তার এই সফরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতার পথরেখা ঠিক করে ‘কারিগরি সহযোগিতা চুক্তি’ হবে এবং খেলাধুলায় সহযোগিতার বিষয়ে হবে সমঝোতা স্মারক।
Published : 07 Apr 2024, 12:16 PM
দুদিনের সফরে ঢাকা পৌঁছেছেন ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাউরো ভিয়েরা; বাংলাদেশে লাতিন আমেরিকার দেশটির প্রথম কোনো উচ্চ পর্যায়ের সফর এটি।
ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রোববার সকালে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছালে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন তাকে স্বাগত জানান।
দুদিনের এই সফরে সরকারি কর্মকর্তাদের পাশাপাশি ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদেরও সফরসঙ্গী করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভিয়েরা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ মন্ত্রীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায়ে কয়েকটি অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন তিনি।
রোববার বিকাল পৌনে ৫টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সঙ্গে মাউরো ভিয়েরার দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হবে।এর আগে সোয়া ৩টায় হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে বৈঠক হবে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটুর সঙ্গে।
লাতিন আমেরিকার সবচেয়ে বড় দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই সফরকে বেশ গুরুত্ব দিচ্ছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।তার এই সফরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতার পথরেখা ঠিক করে ‘কারিগরি সহযোগিতা চুক্তি’ হবে এবং খেলাধুলায় সহযোগিতার বিষয়ে সই হবে একটি সমঝোতা স্মারক।
পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, “আমাদের স্বাধীনতার পরে প্রথমবারের মত ব্রাজিলের একজন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সফর করতে আসছেন, এটার কিন্তু তাৎপর্য আছে। ব্রাজিল দক্ষিণ আমেরিকার মধ্যে সবচেয়ে বড় দেশ। সময় যাওয়ার সঙ্গে ওদের আগ্রহ যে বেড়েছে, সেটা একটা চূড়ান্ত পর্যায়ে এসেছে।”
লাতিন আমেরিকার সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ ব্রাজিল বর্তমানে জি-২০ জোটের প্রেসিডেন্টের দায়িত্বেও রয়েছে। তাদের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে এই সফরকে ‘বড় সুযোগ’ হিসাবে বর্ণনা করে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, “ব্রাজিলের সাথে যখন দেখবে যে, বাংলাদেশের সম্পর্ক আরও জোরদার হচ্ছে, তখন লাতিন আমেরিকার অন্যান্য দেশগুলো আছে, তারাও কিন্তু আরও আগ্রহী হয়ে উঠবে। আশা করি, তারাও অনুসরণ করবে।”
ব্যবসা-বাণিজ্য এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্য ধরে সাজানো ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরসূচিতে দুদেশের ব্যবসায়ীদেরও যুক্ত করা হয়েছে। ব্রাজিলের সঙ্গে থাকা বাংলাদেশের বাণিজ্য বাড়ার সুযোগ তৈরির আশা দেখছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদও।
তিনি বলেন, “ব্রাজিল থেকে আমরা ভোজ্যতেল ও অন্যান্য পণ্য আমদানি করি। দক্ষিণ আমেরিকায় আমাদের রপ্তানি অনেকটাই আনএক্সপ্লোরড রয়ে গেছে। ব্রাজিল বড় দেশ, তাদের ক্রয়ক্ষমতাও বেশি, ফলে তাদের সাথে বাণিজ্য সম্পর্ক বৃদ্ধির ব্যাপক সুযোগ রয়েছে।”
ব্রাজিল থেকে চিনি, ভোজ্যতেল ও গমসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্যের পাশাপাশি তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য বিপুল পরিমাণ তুলা আমদানি করে বাংলাদেশ।
