“আমরা যদি একসঙ্গে সক্রিয়ভাবে কাজ করি, তাহলে বিচার প্রক্রিয়ায় গতি আনতে পারব,” বলেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
Published : 12 Feb 2023, 10:17 PM
জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) রোহিঙ্গা গণহত্যার মামলা চালানোর জন্য প্রতিশ্রুত তহবিল সেভাবে না পাওয়ার কথা জানিয়েছে গাম্বিয়া।
মামলা পরিচালনাকারী দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মামাদো তানগারা বলেছেন, “মানুষ ও দেশগুলো সেভাবে অর্থ সাহায্য করছে না। তারা বড় বড় প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে, কিন্তু অনুদান সেভাবে আসছে না।
“তবে আমরা আশা করি, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তারা সহায়তা করতে এগিয়ে আসবে। কারণ সবাই জানে, এটা মহৎ কাজ। এই সমস্যা থেকে কেউই নিজেদের পৃথক করতে চায়নি বা করেনি- এটা ঠিক; তবে আমরা সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ চাই।”
মামলা চালাতে গিয়ে অর্থ সংকট হচ্ছে কি না- এমন প্রশ্নে রোববার ঢাকায় সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগে ২০১৯ সালের নভেম্বরে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে নেদারল্যান্ডসের হেগে অবস্থিত আইসিজে’তে মামলা করে আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া।
২০১৭ সালে রোহিঙ্গাদের গ্রামে গ্রামে সেনাবাহিনীর অভিযানে যে বর্বরতা চালানো হয়েছে, তার মধ্য দিয়ে ১৯৮৪ সালের আন্তর্জাতিক গণহত্যা কনভেনশন ভঙ্গ করার অভিযোগ আনা হয়েছে ওই মামলায়।
মুসলিম দেশগুলোর সংগঠন ওআইসির পক্ষ থেকে করা ওই মামলায় গাম্বিয়াকে সর্বাত্মক সহযোগিতা দিয়ে আসছে বাংলাদেশও।
গাম্বিয়ার ওই মামলায় আপত্তি তুলে মিয়ানমার দাবি করেছিল, আইসিজেতে এ মামলা করার এখতিয়ার গাম্বিয়ার নেই। তবে দীর্ঘ শুনানি শেষে আইসিজে গত বছরের জুলাই মাসে রায় দিয়েছে যে- জাতিসংঘের যেকোনো সদস্য দেশ চাইলেই এমন মামলা করতে পারে।
ওই আদেশের মাধ্যমে মামলার বিচারের পথ খুললেও চূড়ান্ত রায় আসতে বেশ কয়েক বছর লাগতে পারে বলে ধারণা এই ধরনের মামলা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের।
বাংলাদেশ সফরে এসে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনও করেছেন গাম্বিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মামাদো তানগারা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে মিলিত হন।
রোববার বিকালে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেনের সঙ্গে যৌথ ব্রিফিংয়ে এসে তিনি বলেন, “আইসিজেতে আমরা অগ্রগতি করছি, তবে সেটা আমাদের নিজেদের উদ্যোগের উপর ভর করে।
“কিন্তু মামলাটি পরিচালনার ক্ষেত্রে অর্থ সহায়তা সেভাবে আসছে না। সুতরাং যারা ন্যায়বিচার ও মানুষের মর্যাদার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, তাদেরকে এই মহৎ কাজে এগিয়ে আসার ও সহযোগিতার আহ্বান জানাচ্ছি।”
আইসিজের বিচারকে দীর্ঘ প্রক্রিয়া হিসাবে বর্ণনা করে তিনি বলেন, “আমরা যদি একসঙ্গে সক্রিয়ভাবে কাজ করি, তাহলে আমরা এই প্রক্রিয়ায় গতি আনতে পারব।”
গাম্বিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “রোহিঙ্গারা আমাদের হৃদয়ের কাছাকাছি আছে। আমরা অব্যাহতভাবে কাজ করে যাব, যাতে তাদের কথা শোনা হয় এবং তারা সম্মানের সঙ্গে স্বদেশে ফিরে যেতে পারে।
“এই সংগ্রামে আমাদের সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। মিডিয়া, সাধারণ মানুষ- সবাইকে, যাতে তাদের কথা শোনা হয়। কারণ, যারা অপরাধী, তারা তাদের নৃশংস কর্মকাণ্ড চালায় গোপনে। আমি মনে করি, যদি আমরা সবাই আওয়াজ তুলি, তাহলে আমাদের কথা শোনা হবে।”
২০১৭ সালের অগাস্টের পর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনে সাড়ে ৭ লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশের কক্সবাজারে শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেয়। আগে থেকে কক্সবাজার এলাকায় অবস্থান করছিল আরও ৪ লাখ রোহিঙ্গা।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে চেষ্টা চালানো হলেও পাঁচ বছরের বেশি সময়ে একজন রোহিঙ্গারও প্রত্যাবাসন হয়নি। ২০১৯ সালে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ কয়েক দফায় নেওয়া হলেও তা শেষ পর্যন্ত কাজে আসেনি।
রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে গিয়ে পরিস্থিতি সরেজমিন প্রত্যক্ষ করার কথা তুলে ধরে মামাদো তানগারা বলেন, “আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করার দৃঢ় প্রতিশ্রুতি নিয়ে ফিরে যাচ্ছি এবং রোহিঙ্গাদের বিচার এজেন্ডা এগিয়ে নিতে কাজ অব্যাহত রাখব।”
রোহিঙ্গা গণহত্যার বিচারে অগ্রণী ভূমিকা নেওয়ায় গাম্বিয়াকে সাধুবাদ জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, “গাম্বিয়া আমাদের ভালো বন্ধু। রোহিঙ্গার ইস্যুতে ওআইসির পক্ষ থেকে কেইসটা তারা খুব সুন্দরভাবে লড়াই করছেন।
“আমরা আশাবাদী, এটার পরিপ্রেক্ষিতে পৃথিবীতে আর কোনো জেনোসাইড হবে না। মানুষের মর্যাদার কোনো কম্প্রোমাইজ হবে না। তারা খুব সাহসী লোক। আমরা খুব খুশি তারা এসেছেন।“
দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের আগে একটি যৌথ ঘোষণা সই করেন বাংলাদেশ ও গাম্বিয়ার দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী। যার মাধ্যমে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনগুলোতে দুদেশের শান্তিরক্ষীদের একযোগে মোতায়েনের পথ তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন মোমেন।
তিনি বলেন, “এখন আমরা একা একাই দেই, আমি খুশি যে তারা আমাদের সঙ্গে যুক্ত হবে। আমাদের ভবিষ্যতে যে শান্তিরক্ষী যাবে, বিষয় বুঝে অনেকগুলোতে তাদের থেকে শান্তিরক্ষী নিব। এটা নিয়ে এমওইউ সই করলাম। এটা ভালো।”
গাম্বিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “এটা ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতার পথ তৈরি করবে, গাম্বিয়া, বাংলাদেশ ও জাতিসংঘ। বাংলাদেশ যেহেতু সবচেয়ে বেশি শান্তিরক্ষী পাঠায়, বাংলাদেশ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে আমাদের।”