প্রস্তাবিত বাজেটে সংসদ সদস্যদের শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানির সুবিধা তুলে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।
Published : 12 Jun 2024, 11:24 PM
সংসদ সদস্যদের গাড়ি আমদানিতে প্রস্তাবিত বাজেটে শুল্ক আরোপের যে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, তা প্রত্যাহার চেয়েছেন সরকার দলীয় সংরক্ষিত নারী আসনের দুইজন সংসদ সদস্য।
বুধবার জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে এ বিষয়ে বক্তব্য তুলে ধরেন তারা।
এর আগে বিকাল ৪টায় স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হয়।
গত ৬ জুন প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী সংসদ সদস্যদের গাড়ি আমদানিতে শুল্ক ছাড়ের সুবিধা তুলে দেওয়ার ঘোষণা দেন। অর্থমন্ত্রী এ সুবিধার জন্য এ বিষয়ক আইন সংশোধনের প্রস্তাব করেন। তবে নতুন করে কী হারে শুল্ক আদায় করা হবে, সে বিষয়ে কোনো প্রস্তাব বাজেটে রাখা হয়নি।
এ বিষয়ে সরকার দলীয় সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্য দ্রৌপদী দেবী আগারওয়ালা বলেন, “সংসদ সদস্যদের গাড়ি শুল্ক মুক্ত ছিল। এবার শুল্ক ধরা হয়েছে। এটা যেন মওকুফ করা হয়। এটা সম্মানের জিনিস, প্রধানমন্ত্রী করে দিয়েছেন। করমুক্ত গাড়ি চাই।”
সরকার দলীয় আরেক সদস্য ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, “সংসদ সদস্যদের গাড়িতে শুল্ক বসানোর প্রস্তাব মহৎ উদ্দেশ্য থেকে করা হয়েছে। তবে জনপ্রতিনিধি উপজেলা চেয়ারম্যান, মেয়ররা সরকারিভাবে গাড়ি পেয়ে থাকেন। অনেক সংসদ সদস্যের গাড়ি কেনার সামর্থ্য নেই। কিন্তু তাদের এলাকায় ঘুরে বেড়াতে হয়। এটা তাদের প্রয়োজন, বিলাসিতা নয়। সরকার থেকে গাড়ি বরাদ্দ করা হলে গাড়ি আমদানির প্রয়োজন হয় না।”
ঋণখেলাপি ও অর্থ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি
সংসদে এ দিন জাতীয় পার্টির সালমা ইসলাম ঋণখেলাপি ও অর্থ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পক্ষে সোচ্চার হন।
তিনি বলেন, “ঋণখেলাপি ও নানাভাবে ব্যাংকের টাকা আত্মসাৎকারীদের বিরুদ্ধে সংসদে এ যাবৎ কম কথা হয়নি। বলতে বলতে সবাই ক্লান্ত হলেও খেলাপিরা ক্লান্ত হয়নি। মাঝেমধ্যে চুনোপুঁটিদের শাস্তি হলেও প্রভাবশালী খেলাপিরা আছেন বহাল তবিয়তে।”
ব্যাংক খেকোদের শাস্তি দিতে ‘রাঘববোয়াল ঋণখেলাপি’ এবং অর্থ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে যৌথ অভিযান পরিচালনার দাবি তোলেন সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান সালমা ইসলাম।
ডলার সংকটের জন্য ‘লাগামহীন’ দুর্নীতি ও অর্থ পাচারকে দায়ী করেন তিনি বলেন, “বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আমদানিনির্ভর দেশ হওয়ার কারণে ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় ভীষণ বিপদে পড়ে গেছি আমরা।”
বিদেশি ষড়যন্ত্র নিয়ে নিজের শঙ্কা তুলে ধরে সালমা ইসলাম বলেন, সামনে তিস্তা প্রকল্প নিয়ে বেশ কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে। অনেকের নজর এখন তিস্তার দিকে। কেউ চায় অস্ত্র বেচতে, কেউ চায় তিস্তা প্রকল্পের পুরো নিয়ন্ত্রণ, কেউ আবার বড় ঋণের ঝুলি নিয়ে বসে আছে। কিন্তু তারাও এবার নিজেদের স্বার্থ ষোল আনা উসুল না করে ঋণ অনুমোদন করবে না।
জাতীয় পার্টির আরেক সংসদ সদস্য গোলাম কিবরিয়া বলেন, আর্থিক খাতে সংকট, অর্থপাচার, দুর্নীতি এসবের জন্য দায়ীদের বিরুদ্দে ব্যবস্থা নিতে হবে। দেশের প্রধান সমস্যা এখন দুর্নীতি। এর ব্যাপকতায় অনেক অফিসে সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছে। দুর্নীতি বন্ধ করতে না পারলে উন্নয়নের ধারা ব্যাহত হবে।
“এখন আরেকটি সমস্যা কিশোর গ্যাং। এলাকায় তা মহামারীর আকার ধারণ করেছে।”
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ অগ্রাধিকার পেয়েছে: তথ্য প্রতিমন্ত্রী
তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলেন, মূল্যস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণে আনা বাজেটে সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। কোভিড-১৯ ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাবে মূল্য বেড়ে যাওয়ার কারণে পুরো বিশ্বে মূল্যস্ফীতির চরম অবস্থা তৈরি হয়। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। সাধারণ মানুষের কষ্ট লাঘবের জন্য এক বছরের মধ্যে মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনার সব প্রচেষ্টার প্রতিফলন বাজেটে আছে। এবার সংকোচনমূলক বাজেট করা হয়েছে।
এবারের বাজেটকে ‘জনবান্ধব বাজেট’ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা খাতে সাধারণ মানুষের জন্য বাজেট বৃদ্ধি, শিক্ষায় বৃদ্ধি করা হয়েছে্, সাধারণ মানুষ নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। যাদের ইনকাম যত বেশি তাদের কর বেশি করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
বিরোধীদের সমালোচনার জবাবে তথ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, “অনেকে সমালোচনা করেন। বলেন, ‘ঋণ করে ঘি খাওয়া’র মত অবস্থা। ঋণ করার প্রথা বিশ্বজুড়েই আছে। তবে তা সহনীয় পর্যায়ে রাখতে হয়। বাংলাদেশে সেটা জিডিপির ৫ শতাংশের নিচে আছে। এটা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড।
“২০০৮-২০০৯ সালে ঋণ ছিল ৩৮ বিলিয়ন ডলার, এখন হয়েছে ১৪৯ বিলিয়ন ডলার। এটা অর্ধেক সত্য। ২০০৮-০৯ সালে জিডিপির পরিমাণ ছিল ১১০ বিলিয়ন ডলার। আর এখন ৪২০ বিলিয়ন ডলার। শুধু ঋণ দিয়ে নয়, সম্পদ জিডিপি দিয়ে মাপতে হবে “
তিনি বলেন, “বিরোধী দল বলছে খেলাপি ঋণ ২০০৬ সালে ছিল ২০ হাজার কোটি টাকা। এখন সেটা ১ লাখ ৮২ হাজার কোটি টাকা। এটি ঠিক। কিন্তু ২০০৬ সালে যে পরিমাণ ঋণ দেওয়া হয়েছিল, খেলাপি ছিল ১৩ শতাংশের বেশি। আর এখন তা ১১ শতাংশের নিচে। সুতরাং খেলাপি ঋণ কমেছে।”