এক ব্যক্তি ১৫ লাখ টাকা দান করেছেন জানিয়ে নুহা-নাবার বাবা আলমগীর বলেছেন, বাকী টাকা হাসপাতাল মওকুফ করে দিয়ে ছাড়পত্র দিয়েছে।
Published : 24 Nov 2024, 08:40 PM
বিশাল অংকের বিলের কারণে হাসপাতালে আটকে থাকা আলাদা হওয়া দুই বোন নুহা ও নাবা অবশেষে বাড়ি ফিরছে।
হাসপাতাল বিলের প্রায় ২২ লাখ টাকার মধ্যে ১৫ লাখ টাকা পরিশোধের পর রোববার ছাড়পত্র পেয়েছে তারা। বাকি টাকা মওকুফ করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
সোমবারই দুই মেয়েকে নিয়ে বাড়ি ফিরবেন বলে জানিয়েছেন তাদের বাবা মো. আলমগীর হোসেন রানা।
মেরুদণ্ড জোড়া লাগানো কুড়িগ্রামের দুই শিশু নুহা-নাবার চিকিৎসা বিনামূল্যে করার কথা ছিল। প্রায় আড়াই বছরের বেশি সময় ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের চিকিৎসা হয়, খরচ দিচ্ছিল হাসপাতাল ।
তবে ছাড়পত্র দেওয়ার আগে শিশু দুটির বাবার হাতে প্রায় ২২ লাখ টাকার বিল ধরিয়ে দেয় হাসপাতাল। ফলে তাদের বাড়ি ফেরা নিয়ে তৈরি হয়েছিল অনিশ্চয়তা।
রোববার বিএসএমএমইউর নিউরোসার্জারি বিভাগ তাদের ছাড়পত্র দেয়। এতে শিশু দুটির ২ বছর ৭ মাস ২০ হাসপাতালবাস শেষ হলো।
২০২২ সালের ৪ এপ্রিল মেরুদণ্ডে জোড়া লাগানো অবস্থায় এই দুই শিশুকে ভর্তি করা হয়েছিল।
নুহা-নাবার বাবা মো. আলমগীর হোসেন রানা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সোমবার সকালে হাসপাতাল ছাড়বেন তারা। পরবর্তী ফলোআপের জন্য এক মাস পর আবার বিএসএমএমইউতে আসতে হবে তাদের।
“আমরা আজ হাসপাতালেই আছি। কাল সকালে বাড়ি চলে যাব। এক মাস পর আবার আসতে বলেছে। ভিসি স্যার বলেছেন, সে সময় ভর্তি-অপারেশন সব ফ্রি করে দেবেন।”
২০২২ সালের ২১ মার্চ কুড়িগ্রাম জেলার কাঁঠালবাড়ীর পরিবহন শ্রমিক মো. আলমগীর হোসেন রানা ও তার স্ত্রী নাসরিনের গর্ভে জন্ম নেয় মেরুদণ্ডে জোড়া লাগানো শিশু নুহা ও নাবা। ওই বছরের এপ্রিল মাসে বিএসএমএমইউ এর সার্জারি অনুষদের ডিন ও নিউরো স্পাইন সার্জন অধ্যাপক মোহাম্মদ হোসেনের অধীনে দুই শিশুকে ভর্তি করা হয়।
২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি তাদের প্রথম ধাপের সফল অস্ত্রপচার করা হয়। এরপর আরও কয়েক ধাপে অস্ত্রোপচার হয় এই দুই শিশুর। চুড়ান্তভাবে তারা আলাদা হয় এ বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি।
দীর্ঘ চিকিৎসা শেষে গত ৭ নভেম্বর এ্ দুটি শিশুকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়ার কথা ছিল। তবে ৫ নভেম্বর হাসপাতালের রেন্ট কালেক্টর অফিস শিশু দুটির বাবাকে কেবিন ভাড়া বাবদ ২১ লাখ ৮৫ হাজার ৫০০ টাকার বিল ধরিয়ে দেয়। এতে বিপাকে পড়ে নুহা-নাবার বাবা-মা।
বিএসএমএমইউর বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরেও বিষয়টি সুরাহা করতে পারেননি তারা। বিএসএমএমইউর কোনো দপ্তরই এর দায় নিতে রাজি হচ্ছিল না।
বিষয়টি নিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়।
বিষয়টি এক ব্যক্তির নজরে এলে তিনি ১৫ লাখ টাকার ব্যবস্থা করেন বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান আলমগীর।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, ওই ব্যক্তি নিজের নাম পরিচয় গোপন রেখেছেন।
“তিনি হাসপাতাল সমাজসেবা কার্যালয়ের মাধ্যমে শনিবার ১৫ লাখ টাকা দিয়েছেন। বাকী টাকা হাসপাতাল মওকুফ করে দিয়ে আজ ছাড়পত্র দিয়েছে।”
রোববার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিএসএমএমইউ জানিয়েছে, নূহা ও নাবার চিকিৎসায় ৫০ লাখ টাকার বেশি খরচ হয়েছে। কেবিন ভাড়া, ওষুধ কেনা, অস্ত্রোপচারের ব্যবহৃত সরঞ্জাম, এ্যানেসথেসিয়া সামগ্রী এবং অস্ত্রোপচারের চার্জ। এরমধ্যে ৩৬ লাখ টাকা বিশ্ববিদ্যালয় বহন করেছে। বাকী টাকা অনুদান হিসেবে পাওয়া গেছে।
রোববার বিকালে শিশু দুটিকে ছাড়পত্র দেওয়ার সময় বিএসএমএমইউ উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক মো. শাহিনুল আলম, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মো. আবুল কালাম আজাদ, উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক মো. মুজিবুর রহমান হাওলাদার, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক নাহরীন আখতার, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মো. নজরুল ইসলাম, পরিচালক (হাসপাতাল) বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মো. রেজাউর রহমান, শিশু সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক একেএম জাহিদ হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
কথা ছিল 'ফ্রি চিকিৎসা' পাবে নুহা-নাবা, এখন কেবিন ভাড়াই ২২ লাখ