Published : 01 May 2025, 12:37 AM
ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করে এক প্ল্যাটফরম থেকে পর্যায়ক্রমে সব নাগরিক সেবা দিতে চায় সরকার।
সেজন্য উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ থেকে শুরু করে ‘সহনীয় সুদে’ ঋণ দেওয়ার কথাও ভাবা হচ্ছে। অধ্যাপক ইউনূসের 'ভিলেজ ফোন লেডি' ধারণাটির আদলে উদ্যোক্তাদের ‘সিটিজেন সার্ভিস পার্সন’ বা 'সিটিজেন সার্ভিস লেডি' হিসেবে গড়ে তোলার চিন্তা করা হচ্ছে। আর সেই লক্ষ্যে বৃহস্পতিবার থেকে উদ্যোক্তাদের আবেদন করতে বলা হয়েছে।
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে ‘নাগরিক সেবা’ কেন্দ্র ধারণাটি বাস্তবায়ন হলে, কোনো সরকারি সেবার জন্য আবেদনের পরে একজন নাগরিককে ছাপানো কাগজ নিয়ে কোনো সরকারি বা আধা বেসরকারি অফিসে যেতে হবে না। বরং সেবা কেন্দ্রের ওয়েবসাইট থেকে অনলাইনে জমা দেয়া অবেদন সরাসরি ট্র্যাকিং নম্বরসহ সংশ্লিষ্ট অফিসে পৌঁছে দেওয়া হবে।
বুধবার বিকেলে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের ভেরিফায়েড ফেইসবুক পেইজে এক পোস্টে এসব তথ্য জানানো হয়।
এর আগে প্রধান উপদেষ্টার আইসিটি বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব নিজের ফেইসবুক পেইজে পোস্ট দিয়ে বিষয়টি জানান।
তিনি লেখেন, “এক ঠিকানায় সকল নাগরিক সেবা পৌঁছে দিতে আসছে নতুন সেবা আউটলেট ‘নাগরিক সেবা বাংলাদেশ’, সংক্ষেপে ‘নাগরিক সেবা’। বাংলাদেশের সব শহরে, সব গ্রামে, সব ওয়ার্ডে। সেবাদাতা হিসেবে উদ্যোক্তারা আবেদন করতে পারবেন আগামীকাল থেকেই।”
পরে বিষয়টি নিয়ে তথ্য-প্রযুক্তি বিভাগে যোগাযোগ করা হলে কর্মকর্তারা বলেন, একটু পরে বিষয়টি বিষদভাবে জানাবেন উপদেষ্টা নিজেই। পরে বিকেলে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের ফেইসবুক পেইজে বিস্তারিত পোস্ট করা হয়।
সেখানে বলা হয়েছে, “এক ঠিকানায় সকল নাগরিক সেবা পৌঁছে দিতে প্রধান উপদেষ্টা কার্যালয়ের উদ্যোগে আসছে নতুন সেবা আউটলেট ‘নাগরিক সেবা বাংলাদেশ’ যার সংক্ষেপিত রূপ ‘নাগরিক সেবা’। সেবাদাতা হিসেবে ব্যক্তি উদ্যোক্তারা আবেদন করতে পারবেন ১ মে থেকেই। চলমান ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারগুলোকেও এখানে অন্তর্ভুক্ত করে নেওয়া হবে। আগ্রহী উদ্যোক্তাদের www.nagoriksheba.gov.bd ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আবেদনের অনুরোধ করা যাচ্ছে।”
এর মাধ্যমে সরকারি সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছানোর উদ্যোগের অংশ হিসেবে প্রতিটি মন্ত্রণালয়কে অন্তত দুটি গুরুত্বপূর্ণ সেবা যা নাগরিক সেবা কেন্দ্রে (কিয়স্ক) এখনই নেওয়া যাবে, তার তালিকা দিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
ফয়েজ আহমদ তৈয়্যবকে উদ্ধৃত করে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের পোস্টে বলা হয়, “শুরুতে প্রায় একশ সেবা দিয়ে এই কার্যক্রম শুরু হবে। ন্যাশনাল ইন্টার-অপারেবিলিটি ফ্রেমওয়ার্ক এবং ডেটা গভর্নেন্স কাঠামো গঠন ও কার্যকরের পাশাপাশি, ডিজিটাল ট্রান্সফর্মেশনে গতি বাড়বে এই উদ্যোগ।”
সেখানে বলা হয়, নাগরিক সেবা কেন্দ্রে আবেদনের পরে নাগরিকে আবেদনের জন্য 'প্রিন্টেড পেপার' নিয়ে কোনো সরকারি বা আধা বেসরকারি অফিসে যেতে হবে না। বরং সেবা কেন্দ্রের সাইট থেকে অনলাইনে জমা দেওয়া অবেদন সরাসরি ট্র্যাকিং নাম্বারসহ সংশ্লিষ্ট অফিসে পৌঁছে দেয়া হবে। এর পেছনে কাজ করবে একটি শক্তিশালী ও নিরাপদ সার্ভিস বাস (নেটওয়ার্ক)। ন্যাশনাল সার্ভিস বাস মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে ইন্টার-অপারেবিলিটি নিশ্চিত করবে।
