১ এপ্রিল থেকে আগাম টিকেট মিলবে বলে জানাচ্ছে লঞ্চ মালিক সমিতি।
Published : 30 Mar 2024, 09:11 PM
পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর দক্ষিণের যাত্রীরা নৌপথ থেকে মুখ ফেরালেও ঈদ ঘিরে চিরচেনা ভিড় শুরু হয়েছে সদরঘাটে। ঝক্কি এড়াতে কেউ কেউ পরিবারের সদস্যদের আগেই পাঠিয়ে দিচ্ছেন।
কেউবা কেবিনের অগ্রিম টিকেট নিতে ভিড় করছেন। তবে খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে তাদের। কারণ আগাম টিকেট বিক্রিই শুরু হয়নি এখনো।
লঞ্চ মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল সালাম খান বলেন, “১ এপ্রিল থেকে কেবিনের অগ্রিম টিকেট বিক্রি শুরু হবে। আর ডেকের কোনো অগ্রিম টিকেট নাই। সেটা ইনস্ট্যান্ট দেওয়া হয়।"
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “পদ্মা সেতু হওয়ার আগে আমাদের সুদিন ছিল। সেতু হওয়ার পর থেকেই তো যাত্রী বেশির ভাগ সড়কপথে যাতায়াত করে।
“তবে এবার আশা করি, রাস্তার যানজট এড়াতে নৌপথে যাবে মানুষ। আর সড়ক পথে এত যাত্রী নেওয়ার সক্ষমতা নেই।"
শনিবার দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত সদরঘাট ঘুরে দেখা যায়, দুপুরে অনেকেটাই ফাঁকা ছিল টার্মিনাল, তবে বিকাল গড়াতেই যাত্রীরা এসে লঞ্চের কেবিনের অগ্রিম টিকেটের জন্য ঘুরছেন।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া দুই বোন নিতু-নিলুও আগাম টিকেট খুঁজছিলেন। বললেন, তারা একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। ব্যস্ততার কারণে তারা গ্রামের বাড়ি বরিশাল ফিরতে চান ৯ এপ্রিল।
সেজন্য কেবিন বুকিং দিতে এসেছেন। তবে আগাম টিকেট বিক্রি শুরু না হওয়ায় হতাশ হয়ে ফিরতে হচ্ছে।
ঢাকার মগবাজার থেকে আসা হাসান আলী বললেন, “লঞ্চের অগ্রিম টিকিট বিক্রির ঘোষণার পর টিকেট নিতে এলে অনেক ভিড় থাকে। আবার অনেক সময় টিকেট পাওয়া যায় না। তাই আগেভাগেই টিকেট নিতে চেয়েছি। "
চরফ্যাশনগামী এমভি টিপু লঞ্চে খোঁজ নিয়ে তিনি জেনেছেন, আগাম টিকেটের জন্য ১ এপ্রিলেই আসতে হবে।
ওয়ারী বটেশ্বরে থাকেন হারুন মিয়া। তিনি ন্যাশনাল মেডিক্যালে চাকরি করেন। এবার ঈদে ছুটি পাবেন না তিনি। তাই তিন মেয়ে ও স্ত্রীকে লঞ্চে উঠিয়ে দিতে এসেছেন টার্মিনালে।
হারুন বললেন, “ভাই আমি যেহেতু ছুটি পাব না। তাই আগে আগেই পরিবার পাঠিয়ে দিচ্ছি। পরে গেলে ভিড়ের মধ্যে এই তিনটা বাচ্চা নিয়ে ওদের মায়ের অনেক বিপদ হয়ে যাবে।”
দুইদিন ধরে টার্মিনালে যাত্রী বাড়তে দেখতে পাওয়ার কথা জানালেন সদরঘাট এলাকার সিএনজি অটোরিকশা চালক মোহাম্মদ ছোলায়মান।
তিনি বলেন, “গত ১০ দিনের তুলনা করে যদি বলি- তাহলে এখন টার্মিনালকেন্দ্রিক আমার খ্যাপ একটু বাড়ছে। অগ্রিম টিকেট নিতে আইতাছে মানুষ। আবার অনেকে পরিবার নিয়া বাড়িও যাইতাছে।”
