“উনি (ট্রাম্প) তো বলেননি যে, বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক ভালো করবেন অথবা খারাপ করবেন- কিছুই বলেন নাই”, বলেন তৌহিদ হোসেন।
Published : 07 Nov 2024, 09:23 PM
যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতার পালাবদলে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডনাল্ড ট্রাম্পের বিজয়ের পর দুদেশের সম্পর্কের বিষয়ে ‘অনুমাননির্ভর কথা’ না বলে সময় নিয়ে দেখার কথা বলছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন।
তিনি আরও দুই-তিন মাস দেখে ট্রাম্প ক্ষমতা নেওয়ার পর কী পদক্ষেপ নেন, সে বিষয়ে অপেক্ষা করার পক্ষে।
বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে উপদেষ্টা বলেন, “দু-তিন মাস পরে ট্রাম্প প্রশাসন দায়িত্ব নেওয়ার পর কী ধরনের নীতি নেয়, সে অনুযায়ী বাংলাদেশ সরকার পদক্ষেপ নেবে।
“স্পেকুলেট করার প্রয়োজন নেই। আমরা আগামী দু-তিন মাস দেখি, দুই মাস, সময় তো আছে। তারপরে উনি (ট্রাম্প) দায়িত্ব নিয়ে কী কী পদক্ষেপ নেন, সে অনুযায়ী আমাদের সিদ্ধান্ত।”
“উনি (ট্রাম্প) তো বলেননি যে, বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক ভালো করবেন অথবা খারাপ করবেন- কিছুই বলেন নাই”, বলেন তৌহিদ হোসেন।
যুক্তরাষ্ট্রে মঙ্গলবারের ভোটের ফল বাংলাদেশ সময় বুধবার প্রকাশ হয়, তাতে রিপাবলিকান প্রার্থী ডনাল্ড ট্রাম্পের আবার হোয়াইট হাউজে প্রবেশ নিশ্চিত হয়। তবে তিনি দায়িত্ব নেবেন ২০ জানুয়ারি।
ট্রাম্পের ফের হোয়াইট হাউজে যাওয়ার বিষয়টি বাংলাদেশে বাড়তি মনযোগ কেড়েছে ভোটের প্রচার চলাকালে গত ৩১ অক্টোবর মাইক্রোব্লগিং সাইট এক্স- তার পোস্টকে কেন্দ্র করে।
সেই পোস্টে রিপাবলিকান পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী বলেন, “আমি বাংলাদেশে হিন্দু, খ্রিষ্টান এবং অন্যান্য সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ‘বর্বর সহিংসতার’ তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি, যারা উচ্ছৃঙ্খল জনতা দ্বারা আক্রমণ ও লুটপাটের শিকার হয়েছেন। বাংলাদেশ এখন পুরোপুরি বিশৃঙ্খল।”
গত ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যদের বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলার বেশ কিছু অভিযোগ পাওয়া গেছে।
আরও পড়ুন:
বাংলাদেশে 'সংখ্যালঘু নির্যাতন' আমি থাকলে ঘটত না: ট্রাম্প
হিন্দু সম্প্রদায় তখন থেকেই ধারাবাহিক বিক্ষোভ চালিয়ে আসছে, যদিও সরকারের পক্ষ থেকে এসব অভিযোগকে ‘অতিরঞ্জিত’ বলে দাবি করা হয়েছে।
ট্রাম্প সেই পোস্টে দাবি করেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট থাকলে বাংলাদেশে এসব ঘটত না। তিনি লেখেন, “আমার চোখের সামনে কখনই ঘটত না। সারা বিশ্বে ও আমেরিকায় হিন্দুদের অবহেলা করেছেন কমলা ও জো বাইডেন।”
এই বক্তব্য দেওয়ার পর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেস সচিব শফিকুল আলম ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বলেন, “বাংলাদেশের সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে ডনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্যটি সম্পূর্ণ ডমেস্টিক পলিটিক্যাল ইস্যু। লবিস্টরা হয়ত এ বিষয়ে প্রভাব বিস্তার করেছে।”
পরদিন ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন সাভারে এক আয়োজনে সাংবাদিকদেরকে বলেন, “ভোটের ময়দানে অনেকে অনেক কথা বলেন, হয়ত মিস্টার ট্রাম্প ভোট পাওয়ার জন্য এসব কথা বলেছেন।”
আরও পড়ুন:
লবিস্টরা হয়ত ট্রাম্পকে প্রভাবিত করেছে: প্রেস সচিব
ট্রাম্পের সময়ে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরও গভীর হবে: প্রেস সচিব
তবে ট্রাম্প নির্বাচিত হওয়ার পর শফিকুল এক ব্রিফিংয়ে বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ইউনূসের সাথে ডেমোক্র্যাট পার্টি, রিপাবলিকান পার্টি সবার সাথেই খুব ভালো সম্পর্ক আছে। তাদের টপ লিডারদের অনেকের সঙ্গে তার ব্যক্তিগত বন্ধুত্ব আছে এবং আমরা আশা করি, সেই সর্ম্পক আরো গভীরতর হবে।“
‘আগে দেখি, পরে যোগাযোগ’
যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী কমলা হ্যারিসকে হারিয়ে ট্রাম্পের ইতিহাস গড়া বিজয়ের পর বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক কেমন হতে পারে, সেটা নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা চলছে।
মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার যখন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসনের সঙ্গে সম্পর্কের ‘শীতলতা’ কাটিয়ে ওঠার কথা বলছে, তখন ট্রাম্প প্রশাসনের সম্পর্কের ক্ষেত্রে ‘চ্যালেঞ্জের’ বিষয়ে করা প্রশ্নে সরকারের অবস্থান তুলে ধরেন তৌহিদ হোসেন।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক আসলে শুধু যে দলের, তা তো না। তাদের সাথে তো… ধরুন, যেসব বিষয় নিয়ে বাইডেন প্রশাসনের সঙ্গে আলাপ চলছি আমাদের বা তাদের যে চাওয়া ছিল, নেগোসিয়েশন হয়েছিল, সেগুলো কিন্তু পূর্ববর্তী ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গেও ছিল।
“কাজেই, এটা বলা উচিত হবে না যে, ট্রাম্প প্রশাসন এবং বাইডেন প্রশাসনের মাঝে বাংলাদেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে বড় কোনো পরিবর্তন হবে বলে আমি কোনোমতে মনে করি না। আমরা দেখি, তারপর যোগাযোগের চেষ্টা করব, তারপর দেখা যাবে।”
আরও পড়ুন
যুক্তরাষ্ট্রে ভোটের ফল বাংলাদেশে প্রভাব ফেলবে না, মত দেবপ্রিয়-বদিউলের