এটা যে সঙ্কটকাল, তা দেশবাসী উপলব্ধি করতে পারছে না বলে হতাশ ফরিদুল হক খান।
Published : 31 Jul 2022, 08:41 PM
মহামারীর মধ্যে যুদ্ধে বিশ্ববাজার চড়ে যাওয়ায় ব্যয় সঙ্কোচনে সরকারের নানা পদক্ষেপের মধ্যে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান দুলালও কিছু পরামর্শ রেখেছেন।
আমদানি ব্যয় কমাতে গম ছেড়ে চালের রুটি খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি, বলেছেন তেলের ব্যবহার কমাতে।
এটা যে একটা সঙ্কটকাল, তা দেশবাসী উপলব্ধি করতে ‘পারছে না’ বলে হতাশাও প্রকাশ করেছেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী।
তিনি বলেছেন, “বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশ অনেক ভালো আছে। তারপরও মানুষ বুঝতে চায় না।”
রোববার সকালে ঢাকার নিউ ইস্কাটনের বিয়াম ভবনের মাল্টিপারপাস হলে এক কর্মশালায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে চলমান পরিস্থিতি তুলে ধরে নিজের পরামর্শগুলো দেন তিনি।
ইউক্রেইনে যুদ্ধের কয়েক মাস আগেই বিশ্ববাজারে বাড়তে শুরু করেছিল গমের দাম। শীর্ষস্থানীয় গম রপ্তানিকারক দেশ দুটির মধ্যে যুদ্ধের দামামা ছড়িয়ে পড়ার পর গমের দরে উল্লম্ফন দেখা দেয়।
ফরিদুল হক খান বলেন, “গমের আটার রুটি খাব না আমরা, তাহলে আমার গম ইমপোর্ট করতে হবে না। আমার ফরেন কারেন্সি যেটা আছে, সেটাতে শর্ট পড়বে না। আমার ডলার শর্ট পড়বে না।
“আমরা সবাই যেন গমের আটার রুটি খাওয়ার জন্য অস্থির হয়ে গেছি। তিন মাস গমের রুটি না খাই, দেখি না কী হয়? আমরা চালের আটার রুটি খাব। অসুবিধা কোথায়? তেল যেভাবে খাচ্ছি, এখন একটু কম খাব।”
‘ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সচেতনতা বৃদ্ধিকরণ’ প্রকল্পের অধীন দুটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের কর্মপরিকল্পনা-বিষয়ক এ কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখছিলেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী।
বক্তব্যের শেষ দিকে তিনি বলেন, “আরেকটি কথা না বলে পারছি না...সবাই বলে জিনিসের দাম বেড়েছে। সবাই বলে এটা হয়েছে, সেটা হয়েছে।
“জিনিসের দাম কী (কতটুকু) বেড়েছে, বাংলাদেশের মানুষ কিন্তু বুঝতে পারছেন না। এখানে সামান্য বেড়েছে, তাতেই মানুষের মনে কিন্তু অশান্তির সৃষ্টি হয়েছে।”
অন্য দেশের বাজার পরিস্থিতি তুলে ধরে ফরিদুল হক বলেন, “আজকে বাংলাদেশে পেট্রোলের দাম ৯০ টাকা, আর লন্ডনে ৫ ও ৬ জুলাই দুদিন ছিলাম, সেখানে পেট্রোলের দাম এক পাউন্ড ছিল, এখন ৩.৫৩ পাউন্ড। তার মানে ৩৭০-৩৮০ টাকা এক লিটার পেট্রোলের দাম। আর আমাদের এখানে সরকার দিচ্ছে ৯০ টাকায়। মানুষ বুঝতে পারে না কোনো কিছু!
“এই যে ভোজ্যতেল, সেটি আসে কোত্থেকে? সব আসে ইউক্রেইন-রাশিয়া থেকে। আজকে ইউক্রেইন-রাশিয়া যুদ্ধ হওয়ার কারণে সারাবিশ্বে ধস নেমেছে। এক কেজি চালের দাম ৫০০ টাকা এমন দেশও আছে। বাংলাদেশের মানুষ এখনও স্বল্পমূল্যে সব খাচ্ছেন। সৌদি আরব গিয়ে দেখেন, আমাদের হজযাত্রীদের জিজ্ঞাসা করেন, তারা একটা ডিম খেয়েছেন ৫ রিয়াল দিয়ে। ১ রিয়াল ২৪ টাকা ধরে ১২০ টাকা একটা ডিমের দাম। আর বাংলাদেশে ১২০ টাকায় খাচ্ছেন কতগুলো ডিম!”
ফরিদুল আরও বলেন, “আমার মেয়ে অস্ট্রেলিয়ায় থাকে …ও বললো যে, ‘বাবা, যদি আমরা গোশত কিনতে যাই, ভাগ করে করে বিক্রি করে, মুরগির কলিজা, গিলা বা রান- তারা কেটে ভাগ করে বিক্রি করে, দাম শুনলে মাথা ঘুরায় যায়’। ওই দেশে একটা মুরগির দাম বাংলাদেশি টাকায় তিন হাজার টাকা।
“আসলে মায়ের পেটে বাঙালি আছে, বাঙালি মায়ের পেটে বাস করছে। কিন্তু বোঝেন না যে, এই মা এই দেশের জন্য কতটুকু করছেন। কেউ বুঝতে চায় না।”
বিদ্যুৎ সঙ্কট নিয়ে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী বলেন, “আজকে বিদ্যুতের কথা বলে যে, বিদ্যুৎ পাওয়া যায় না। আমরাও বলেছি, পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ আছে, আজকে বিদ্যুতের একটু ঘাটতি হয়েছে। কেন হয়েছে, সেটি দেশ ও জাতিকে বুঝতে হবে। বিদ্যুৎ তৈরি করতে দরকার হয় গ্যাস ও তেলের। দুটিই ইউক্রেইন-রাশিয়া থেকে আমদানি করতে হয়।
“সেখান থেকে এখন এগুলো আনতে গেলে বিদ্যুতের দাম তিন-চার গুণ হয়ে যাবে। অন্য দেশ থেকে এনে বিদ্যুতে দ্বিগুণ ভর্তুকি দিচ্ছে সরকার। সরকারের আয়ের টাকা ভর্তুকি দিতেই শেষ। তার পরও বাংলাদেশের মানুষকে সুখে রাখছে। তারপরও মানুষ বুঝতে চায় না। কী অবস্থা!”
কর্মশালায় অংশ নেওয়া বিভিন্ন ধর্মের প্রতিনিধিদের উদ্দেশে ফরিদুল বলেন, “আপনারা যারা এসেছেন, তারা কিন্তু জ্ঞানী, বুদ্ধিমান; রাষ্ট্রীয়ভাবে এবং সামাজিকভাবে ও রাজনৈতিকভাবে আপনাদের দায়িত্ব রয়ে গেছে। আপনাদের কাছে বিনয়ের সঙ্গে অনুরোধ করব- মানুষকে বোঝাবেন। সবাই এলাকায় গিয়ে মানুষকে বোঝাবেন-বাংলাদেশ কী অবস্থায় আছে।
“তবে এটাও বলছি, আমার বিশ্বাস, আগামী তিন মাসের মধ্যে এসব অনেকাংশ সমস্যারই সমাধান হবে। ইতোমধ্যে রাশিয়া গ্যাস ও ভোজ্যতেল দেওয়ার জন্য রাজি হয়েছে। এটা হয়ে গেলে আমাদের অনেকাংশে সমস্যা কমে যাবে।”