এজন্য নতুন একটি কর্তৃপক্ষ গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে, যার নাম হবে ‘ডেটা গভর্নেন্স এন্ড ইন্টার-অপারেবিলিটি অথরিটি’। এই কর্তৃপক্ষ সেবা কেন্দ্রের মাধ্যমে তথ্য লেনদেনের মান, উপযোগিতা, গোপনীয়তা এবং সাইবার সিকিউরিটি দেখভাল করবে।
এই নাগরিক সেবার জন্য সেবাগ্রহীতারা সরাসরি ঢুকতে পারেন এরকম একটি ওয়েব সাইট তৈরি করা হবে এবং সাথে থাকবে সুপার অ্যাপ। এই পোর্টাল ও ওয়েবে থাকবে সকল সেবার সিঙ্গেল গেইটওয়ে, বিলিং এগ্রিগেটর এবং পেমেন্ট গেইটওয়ে।
'নাগরিক সেবা' কেন্দ্রের উদ্যোক্তাদের সুনির্দিষ্ট ব্র্যান্ডিং, ইউনিফর্ম, পরিচয় শনাক্তকারী কার্ড এবং সরকার থেকে দেওয়া সনদ থাকবে জানিয়ে ফয়েজ আহমদ বলেন, 'নাগরিক সেবা' কেন্দ্রের জন্য সরকার ইন্টারনেট সেবা দেওয়া কোম্পানিগুলোকে উচ্চগতি ও উচ্চ মানের ব্রডব্যান্ড ও মোবাইল ইন্টারনেট সেবার নির্দেশনা জারি করবে। থাকবে নির্দিষ্ট প্রাইস প্ল্যান (মূল্য পরিকল্পনা)।
পাশাপাশি প্রশিক্ষণ এবং যাচাই-বাছাই পরীক্ষায় নির্বাচিত উদ্যোক্তাদের দেওয়া সনদের বিপরীতে অন্তত চারটি কম্পিউটার, আসবাবপত্র, ব্র্যান্ডিং এর অনুকূলে দোকান সাজানোসহ আনুষঙ্গিক খরচ যোগাতে সহনীয় সুদের ফান্ডিং এর জন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা ব্যাংক আলোচনা করবে।
তবে প্রাথমিকভাবে নাগরিক সেবা কেন্দ্রে উদ্বুদ্ধ এবং বিনিয়োগ সহজ করতে জেলা-উপজেলা-ইউনিয়নের সরকারি, আধাসরকারি অফিস, পোস্ট অফিস, বিটিসিএল অফিস ইত্যাদিতে ‘কো-ওয়ার্কিং স্পেস’ বা একত্রে কাজের সুযোগ তৈরির বিষয়টি সরকার বিবেচনায় নেবে।
ফয়েজ আহমদকে উদ্ধৃত করে পোস্টে বলা হয়, “সরকার জনসেবামুখী বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যকে সামনে রেখে এই উদ্যোগ গ্রহণ করছে। এটি একটি নতুন প্রজন্মের সরকারি সেবা প্ল্যাটফর্ম, যার মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ সব জায়গার মানুষ সহজেই সরকারি অফিসে না এসেই বিভিন্ন সরকারি সেবা নিতে পারবে।
“বাংলাদেশে অসংখ্য নাগরিকের কাছে এখনো ডিজিটাল ডিভাইস নেই, যাদের পক্ষে অনলাইনে সেবা নেওয়া সম্ভব না তাদেরকে সরাসরি সরকারি অফিসে এসেই সেবা নিতে হয়। 'নাগরিক সেবা'র মাধ্যমে তারাও সহজেই নিজ নিজ এলাকা থেকেই সরকারি সেবা নিতে পারবেন।”
পোস্টে বলা হয়, “প্রধান উপদেষ্টার মতে এই উদ্যোগ শুধু জনগণের সেবা গ্রহণকে সহজ করবে না, বরং স্থানীয় পর্যায়ে কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ তৈরি করবে এবং উদ্যোক্তাদের জন্য একটি লাভজনক সামাজিক ব্যবসার দিগন্ত খুলে দেবে “
শুরুতে দোকান কিংবা কিয়স্কের মাধ্যমে সেবা দেওয়া হবে, পরবর্তীতে যে কোনো ব্যক্তি ঘরে বসেই এজেন্টশিপ নিয়ে ডিজিটাল নাগরিক সেবা দিতে পারবেন।
“এই পর্যায়ে প্রফেসর মূহাম্মদ ইউনূসের 'ভিলেজ ফোন লেডি' ধারণাটি ‘সিটিজেন সার্ভিস পার্সন’ বা 'সিটিজেন সার্ভিস লেডি'তে নতুন রূপান্তরিত হবে,” বলা হয়েছে পোস্টে।
নাগরিকসেবা এজেন্ট হিসেবে উদ্যোক্তাদের আবেদন প্রক্রিয়াটিও সহজ এবং সম্পূর্ণ ডিজিটাল জানিযে ফয়েজ আহমদ বলেন, ঘরে বসেই উদ্যোক্তারা এই আবেদন করতে পারবেন।
এ উদ্যোগের আওতায় যেসব সেবা–
● নাগরিক পরিচয় পত্র, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন বিষয়ক আবেদন
● পরিচয়পত্র সংশোধন ও পুনর্মুদ্রণ
● ভূমি সংক্রান্ত তথ্য ও আবেদন, সিঙ্গেল ল্যান্ড সার্ভিস গেটওয়ে
● নতুন পাসপোর্টের আবেদন, পাসপোর্ট নবায়ন
● অনলাইন জিডি
● আয়কর রিটার্ন আবেদন
● ভ্যাট চালান জমাদান আবেদন
● ট্রেড লাইসেন্স ও ট্রেড মার্ক আবেদন
● বিভিন্ন সামাজিক সুরক্ষা ভাতা ও অনুদানের আবেদন
● বিদ্যুৎ পানি গ্যাস সহ সকল ইউটিলিটি
● ড্রাইভিং লাইসেন্স, যানবাহন রেজিস্ট্রেশন নবায়ন
● শিক্ষা স্বাস্থ্য ও কৃষি সেবা
● ড্রাইভিং লাইসেন্স, যানবাহন রেজিস্ট্রেশন নবায়ন
● অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ডিজিটাল সেবা।