“তারা ভেবেছিল এই জঙ্গি হামলার পর বাংলাদেশ আর ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না, আফগানিস্তানের মত হয়ে যাবে।”
Published : 01 Jul 2024, 04:08 PM
বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ ‘পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে’ থাকলেও এখনো জঙ্গিরা বিভিন্নভাবে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) অতিরিক্ত আইজি মনিরুল ইসলাম।
ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার হাবিবুর রহমানও সাইবার জগতে জঙ্গিদের তৎপরতাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন। আর র্যাবের মহাপরিচালক ব্যারিস্টার মো. হারুন অর রশিদ বলছেন, ভার্চুয়াল জগতেও তারা সার্বক্ষণিক নজরদারি করছেন।
হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় অষ্টম বার্ষিকীতে সোমবার গুলশানের দীপ্ত শপথ ভাস্কর্যে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পর পুলিশের ঊর্ধ্বতন এই কর্মকর্তারা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে সশস্ত্র পাঁচ তরুণ ঢুকে পড়ে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালায়। ১৭ বিদেশি নাগরিকসহ ২০ জনকে তারা হত্যা করে। জঙ্গিদের প্রতিহত করতে অভিযানে গিয়ে নিহত হন দুই পুলিশ কর্মকর্তাও।
সেই দুই পুলিশ কর্মকর্তার স্মৃতির উদ্দেশ্যে গুলশানের পুরনো থানার সামনে তৈরি করা হয় ‘দীপ্ত শপথ’ ভাস্কর্যটি। হোলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার বার্ষিকীতে এই ভাস্কর্যে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান পুলিশের ঊর্ধ্বত কর্মকর্তা ও কর্মকর্তাদের সংগঠনগুলো।
সোমবার সকালে সেখানে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পর এসবি প্রধান মনিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। দেশের জঙ্গিবাদ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসা মনিরুল হোলি আর্টিজান হামলার সময় ঢাকা মহানগর পুলিশে (ডিএমপি) কর্মরত ছিলেন। পরে তার নেতৃত্বে গঠিত হয় ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম ও ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট।
মনিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, “হোলি আর্টিজান হামলা শুধু বাংলাদেশ নয়, আন্তর্জাতিক বিশ্বেও এটি একটি আলোচিত ঘটনা। তারা ভেবেছিল এই জঙ্গি হামলার পর বাংলাদেশ আর ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না, আফগানিস্তানের মত হয়ে যাবে। কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জিরো টলারেন্স পলিসি এবং সে অনুসারে তিনি আমাদের যে নির্দেশনা দিয়েছিলেন, তার ভিত্তিতে আমরা এই সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সর্বাত্মক অভিযানে নামি।
“একের পর এক ইন্টেলিজেন্স লেড অভিযান ছাড়াও আমরা সচেতনতা বৃদ্ধিসহ নানা উদ্যোগ, অর্থাৎ স্ট্র্যাটেজিক কাউন্টার টেরোরিজমের যে অ্যাপ্রোচ, সেটা গ্রহণ করি। হোলি আর্টিজানের পরপরই কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ার ঈদগাহ ময়দানে একটা হামলা প্রচেষ্টা হয়। এরপর আসলে জঙ্গিরা ছোট-কিংবা বড় কোনো ধরনের হামলা করতে পারেনি। বরং তারা যেখানে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করেছে, সেই গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করে আমরাই অভিযান চালিয়েছি। ফলে দেশের জঙ্গিবাদ বা সন্ত্রাসবাদ এখন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আছে।”
তবে অনলাইনসহ বিভিন্ন প্ল্যাটফরমে জঙ্গিবাদীরা সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে জানিয়ে মনিরুল বলেন, “এটি একটি মতাদর্শিক বিষয়, যদিও ভুল মতাদর্শ। একটা ভুল মতবাদ নিয়ে তারা কাজ করে। এটি দমন করতে গেলে… এটা একটা লং টার্ম কমপ্লিকেটেড প্রসেস। ফলে আদর্শটা এখনো আছে। তারা অনলাইন বা বিভিন্ন জায়গায় বিচ্ছিন্নভাবে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করে। আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী, বিশেষ করে পুলিশ, র্যাব এটার বিরুদ্ধে সার্বক্ষণিকভাবে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ, গবেষণা ও ক্ষেত্র বিশেষে অভিযান চালাচ্ছে। ফলে এটি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আছে।”
সাইবার জগতে জঙ্গিবাদের চ্যালেঞ্জ
দীপ্ত শপথ ভাস্কর্যে শ্রদ্ধা জানানোর পর ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেন, অনলাইনে জঙ্গিদের তৎপরতা পুলিশের জন্য ‘বড় চ্যালেঞ্জ’।
তিনি বলেন, “জঙ্গিবাদ দমন ও নির্মূলে বাংলাদেশ রোল মডেল হিসাবে পরিচিতি পেয়েছে। বিশ্বের অন্য দেশে আমরা দেখি জঙ্গি হামলা হওয়া পর তারা অভিযান পরিচালনা করে। আর বাংলাদেশই একমাত্র উদাহরণ, যেখানে জঙ্গিদের অপারেশন হওয়ার আগে বিভিন্ন ইন্টেলিজেন্সের মাধ্যমে জানতে পেরে আমরা আগেই ব্যবস্থা নিয়ে নির্মূল করতে সক্ষম হয়েছি।”
অনলাইনে জঙ্গি তৎপরতার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ডিএমপি কমিশনার বলেন, “এটি আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ অনলাইনে অল্প সময়ের মধ্যে অল্প খরচে বেশি মানুষকে সংক্রমিত করা যায়।”
উগ্রবাদীদের দমন করার জন্য সমাজের সব শ্রেণির মানুষকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান ঢাকার পুলিশ প্রধান।
তিনি বলেন, “আমরা মনে করি যে কোনো ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী শক্ত অবস্থানে রয়েছে। ফলে আমাদের চলমান শান্তিপূর্ণ অবস্থা অব্যাহত থাকবে।”
বাংলাদেশ ‘পুরোপুরি নিরাপদ’
সাইবার জগতে জঙ্গিদের যেমন তৎপরতা আছে, তেমনি সেখানে সার্বক্ষণিক নজরদারির কথা বলছেন র্যাবের ডিজি হারুন অর রশিদ।
তিনি বলেন, “আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে এখন আর ওইভাবে দেশে জঙ্গিদের তৎপরতা নেই। জঙ্গিবাদ এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। বাংলাদেশ বিশ্বের মধ্যে এখন নিরাপদ একটি দেশ।”
নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার ইসলামের যে সদস্যদের আদালত থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে, তাদের এখনো ধরা যায়নি। এ বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে র্যাবের ডিজি বলেন, “আমরা এসব বিষয়ে নজরদারি করছি। গত সপ্তাহেও চট্টগ্রাম থেকে তিন জন জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
“আমরা সার্বক্ষণিক জঙ্গিদের বিষয়ে নজরদারি করছি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জঙ্গিরা এক সময় নানা প্রচার করার চেষ্টা করেছে। জঙ্গিরা ডার্ক ওয়েব ব্যবহার করেছে এক সময়। আমরা কিন্তু এসব বিষয়ে নজরদারি করছি। ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ডেও আমাদের নজরদারি রয়েছে। আমরা মানুষজনকে আশ্বস্ত করতে চাই, এই দেশে আর কখনোই জঙ্গিবাদ ও মৌলবাদের উত্থান হবে না।”