জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এক বিবৃতিতে এ ঘোষণা দিয়েছেন।
Published : 06 Aug 2023, 07:03 PM
জাতিসংঘের নবগঠিত বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা বোর্ডে সদস্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ (আইইউবি) এর অধ্যাপক পরিবেশ বিজ্ঞানী ড. সালিমুল হক।
বিশ্বের প্রভাবশালী সহস্র জলবায়ু বিজ্ঞানীদের তালিকায় থাকা ৭১ বছর বয়সী এই বিজ্ঞানীকে ওই বোর্ডে অর্ন্তভুক্ত করার কথা গত বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে ঘোষণা দেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।
রোববার আইইউবি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।
অধ্যাপক সালিমুল আগে থেকেই জলবায়ু পরিবর্তনের নানান বিষয় নিয়ে কাজ করতে জাতিসংঘের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। তিনি জাতিসংঘভুক্ত সংস্থা ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (আইপিসিসি) এর সঙ্গে যুক্ত আছেন।
নবগঠিত ওই বোর্ডে জাতিসংঘের তিনজন শীর্ষ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আছেন অভ্যন্তরীণ সদস্য হিসেবে। আর বাইরের সদস্য হিসেবে আইইউবি’র ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইক্যাড) এর পরিচালক ও এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ড. সালিমুল হকসহ সাতজন।
বাকি ছয় সদস্য হলেন- কানাডার মন্ট্রিয়ল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইয়োশুয়া বেনজিও, আর্জেন্টিনার ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব কর্ডোবার অধ্যাপক স্যান্ড্রা ডিয়াজ, যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ফেই-ফেই লি, যুক্তরাষ্ট্রের এমআইটির অধ্যাপক অ্যালান লাইটম্যান, দক্ষিণ আফ্রিকার স্টেলেনবশ ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক থুলি ম্যান্ডনসেলা ও যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিসিনের অধ্যাপক টমাস সি সুডহফ।
তাদের সকলে জলবায়ু পরিবর্তন ও উন্নয়ন, কম্পিউটার বিজ্ঞান, বাস্তুসংস্থান, মানব-কেন্দ্রিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, মানবিকী, আইন, আণবিক ও কোষীয় শারীরতত্ত্বসহ বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
জাতিসংঘ মহাসচিব এ বোর্ড গঠনের বিষয়ে বলেন, “তথ্য ও উপাত্ত্বের একটি নির্ভরযোগ্য উৎস হিসেবে জাতিসংঘকে প্রতিষ্ঠা করতে সহায়তা করবে এ বোর্ড। এছাড়াও জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপনা পরিষদকে বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দেবেন এসব বিশেষজ্ঞরা।”
অধ্যাপক সালিমুল বলেন, “জাতিসংঘের বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা বোর্ডের সঙ্গে যুক্ত হতে পারাটা আমার জন্য বিরাট সম্মানের। জলবায়ু বিজ্ঞানকে এগিয়ে নিতে এবং পৃথিবী এখন যেসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে সেগুলোর টেকসই সমাধান খুঁজে বের করার ক্ষেত্রে এই সম্মান আমাকে আরও অনেক বেশি উৎসাহ প্রদান করবে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আমরা সবাই মিলে একটি টেকসই ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারব।”
অধ্যাপক সালিমুলকে অভিনন্দন জানিয়ে আইইউবি’র উপাচার্য অধ্যাপক তানভীর হাসান বলেন, “জাতিসংঘের বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা বোর্ডে অন্তর্ভুক্ত হওয়াটা জলবায়ু বিষয়ে তার জ্ঞান, নিষ্ঠা ও পরিশ্রমের একটি বড় স্বীকৃতি। ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট এর পরিচালক হিসেবে আইইউবিতে বিভিন্ন সমস্যার টেকসই সমাধান নিরূপণে তিনি বড় চালিকাশক্তি। আইইউবি পরিবারের একজন গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে তাকে পেয়ে আমরা গর্বিত।”
মূলত নবগঠিত এ বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা বোর্ড হাইব্রিড মডেলে কাজ করবে। বিশ্বে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত যেসব আবিষ্কার হচ্ছে, সে বিষয়ে জাতিসংঘের শীর্ষ কর্মকর্তাদের ওয়াকিবহাল করা হবে এই বোর্ডের অন্যতম প্রধান কাজ।
এছাড়াও কীভাবে নতুন আবিষ্কারগুলোকে মানুষের কল্যাণে কাজে লাগানো যায় সেই বিষয়ে জাতিসংঘকে পরামর্শ দেবেন তারা। বিজ্ঞানীদের যেসব নেটওয়ার্ক বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে আছে সেগুলোর একটি বৈশ্বিক কেন্দ্র হিসেবে কাজ করবে এ বোর্ড।
বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর জলবায়ু পরিবর্তন এবং উন্নয়ন নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন ড. সালিমুল।
২০২১ সালে বিশ্বের প্রভাবশালী সহস্র জলবায়ু বিজ্ঞানীদের তালিকায় স্থান পান সালিমুল হক। পরের বছর যুক্তরাজ্যের অর্ডার অব দ্য ব্রিটিশ অ্যাম্পায়ার (ওবিই) খেতাবের তালিকায় এসেছে বাংলাদেশের এ জলবায়ু বিজ্ঞানীর নাম।
২০০১ সাল থেকে ‘ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’ (আইআইইডি) এর ‘ক্লাইমেট চেইঞ্জ প্রোগ্রাম’ এ যুক্ত রয়েছেন তিনি।
ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম (সিভিএফ) ও গ্লোবাল সেন্টার অন এডাপটেশন (জিসিএ) এর উপদেষ্টাদের অন্যতম ৭১ বছর বয়সী এ বিজ্ঞানী।
লন্ডনের ইমপেরিয়াল কলেজ থেকে ১৯৭৫ সালে বিএসসি (সম্মান) পাস করেন সালিমুল। ১৯৭৯ সালে একই কলেজ থেকে তিনি উদ্ভিদ বিদ্যা নিয়ে পিএইচডি করেন।
কপ২৬: যুদ্ধ শেষ হয়ে যায়নি, বলছেন সালিমুল হক
সহস্র জলবায়ু বিজ্ঞানীর তালিকায় অধ্যাপক সালিমুল
অধ্যাপক সালিমুলকে নর্থামব্রিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক উপাধি