দশমিনাগামী লঞ্চ এমভি পূবালী-৬ এর টিকেট বিক্রয়কর্মী জাকারিয়া ইসলাম বলেন, “এখনও উল্লেখযোগ্য ঈদ যাত্রী পাচ্ছি না। অল্প কিছু পাচ্ছি। তাতে যে আমাদের লঞ্চ পূর্ণ হয়, ব্যাপারটা এমনও না। তবে স্বাভাবিকের তুলনায় বাড়ছে- এটা ঠিক। আর অগ্রিম টিকেট নিতে আইতাছে বেশি।”
ভোলার চরফ্যাশনগামী লঞ্চ এমভি টিপু-১৪ এর টিকেটের দায়িত্বে থাকা সোহেল বলেন, “১ তারিখ থেকে অগ্রিম টিকেট দেওয়ার সিদ্ধান্ত হওয়ায় এখন অগ্রিম টিকেট দিচ্ছি না আমরা। অনেকেই এসে অগ্রিম টিকেট চাইতেছে। কিন্তু আমরা দিব ১ তারিখের পর থেকে।”
৫ এপ্রিলের পর ব্যাপক যাত্রী সমাগমের আশা করছেন সোহেল। তিনি বলেন, “মূলত ঈদের এক সপ্তাহ আগে ভিড় বাড়ে। এখন কেউ কেউ ঈদের যাত্রায় যাচ্ছে। তারা কেবিন চায় বেশির ভাগ।”
স্ত্রীকে চিকিৎসক দেখাতে ঢাকায় এসেছিলেন চরফ্যাশনের আকরাম হোসেন।
তিনি বললেন, "কয়দিন আগে ঢাকা আইছি রোগী লইয়া, আমার আত্মীয়ের বাড়িত ছিলাম। এখন আগে আগেই চইলা যামু, যাতে ঈদের জাম না অয়।"
সদরঘাট টার্মিনালে প্রবেশ করতে ১০ টাকা দিয়ে টিকেট কাটতে হয়। টার্মিনালে ঢোকার সময় এ টিকেট জমা দিতে হয়।
বেলা সাড়ে ৩টার দিকে দ্বিতীয় গেটে টিকেট চেকের দায়িত্বে ছিলেন শাহীন আলম।
তিনি বলেন, “ঈদ হিসেবে বিগত বছরগুলোর তুলনায় খুব বেশি মানুষের ভিড় নেই টার্মিনালে। তবে কয়েকদিনের তুলনায় আস্তে আস্তে মানুষের আনাগোনা বাড়ছে।
“পদ্মা সেতু হওয়ার আগে ঈদের এই সময়টাতেই অনেকটা ভিড় লেগে যেত টার্মিনালে। অগ্রিম টিকে সংগ্রহের জন্য তাড়াহুড়ো করতো মানুষ।”
সদরঘাট নৌ থানার ওসি আবুল কালামের ভাষ্য, ঈদ ঘিরে সব ধরনের নিরাপত্তা প্রস্তুতি রয়েছে তাদের।
“শৃঙ্খলা রক্ষা করা, ছিনতাইকারী ও পকেটমার চক্র যেন কোনোভাবেই মানুষকে বিপদে ফেলতে না পারে- সবকিছু আমাদের নজরদারিতে রয়েছে। পুলিশের টহল টিম বাড়ানো হয়েছে। প্রয়োজনে আরও বাড়ানো হবে।
“টার্মিনালে মেট্রো পুলিশ থাকবে। বিআইডব্লিউটিএ’র সদস্যরা থাকবে, সাদা পোশাকে পুলিশ থাকবে, আর এখন র্যাবের সদস্যরাও অবস্থান করছেন টার্মিনালে।”
এখনও মানুষের ঈদ যাত্রা ‘তেমন’ শুরু হয়নি মন্তব্য করে তিনি বলেন, “তবে ঈদের আগ মুহূর্তে ভিড় হতে পারে। আর সেভাবেই আমাদের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।”
ভাড়ার বিষয়ে লঞ্চ মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল সালাম খান বলেন, সাধারণ সময়ে যাত্রী টানতে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে কম ভাড়া নেওয়া হয়।
“সরকারি ভাড়া ৪৫০ টাকার মতো আছে। আমাদের এখন ভাড়া আছে ৩৫০ টাকা। আর ঈদের আগ মুহূর্তে এটা ৪০০ টাকা হতে পারে বড়জোর।”
লঞ্চ মালিকদের তথ্য অনুযায়ী, রোজার ঈদ উপলক্ষে ৬ এপ্রিল থেকে সদরঘাট থেকে বিশেষ লঞ্চ চলাচল করবে। দক্ষিণাঞ্চলে চলাচলের জন্য ১৩০টি লঞ্চ প্রস্তুত রাখা হয়েছে।