কপ২৬: যুদ্ধ শেষ হয়ে যায়নি, বলছেন সালিমুল হক

স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনের শেষ মুহূর্তের দর কষাকষিতে একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর চেষ্টায় চাপ বাড়ছে শিল্পোন্নত দেশগুলোর ওপর। 

মঈনুল হক চৌধুরীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Nov 2021, 03:50 PM
Updated : 12 Nov 2021, 08:06 PM

প্রায় ২০০ দেশের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে এ সম্মেলনে চুক্তির যে প্রাথমিক খসড়াটি তৈরি হয়েছিল তার বদলে তৈরি হয়েছে নতুন একটি খসড়া।

বৃহস্পতিবার রাতভর রুদ্ধদ্বার আলোচনার পর সেই খসড়া প্রকাশ করা হয়েছে। তাতে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে সুর নরম করা হলেও কার্বন গ্যাস নির্গমনের মাত্রা বড় আকারে কমিয়ে আনার লক্ষ্য ঠিক করতে জোর দেওয়া হয়েছে।

এবারের সম্মেলনে ৪৬টি দেশ নিয়ে গঠিত এলডিসি গ্রুপের উপদেষ্টা বাংলাদেশের জলবায়ু বিজ্ঞানী অধ্যাপক সালিমুল হক গ্লাসগো থেকে টেলিফোনে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন,  “আমরা যা চাই, তারা কিছুই দিতে চায় না। সবকিছুতেই তারা আটকাতে চায়। লক্ষমাত্রা পূরণে প্রতিশ্রুতি আদায়ের জন্য  শেষ সময় পযন্ত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাব আমরা।”

এ আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে জলবায়ু তহবিলের জন্য উন্নত দেশগুলোর প্রতিশ্রুত অর্থ ছাড়ের বিষয়টি। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যে ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে, উন্নত দেশগুলোকে সেই ব্যয় বহনের দাবি জানিয়ে আসছে উন্নয়নশীল দেশগুলো। 

বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি প্রাক-শিল্পায়ন যুগের চেয়ে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা ঘোষণার প্রত্যাশা নিয়ে ৩১ অক্টোবর শুরু হয়েছিল এবারের জলবায়ু সম্মেলন কপ২৬। সেই লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ হওয়ার শঙ্কা নিয়েই গ্লাসগোতে চলছে শেষ দিনের আলোচনা।

শেষ সময়ে সমঝোতায় পৌঁছানোর সম্ভাবনা কতটা- এমন প্রশ্নে সালিমুল হক বলেন, “আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাব। যুদ্ধ শেষ হয়ে যায়নি। আমরা শেষ করব না এখানে। অত সহজে আমরা মানব না।”

বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর জলবায়ু পরিবর্তন এবং উন্নয়ন নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন ড. সালিমুল হক। তিনি জাতিসংঘের  সংস্থা ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেইঞ্জ (আইপিসিসি) এর সাথেও যুক্ত।

উন্নত দেশগুলোকে একটি চুক্তিতে আনার দর কষাকষিকে একটি ‘যুদ্ধ’ হিসেবে বর্ণনা করে তিনি বলেন, “আমরা সব সময় আশাবাদী যুদ্ধ শেষ না হওয়া পর্যন্ত। যুদ্ধ এখনও শেষ হয়নি। এটাকে শেষ বলবেন না আপনারা।”

স্বল্পোন্নত দেশগুলোর চাওয়া

>> কার্বন নিঃসরণ কমাতে ও জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে সহায়তার অংশ হিসেবে প্রতিবছর ১০০ বিলিয়ন ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি পূরণ

>> ২০৫০ সালের অনেক আগেই কার্বন নিরপেক্ষ দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণে ধনী দেশগুলোর ঐকমত্য; এজন্য প্রয়োজনে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর মতো বড় নিঃসরণকারী দেশগুলোর জন্য লক্ষ্য সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া

>> জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি অথবা ঘন ঘন বন্যার মতো দুর্যোগে স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে ব্যাপক প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি স্বীকার করে নেওয়া

>> বিভিন্ন দেশ কীভাবে আগের চুক্তিগুলো বাস্তবায়ন করবে, তার নিয়মকানুন চূড়ান্ত করা

১৯৯৫ থেকে সবগুলো জলবায়ু সম্মেলনে অংশ নেওয়া এ জলবায়ু বিজ্ঞানী বিভিন্ন সময়ে নেগোশিয়েটরের ভূমিকায় ছিলেন। কার্বন নিঃসরণ কমাতে সহযোগিতা বাড়াতে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সম্মত হওয়ার বিষয়টিকে তিনি এবারের সম্মেলনের একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হিসেবে দেখছেন।

“চীন এবং যুক্তরাষ্ট্র দুটোই বড় পল্যুটার। দুজন যদি একসঙ্গে কাজ করে, কাজ করতে রাজি হয়, এটা ভালো জিনিস। কিন্তু যে প্রেসরিলিজ বা এনাউন্সমেন্ট যেটা করেছে, ওটাতে কোনো ডিটেইলস নেই। কতটা বাস্তবে হবে, কী রয়েছে তা আমরা জানি না। একসাথে কাজ করবে এটা ভালো।”

তিনি জানান, গ্লাসগো সম্মেলনে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে প্রচুর বক্তব্য এসেছে। ডেলিগেটস ও নেটোশিয়েটররা বিভিন্ন ফোরামে কথা বলেছেন। তাতে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ ভালোভাবেই আসছে।

“মূল জায়গায়টা হল নেগোসিয়শেন। বিভিন্ন সরকারের কাছ থেকে আমরা কী আদায় করতে পারি। আদায় করা অত সহজ না। যারা ধনী দেশ, তারা অত সহজে দেবে না। এটাই হচ্ছে যুদ্ধ।”

যে পাঁচ বিশ্বনেতাকে এবারের জলবায়ু সম্মেলনের ‘গুরুত্বপূর্ণ কণ্ঠস্বর’ বলা হচ্ছে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের একজন। সম্মেলনে দেওয়া বক্তৃতায় জলবায়ু উদ্বুস্তদের দায়িত্ব বিশ্বকে ভাগ করে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেইঞ্জ অ্যান্ড ডেভলপমেন্টের পরিচালক, ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের (আইইউবি) অধ্যাপক সালিমুল হক বলেন,“আমাদের প্রধানমন্ত্রী পাঁচ জনের অন্যতম। এটা একটা ওপিনিয়ন; কিন্তু আমি এটার সঙ্গে একমত। উনি উচ্চ পর্যায়ে রয়েছেন কয়েকটি কারণে।

“উনি যে শুধু বাংলাদেশের পক্ষে কথা বলছেন, তা নয়। উনি ৫৫ দেশের পক্ষে কথা বলছেন। ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের যে দেশগুলো রয়েছে তাদের নেতৃত্ব  দিচ্ছেন। অতএব, শুধু একটি দেশের কণ্ঠ নয়, ৫৫টি দেশের কণ্ঠ তিনি।”

আরও পড়ুন