"কবরগুলোতে অন্যান্য বছর ফুলের ডালার স্তূপ পড়ে যেত, কিন্তু এবার কবরগুলোতে ফুলই পড়েনি।”
Published : 15 Aug 2024, 02:03 PM
ঢাকার বনানী কবরস্থানের প্রধান ফটক দিয়ে ঢুকতেই হাতের বাঁ পাশে কবরের দীর্ঘ সারি চোখে পড়ে। সেখানে একটি ফলকে ১৮ জনের নাম ও বয়স লেখা। এই সারিতে শায়িত আছেন ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট নিহত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের সদস্য এবং স্বজনরা। ক্ষমতার পালাবদলে শোকাবহ এই দিনে জাতির পিতার পরিবারের সদস্যদের কবরে শ্রদ্ধা জানাতে নেই কোনো আনুষ্ঠানিক আয়োজন।
বৃহস্পতিবার বেলা ১১ টার দিকে অল্প কয়েকজন মানুষ এই কবরস্থানে এসে মোনাজাত করে চলে যান। সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের সঙ্গে তারা কেউ কোনো কথা বলেননি।
এরপর আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকদেরর কাউকে কাউকে বিচ্ছিন্নভাবে এসে কবর জিয়ারত করতে দেখা যায়। আবার কেউ এসে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়ে চলে গেছেন চুপচাপ।
বঙ্গবন্ধুকে টুঙ্গিপাড়ায় দাফন করা হলেও এই কবরস্থানে তার স্ত্রী ফজিলাতুন নেছা মুজিব, তিন ছেলে শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রাসেল, শেখ কামালের স্ত্রী সুলতানা কামাল, শেখ জামালের স্ত্রী রোজী জামাল, বঙ্গবন্ধুর ছোট ভাই শেখ নাসেরসহ পরিবারের ১৮ সদস্যকে দাফন করা হয় ওই সময়।
গত দেড় দশকে প্রতি বছরে এই দিনে বনানী কবরস্থানে বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা পরিবারের সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। বেশিরভাগ সময়ে সঙ্গে থাকতেন তার ছোট বোন শেখ রেহানা এবং সরকারের মন্ত্রিপরিষদের সদস্য এবং আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। ফুলে ফুলে ঢেকে যেত প্রতিটি কবর।
কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারের পতন এবং শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর পরিস্থিতি বদলে গেছে। আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতা রয়েছেন আত্মগোপনে।
কবরস্থানে পরিচ্ছন্নতার কাজ করা খোরশেদ আলম বলেন, "অন্য বছর এই দিনে মানুষের ভিড়ে পা ফেলার জায়গা পাওয়া যেত না। কবরস্থানের বাইরে গাড়ির পার্ক করার জায়গা থাকত না, ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত হাজার হাজার নেতা কর্মীরা এখানে আসতেন।
"কিন্তু আজ কোনো মানুষের ভিড় নাই। দুয়েকজন বিচ্ছিন্নভাবে এসে কবর জিয়ারত করে চলে যাচ্ছেন।"
তিনি বলেন, "কবরগুলোতে অন্যান্য বছর ফুলের ডালার স্তূপ পড়ে যেত, কিন্তু এবার কবরগুলোতে ফুলই পড়েনি।”
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ ১৫ অগাস্টের সাধারণ ছুটি বাতিল করেছে। তার মধ্যেই ভিন্ন এক বাস্তবতায় ভিন্ন আবহে ১৫ অগাস্ট পার করছে আওয়ামী লীগ।
ভারতে অবস্থানকারী শেখ হাসিনা নেতাকর্মীদেরকে দিবসটি পালনে আহ্বান জানিয়েছিলেন, নেতাকর্মীরাও সামাজিক মাধ্যমে ধানমন্ডি ৩২ অভিমুখে যাত্রার ঘোষণা দিয়েছিল।
কিন্তু সকাল থেকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরও দখলে করে রেখেছে সরকারের পতন ঘটানো বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীরা। বঙ্গবন্ধুর বাড়ির সামনে কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দেওয়ার জন্য বা আওয়ামী লীগ পরিচয়ে কেউ এলে তাকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কয়েকজন মারধরের শিকার হয়েছেন বলেও অভিযোগ এসেছে।