খেজুর গাছটি সৌদি আরবের ‘আল বারহি’ জাতের; ফলন বেশির কারণেই দাম বেশি, বলছেন বিক্রেতারা।
Published : 27 Jun 2024, 09:06 AM
ছোট গাছটিতেই ধরে আছে কয়েক ছড়া খেজুর; হাত দিয়ে যেন কেউ না ছিঁড়তে পারে, সেজন্য মুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে পলিথিনে।
জাতীয় বৃক্ষ মেলায় হাজারো গাছের ভিড়ে এই খেজুর গাছটির কাছেই এসে দাঁড়াচ্ছিলেন দর্শনার্থীরা। কৌতুহলবশত দামও জিজ্ঞেস করছিলেন কেউ কেউ।
তবে বিক্রেতা যা দাম চেয়েছেন, তাতে ‘চক্ষু চড়কগাছ’ সবার; কারণ, গাছটির দাম চাওয়া হচ্ছে ৮ লাখ টাকা।
‘এত দামের কারণ কী’- এমন প্রশ্নে খান নার্সারির এক বিক্রয়কর্মী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সাত বছর বয়সের খেজুর গাছটি সৌদি আরবের ‘আল বারহি’ জাতের। ফলন বেশি হওয়ার কারণেই দাম বেশি।”
দাম কত উঠেছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত ৫ লাখ টাকা দাম উঠেছে। তবে ৮ লাখ টাকার কাছাকাছি দাম পেলেই তারা বিক্রি করবেন।
বিক্রয়কর্মীরা বলছেন, গাছটির কারণে স্টলে ভিড়ও বেশি হচ্ছে। মানুষ আগ্রহ নিয়ে দেখছে, ছবি তুলছে। শেষ পর্যন্ত বিক্রি নাহলে তারা নার্সারিতেই ফেরত নিয়ে যাবেন।
ঢাকার আগারগাঁওয়ের পুরনো বাণিজ্য মেলার মাঠে জাতীয় বৃক্ষ মেলায় এই খেজুর গাছটিসহ বাহারি প্রজারি গাছ উঠেছে। সারি সারি গাছের ভিড়ে তমাল, সিভিট আর কুম্ভির মত সচরাচর দেখা না যাওয়া গাছও শোভা পাচ্ছে মেলায়।
মেলার তথ্য কেন্দ্র বলছে, সোমবার পর্যন্ত ১১৮টি স্টলে বিক্রি হয়েছে ২০ লাখ ৮৯ হাজার ৪৬৪টি গাছ।
হোসেন নার্সারিতে বিক্রি হচ্ছে গোলাপজাম, কাউফল, বেত এবং ডেউয়া গাছ। এই স্টলে গোলাপজামের চারা রয়েছে ২ হাজার, কাউফলের দেড় হাজার, বেতের পাঁচশ এবং ডেউয়ার চারা রয়েছে ৩ হাজার।
হোসেন নার্সারিতে গোলাপজামের চারা বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়, কাউফল ২০০, বেত গাছ ১৫০ আর ডেউয়া ২০০ টাকায়। বিক্রেতা মহসিন মাহমুদ জানান, এখন পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে ৩০০ থেকে ৪০০টি চারা।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আগামী প্রজন্ম যাতে পুরনো গাছগুলো সম্পর্কে ধারণা পায়, সেজন্যই এগুলোর চাষ করা। এ গাছগুলো সচরাচর পাওয়া যায় না।”
মানুষ কিনছে কেমন, জানতে চাইলে মহসিন মাহমুদ বলেন, “বিলুপ্ত এ গাছগুলো না চেনার কারণে চাহিদাও তেমন নেই। এখন অনেক মানুষ চেনেই না কাউফল কী, বেত কী। বৃক্ষমেলায় এ গাছগুলো সম্পর্কে মানুষকে জানাই, তাদের বলি কিনতে। যারা জানে, তারা খোঁজে বিলুপ্ত গাছগুলো।”
কৃষিবিদ উপকরণ নার্সারিতে রয়েছে প্রায় ৪ হাজার প্রজাতির গাছ। এ নার্সারির স্টলে ৪২ প্রজাতির ‘বিলুপ্তপ্রায়’ গাছ বিক্রির কথা জানালেন ম্যানেজার খন্দকার হাবিবুল্লাহ।