ব্রাজিলের তুলা কেনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ রয়েছে বিশ্বে চতুর্থ স্থানে। ২০২২-২৩ সালে ব্রাজিল থেকে ২৩৩ টন তুলা আমদানি করেছে বাংলাদেশ; ২০২৩-২৪ সালে এখন পর্যন্ত ১৩২ টন আমদানি হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে ২০২২-২৩ সালে ব্রাজিল থেকে ৬ হাজার ৬৩ কোটি টাকার তুলা আমদানি করেছে বাংলাদেশ। তার আগের বছর এই অঙ্ক ছিল তিন হাজার ৯৫৩ কোটি টাকা।
এবারের সফর ঘিরে বাংলাদেশে গরুর মাংস রপ্তানির আলোচনাও ব্রাজিল তুলেছে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের লাতিন আমেরিকা অনুবিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
ঢাকায় ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত পাওলো ফার্নান্দো দিয়াস ফেরেস নিজ দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই সফরকে দুদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ‘মাইলফলক’ হিসাবে বর্ণনা করে ফেব্রুয়ারিতে এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, “এর মাধ্যমে আমরা সম্পর্ককে আরো মজবুত করতে পারব।”
পররাষ্ট্র সচিব জানান, ব্রাজিলের মন্ত্রীর সফরে যে কারিগরি সহযোগিতা চুক্তি হবে, তার আওতায় বিভিন্ন খাতে সহযোগিতার এগিয়ে নেওয়ার পথরেখা থাকবে।
“যখন কোনো দেশ অনেক যোগাযোগ করে বা উন্নয়ন অংশীদার হিসাবে কাজ করে, তখন এই চুক্তিটা একটি আমব্রেলা চুক্তি হিসাবে কাজ করে।”
আর্জেন্টিনার পর ফুটবলের আরেক পরাশক্তি ব্রাজিলের সঙ্গেও খেলাধুলায় সহযোগিতার একটি সমঝোতা চুক্তি করছে বাংলাদেশ।
পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বলেন, “মূলত ফুটবলের ক্ষেত্রে সহযোগিতাটা হবে। কোচ বিনিময়, খেলোয়াড়দের প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন কিছু এর মধ্যে থাকবে।”
সোমবার এফবিসিসিআই এবং ব্রাজিলের ব্যবসায়ীদের মধ্যে ‘ম্যাচমেকিংয়ের’ আয়োজন থাকবে জানিয়ে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ব্রাজিলের ব্যবসায়ীরা ছয়টি প্রেজেন্টেশন দেবেন। বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা তিনটি প্রেজেন্টেশন দেবেন।
“উনি (পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাউরো ভিয়েরা) সাথে ১৮-২০ জন ব্রাজিলীয় কোম্পানি বা বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের নিয়ে আসছেন। সুতরাং ব্যবসার দিক থেকে চিন্তা করলেও এটা একটা বড় সুযোগ আমাদের জন্য। এফবিসিসিআই ও অন্যান্য সংস্থা যারা আছে, তারাও বেশ উৎসাহী।”
স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস এবং বেক্সিমকো শিল্প পার্কে বাংলাদেশের ওষুধ এবং তৈরি পোশাক তৈরির কার্যক্রমে দেখতে যাবেন ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
লাতিন আমেরিকা ও আফ্রিকাকে ধরে রপ্তানি বাজার বহুমুখীকরণের লক্ষ্য এগিয়ে যেতে এই সফর ‘কাজ করবে’ মন্তব্য করে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, “লাতিন আমেরিকার সাথে আমরা পিছিয়েই ছিলাম। এখানে দূরত্বের একটা ফ্যাক্টর আছে, ভাষার একটা বিষয় আছে। ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরের মধ্য দিয়ে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হতে যাচ্ছে।
“এবং আমরা যদি এটাকে ঠিকমত ফলোআপ করতে পারি, তাহলে আগামীতে লাতিন আমেরিকার সাথে আমাদের সম্পর্ক আরও ভালো হবে।”
রোববার দুপুরে ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘরে পরিদর্শন করবেন ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। সোমবার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে একটি আলোচনা অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন তিনি।
পুরোনো খবর: