মানবাধিকার প্রতিবেদনে যে পর্যবেক্ষণ দেওয়া হয়েছে, সেটাকে ‘খুবই দুঃখজনক’ বলে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, “অবশ্যই বাংলাদেশ হচ্ছে সংসদীয় গণতন্ত্রের একটি রাষ্ট্র এবং আমাদের যাত্রাপথ যে কতটা কণ্টকাকীর্ণ ছিল বা এখনও আছে,, সেটা যে কোনো রাষ্ট্র নিশ্চয় বোঝেন এবং জানেন।

“একজন প্রধানমন্ত্রীর যেটুকু ক্ষমতা থাকা প্রয়োজন, ঠিক ততটুকুই আছে। এটা ডিগ্রি অব অ্যাপ্লিকেশন বা অন্য কিছু নিয়ে একটা বন্ধু রাষ্ট্রের উদ্বেগ প্রকাশ করার বা সংশয় প্রকাশ করার বা প্রশ্ন উত্থাপন করার কোনো নৈতিক অধিকারই নেই।”

বৈশ্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে সোমবার প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রের বার্ষিক প্রতিবেদনের বলা হয়, বাংলাদেশে সংবিধান অনুযায়ী যে সংসদীয় গণতন্ত্র রয়েছে, তা প্রধানমন্ত্রীর হাতে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করে রেখেছে।

যে ভোটে শেখ হাসিনা তৃতীয় বারের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন, ২০১৮ সালের সেই সংসদ নির্বাচনকেও স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য মনে করছে না দেশটি।

প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার পাল্টায় যুক্তরাষ্ট্রকে নিয়েও প্রশ্ন তোলার সুযোগ তৈরি হয় বলে মনে করেন শাহরিয়ার।

তিনি বলেন, “এটা বলতে গেলে আমাদেরকে অনেক কিছু বলতে হবে, যেটা অনেক আনপ্লিজেন্ট হয়ে যেতে পারে। সো, আই উইল ট্রাই রিফ্রেইন মাইসেলফ ইন ডুয়িং সো।”

এ বিষয়ে আরেক প্রশ্নে তিনি বলেন, “একটা দেশে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার, সেখানে প্রেসিডেনশিয়াল অর্ডারে অনেক কাজ হতে পারে। এটা তাদের সংবিধানের অংশ এবং একটা দেশের সরকার চলে ও পরিচালিত হয়, তাহলে কি আমরা বলব, সেই রাষ্ট্রপতি একমাত্র ক্ষমতাধর ব্যক্তি? তা তো নয়।

“আমাদের দেশের সংসদীয় গণতন্ত্রে কীভাবে আইন প্রণয়ন হয়, আপনারা সেটা দেখেছেন, দেখছেন। সেখানে এভাবে ঢালাওভাবে একটা পজিশানকে, সাংবিধানিক অফিসকে আন্ডারমাইন্ড করার একটা প্রবণতা আমরা দেখেছি, যেটা শুধু দুঃখজনক নয়, খুবই দুঃখজনক।”

Also Read: বাংলাদেশে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত প্রধানমন্ত্রীর হাতে: যুক্তরাষ্ট্র

বাংলাদেশের বিষয়ে এবারের প্রতিবেদনে বরাবরের মতো কিছু ‘দুর্বলতা’ রয়ে গেছে বলেও মনে করছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী।

তার মতে, এর মধ্যে রয়েছে প্রতিবেদন তৈরির আগে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দেওয়া, অধিকার‘র মতো অনিবন্ধিত সংগঠনের তথ্য ব্যবহার এবং অনেক ভুল তথ্য সন্নিবেশিত করা হয়েছে।

শাহরিয়ার বলেন, “এই রিপোর্টগুলির ফান্ডামেন্টাল কিছু শর্টকামিংস আছে। তার প্রথমে আছে যে, একটা কান্ট্রি রিপোর্ট তৈরি করা হচ্ছে, একটি বন্ধু রাষ্ট্র করছে এবং আমরা দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় বলি যে, রিপোর্ট প্রকাশ করার আগে আমাদের জানানোর, একটি আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য। বিভিন্ন সময়ে এ ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়, কিন্তু এবারও হয়নি। সুতরাং আমি মনে করি এটা মেজর শর্টকামিং।”

বাক স্বাধীনতার অধিকারের বিষয়ে উন্মুক্ত উৎস থেকে তথ্যগুলো নেওয়ার মাধ্যমে প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রের ‘স্ববিরোধী’ অবস্থান প্রকাশ পেয়েছে বলেও মন্তব্য করেন প্রতিমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “অনেক সময় বলা হয়, মিডিয়ার স্বাধীনতা খর্ব করা হচ্ছে, বাকস্বাধীনতা খর্ব করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

“কিন্তু এই রিপোর্টের অজস্র উদাহরণ আছে ওপেন সোর্সের। এবং এটা এটাই প্রমাণ করে যে, কোনো সংবাদ মাধ্যমকে কোনো খবর তৈরিতে সরকার বাধা প্রদান করে না।”

