যুদ্ধাপরাধ: ভাগ্নের বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার ফাঁসির আসামি মতিন

২০১৬ সালে তার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হওয়ার পরপরই পলাতক জীবন যাপন শুরু করে মতিন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 April 2023, 01:45 PM
Updated : 24 April 2023, 01:45 PM

একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এক পলাতক আসামিকে পরোয়ানা জারির সাত বছর পর গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ওই আসামির নাম মো. আব্দুল মতিন (৭০)।একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ২০২২ সালে তাকেসহ তিনজনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। তবে তিনি সাত বছর পলাতক ছিলেন।

রোববার রাতে সিলেটের গোলাপগঞ্জে ভাগ্নের বাড়ি থেকে র‌্যাব-৩ এর একটি দল তাকে গ্রেপ্তার করে বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

মতিন, তার ভাই আব্দুল আজিজ ওরফে হাবুল এবং আব্দুল মান্নান ওরফে মনাইয়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে তদন্ত শুরু হয় ২০১৪ সালে। তদন্ত শেষ হয় ২০১৬ সালের ১৪ নভেম্বর। এর আগে একই বছরের ২৯ ফেব্রুয়ারি তিনজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে ট্রাইব্যুনাল।

পরোয়ানা জারির পরের দিন আজিজ ও মান্নানকে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তারা বর্তমানে কাশিমপুর কারাগারে রয়েছে।

তবে গ্রেপ্তারের আগেই আব্দুল মতিন আত্মগোপনে চলে যায়। তাকে পলাতক রেখেই ট্রাইব্যুনালে বিচার শুরু হয়।

আসামিদের বিরুদ্ধে আনা যুদ্ধাপরাধের পাঁচটি অভিযোগ প্রমাণিত হলে ২০২২ সালের ১৯ মে তিনজনকে মৃত্যুদণ্ড দেয় আদালত।

র‌্যাব বলছে, ২০১৬ সালে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হওয়ার পর পলাতক জীবন যাপন শুরু করে মতিন। তিনি মৌলভীবাজারের বড়লেখার পাখিয়ালা গ্রামের বাড়ি ছেড়ে সিলেটের গোলাপগঞ্জে তার ভাগ্নের বাড়িতে থাকতে শুরু করেন।

Also Read: যুদ্ধাপরাধ: মৌলভীবাজারের ৩ ‘রাজাকারের’ প্রাণদণ্ড

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বড়লেখায় মতিন নিজেকে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা বলে পরিচয় দিতেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকে শুরু করে পলাতক জীবন শুরু করার আগে পর্যন্ত জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন তিনি।

মতিনসহ তার ভাই আজিজ ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ভারতে মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ নেন। প্রশিক্ষণ শেষে পালিয়ে বড়লেখায় গিয়ে তারা হানাদার বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেন এবং রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেন। তখন তাদের সাথে যোগ দেন মান্নান।

মতিন বড়লেখা থানা জামায়াত ইসলামী এবং ১৯৭১ সালে গঠিত ইসলামী ছাত্র সংঘের সক্রিয় সদস্য ছিলেন বলে র‌্যাবের বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।

সেখানে বলা হয়, মতিনসহ রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা মিলে মৌলভীবাজার এলাকায় হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, নির্যাতন, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণসহ মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ড চালাতেন।

আব্দুল মতিনসহ আজিজ ও মান্নান এবং তাদের সহযোগীরা মৌলভীবাজারের বড়লেখা থানার ঘোলসা গ্রামের ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির নেতা হরেন্দ্রলাল হরি দাস, মতিলাল দাস, নগেন্দ্র কুমার দাস ও শ্রীনিবাস দাসকে অপহরণ করেন।

তাদেরকে তিনদিন বড়লেখা সিও অফিস রাজাকার ক্যাম্পে আটকে রেখে অমানবিক নির্যাতন করা হয়। পরে জুড়ি বাজার বধ্যভূমিতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেই বধ্যভূমিতে হরেন্দ্রলাল, মতিলাল ও নগেন্দ্রকে হত্যা করা হয়। এ সময় শ্রীনিবাস দাস নির্যাতিত অবস্থায় কোনোক্রমে পালিয়ে কয়েকদিন পর বাড়ি ফেরেন।

১৯৭১ সালের অক্টোবরের শেষের দিকে মতিনসহ তার দুই ভাইয়ের নেতৃত্বে রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা বড়লেখা থানার কেছরিগুল গ্রামের বাসিন্দা সাফিয়া খাতুন ও আব্দুল খালেককে অপহরণ করে কেরামত নগর টি-গার্ডেন রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে যায়।

ওই ক্যাম্পে আসামিরা সাফিয়া খাতুনকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করে। পরবর্তীতে তারা তাকে প্রথমে শাহবাজপুর রাজাকার ক্যাম্প এবং কিছুদিন পর বড়লেখা সিও অফিস রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে যায়। সেখানেও তাকে বারবার সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করা হয়।

পরে ৬ ডিসেম্বর বড়লেখা হানাদারমুক্ত হলে মুক্তিযোদ্ধারা সাফিয়াকে সিও অফিসের বাংকার থেকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে।

এর আগে ১৩ নভেম্বর মতিনসহ রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা বড়লেখা থানার পাখিয়ালা গ্রামে মুক্তিযোদ্ধা মঈন কমান্ডারের বসতবাড়িতে সশস্ত্র হামলা করে ব্যাপক লুটপাট চালায় বলে বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে র‌্যাব।

বীর মুক্তিযোদ্ধা মঈনের বাবা বছির উদ্দিন, চাচা নেছার আলী, ভাই আইয়ুব আলী ও ভাতিজা হারিছ আলীকে অপহরণ করে বড়লেখা সিও অফিস রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে যায়। সেখানে তাদেরকে কিছুদিন আটক রেখে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হয়।

পরবর্তীতে ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর বড়লেখা হানাদারমুক্ত হলে মুক্তিযোদ্ধারা তাদেরও রাজাকার ক্যাম্প থেকে উদ্ধার করেন।