তিনি বলেন, “তমাল গাছ রয়েছে ৫০০টি, সিভিট এক হাজার, কৃম্ভি ৩০০টি, বৈলাম ২০০টি, হাড়জোড়া ২০০টি এবং তুলসি রয়েছে ৩০০টি।”
হাড়জোড়া গাছ ৫০ টাকায় এবং অন্য গাছগুলো আকার অনুযায়ী ৫০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি করছেন বলে জানান হাবিবুল্লাহ।
তার ভাষ্য, “মানুষ জানুক এ গাছগুলো আছে। মানুষকে উৎসাহিত করার জন্যই নিয়ে আসছি৷ পরবর্তী প্রজন্ম যাতে জানে এ গাছগুলো ছিল আমাদের দেশে। তবে এগুলোর চাহিদা কম। আমাদের পূর্বপুরুষেরা করছে, আমরাও করছি, আমাদের ছেলেমেয়েরা যেন ধরে রাখে, তাই করা।”
ডিপ্লোমা কৃষিবিদ নার্সারিতেও বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। এ নার্সারির বিক্রয়কর্মী মাহবুব রহমান জানান, তাদের কাছে জহুরী চাপা ৫০ থেকে ১০০ টাকা, দেশি গাব ৫০ টাকা, বিলাতি গাব ৫০ থেকে ৫০০ টাকা, কাউফল ১০০ থেকে ৫০০ টাকা, কর্পূর গাছ ১৫০ থেকে ২০০ টাকা, অশোক ১০০ টাকা, সর্পগন্ধা ১৫০ টাকা, খৈয়াম ৫০ থেকে ২০০, বাবলা ৫০ থেকে ১৫০ এবং ‘মাছিন্দা’ গাছ বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১৫০ টাকায়।
মাহবুব রহমান বলেন, “কিছু লোক আছে যারা পুরনো গাছ খোঁজে, তাদের জন্য আমরা এই গাছগুলো চাষ করি। তাদের নতুন প্রজাতির গাছ ফ্রিতে দিলেও নেবে না, এরা পুরাতনটাই খুঁজবে।”
বিক্রি বেশি ফল আর শোভাবর্ধনকারী গাছ
বৃক্ষমেলায় বিক্রেতারা বলছেন, ক্যাকটাস এবং ফুল গাছের মত শোভাবর্ধনকারী গাছগুলো বিক্রি হচ্ছে বেশি। ফলের মধ্যে বেশি বিক্রি হচ্ছে আম গাছ।
রাজধানীর গুলশান থেকে আসা মিরাজ হোসেন চাপা, টগরসহ কিছু ফুল গাছ কেনেন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “বাড়ির শোভা বাড়ানোর জন্য কেনা। আর বাড়ির পরিবেশটাও ভালো থাকবে।”
ঢাকার গোপীবাগের মো. পিয়ার হোসেন কিনেছেন ফলের গাছ। সেগুলো নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে গ্রামের বাড়িতে লাগাবেন বলে জানান তিনি।
পিয়ার বলেন, “এর আগে আম গাছ নিয়েছি। এরা যেমন বলে গাছগুলো তেমনি হয়। গ্রামের মানুষ ফল পছন্দ করে। বাড়িতে অনেক ফলের গাছ লাগিয়েছি।
“বনজ গাছ অনেক জায়গা নষ্ট করে, তাই লাগাই না। অন্য গাছ লাগানোর ইচ্ছা থাকলেও লাগাতে পারি না জায়গা সংকটে।”
কৃষিবিদ উপকরণ নার্সারির ব্যবস্থাপক খন্দকার হাবিবুল্লাহ জানান, তাদের নার্সারিতে বিশেষ করে আম, সফেদা, লিচু, পেয়ারা, আনার এবং লেবু গাছ বিক্রি হচ্ছে বেশি।
“এখন সবাই ছাদ বাগান করে, সেখানে লাগানোর জন্য নিচ্ছে। ছাদে তো অন্য গাছ চাষ করা যায় না, এসব কারণে ফল গাছের চাহিদাই বেশি। আর ঘরে রাখার জন্য নিচ্ছে শোভাবর্ধনকারী গাছ।”
ডিপ্লোমা কৃষিবিদ নার্সারির বিক্রয়কর্মী মাহবুব রহমান বলেন, “বাজারের ফলে মেডিসিন থাকায় ফল গাছ কেনার আগ্রহ বাড়ছে। সেজন্য নিজেরাই চাষ করার চেষ্টা করছে।”
গত ৫ জুন থেকে শুরু হওয়া এ মেলা চলবে ১৩ জুলাই পর্যন্ত।