তিনি বলেন, “এখানে বেশ কিছু এনজিও, আইএনজিও বা সিএসও-র রেফারেন্স দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে অন্যতম আছে ‘অধিকার’। আমরা পরিষ্কার ভাষায় বলতে চাই যে, অধিকারকে বর্তমানে বাংলাদেশে অপারেট করার তাদের কাছে ভ্যালিড ডকুমেন্টস বা লাইসেন্স নাই।”

কোনো নাগরিক সমাজের সংগঠন বা এনজিও’র রাজনৈতিক ‘ইতিহাস ও পরিচয়’ থাকলে তাদেরকে নিরপেক্ষতার দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার কোনো সুযোগ নেই বলেও মন্তব্য করেন শাহরিয়ার।

তিনি বলেন, “যেসব সংগঠন রেজিস্টার্ড না, সেসব সংগঠনকে আমলে নিয়ে সেটার কাজটাও কিন্তু একটা বেআইনি বা একটা নর্মসের বাইরে পড়ে।

“আমরা অনুরোধ করব আপনাদের মাধ্যমে, যে শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নয়, অন্যান্য রাষ্ট্রও যেন এসব সমস্যাগুলো থেকে দূরে থাকে এবং আমাদের দেশের আইন অনুযায়ী, আমরা যাকে যেভাবে রিকগনাইজ করেছি সেটা আমলে নিয়ে যেন তারা তাদের সামনের দিনের কার্যক্রমগুলো পরিচালনা করে।”

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পরবর্তী দ্বিপাক্ষিক বৈঠকগুলোতে প্রতিবেদন নিয়ে আপত্তিগুলো তুলে ধরা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, “এই রকম শর্টকামিংস যদি অব্যাহতভাবে থাকে এই রিপোর্টগুলোর গ্রহণযোগ্যতা হারিয়ে যায়। তো, আমরা এই বিষয়গুলো আরেকটু বিশ্লেষণ করে দেখব, এখানে আমলে নেওয়ার আদৌ কোনো বিষয় আছে কি-না।

“কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আমাদের যে লেভেল অব অ্যাংগেজমেন্ট, সেটার জায়গা থেকে এই রিপোর্টে আমাদের যে রিজার্ভেশনগুলো আছে, আমাদের সামনে উচ্চ পর্যায়ের দ্বিপাক্ষিক সফর আছে, বিভিন্ন পর্যায়ে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকগুলো হবে, সেখানে আমরা এই রিপোর্টের শর্টকামিংসগুলো তুলে ধরব যেন ২০২৪ সালের রিপোর্টে অন্তত এই বিষয়গুলো না থাকে।”

২০২১ এবং ২০২২ সালের প্রতিবেদনের মধ্যে গুণগত ও কাঠামোগত কোনো পরিবর্তন নেই মন্তব্য করে শাহরিয়ার বলেন, “কিছু অ্যাপ্রিসিয়েশনের জায়গা আছে। আমরা ধন্যবাদ জানাতে চাই যে, আমরা বিভিন্ন জায়গায় যে উন্নতিগুলো করেছি তার একটি প্রতিফলন এই রিপোর্টে আছে।”

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনটি পর্যালোচনায় সময় লাগবে জানিয়ে তিনি বলেন, “রিপোর্টটা যেহেতু বড়, সময় লাগবে স্টাডি করতে এবং ২০২১ এর সাথে ২২-এর তুলনা, ঠিক আছে কি-না বা বর্তমানের। এবং আমরা ইতোমধ্যে কিছু ভুল পেয়েছি।”

এক্ষেত্রে গুম হওয়া ব্যক্তিদের সংখ্যা নিয়ে একটি ‘ভুল’ তথ্য দেওয়ার কথা তুলে ধরে শাহরিয়ার আলম বলেন, “ওয়ার্কিং গ্রুপ অন এনফোর্সর্ড ডিজঅ্যাপিয়ারেন্সেসের যেই সংখ্যা নিয়ে আমরা কাজ করছি, এখানে ৮১ উল্লেখ করা হয়েছে এই রিপোর্টে।

“কিন্তু সংখ্যাটা ৮১ নয়, আপনারা খুব ভালোমতই জানেন, ৭৬। ৭৬-এর জায়গায় খুব ভেইগলি লেখা হয়েছে যে, বাংলাদেশ দাবি করেছে ১০ জনকে চিহ্নিত করা গেছে। এমনভাবে তারা বলেছেন এটা, কনক্লুসিভ না।”

তিনি বলেন, আমি সুস্পষ্টভাবে বলতে চাই যে, জাতিসংঘ আমাদেরকে এই ১০ জনের তথ্য-উপাত্ত পাওয়ার পরে তারা নিজেরা যাচাইবাছাই করেছেন এবং ৭৬-এর তালিকা থেকে ১০ জনকে কিন্তু বাদ দেওয়া হয়েছে ইতোমধ্যে।

“সুতরাং এটা এমন না, বাংলাদেশ শুধুমাত্র ক্লেইম করেছে। ক্লেইম করেছিলাম যথেষ্ট সময় নিয়ে, প্রায় তিন-চার মাস সময় নিয়ে, তারা কিন্তু তালিকা থেকে বাদ দিয়েছেন। এই ধরনের কিছু ফান্ডামেন্টাল মিসটেক কিন্তু এই রিপোর্টে আছে।”