শহীদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকাতেও নাম নেই অনেকের। এবারের শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসেও পূর্ণাঙ্গ সেই তালিকা প্রকাশ হচ্ছে না।
Published : 14 Dec 2023, 09:11 AM
ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজের ছয়জন শিক্ষার্থীর তিনজনই শহীদ বুদ্ধিজীবী একে লুৎফর রহমানের নাম জানেন না; অথচ এ কলেজের ওই শিক্ষার্থীদের বিভাগেই শিক্ষকতা করতেন তিনি। কলেজের বিজ্ঞান ভবনের নামও তার নামে।
মুক্তিযুদ্ধের আগে আন্দোলন-সংগ্রামের বুদ্ধিবৃত্তিক প্রেক্ষাপট তৈরিতে এই শিক্ষক রেখেছিলেন অসামান্য ভূমিকা। যুদ্ধ চলাকালে মুক্তিযোদ্ধারা তার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন এবং পেতেন প্রয়োজনীয় আশ্রয় ও সহযোগিতা।
১৯৭১ সালের ২৭ নভেম্বর পাকিস্তানি সেনারা তাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায় বলে জানালেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ও কবি জয়দুল হোসেন। তিনি জানান, পরে জেলখানা থেকে তাকে ৬ ডিসেম্বর রাতে বের করে নিয়ে শহরতলীর কুরুলিয়া খালের পাড়ে হত্যা করা হয়।
৮ ডিসেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া হানাদার মুক্ত হলে পরিবারের সদস্যরা লুৎফর রহমানের মরদেহ উদ্ধার করে পারিবারিক কবরস্থানে সমাহিত করে।
লুৎফর রহমান ছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজের (বর্তমানে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজ) হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক এবং তার সম্পর্কে কিছুই না জানা তিন শিক্ষার্থীও ওই বিভাগে পড়েন। দৈবচয়নের ভিত্তিতে তাদের কাছে এই শহীদ বুদ্ধিজীবী সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছিল।
তবে কলেজের ইংরেজি বিভাগের একজন এবং বাংলা বিভাগের দুজন শিক্ষার্থী জানান, লুৎফর রহমান মুক্তিযুদ্ধে মারা যান। এজন্য তার নামে কলেজের বিজ্ঞান ভবনের নামকরণ করা হয়েছে। তারা তিনজনও এটুকু তথ্যই শুধু জানাতে পেরেছেন।
শুধু একটি এলাকার নয়, দেশের অনেক স্থানেই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের বিষয়ে অনেক কিছুই অজানা অনেকের। তরুণ প্রজন্মের বড় অংশের পাশাপাশি অন্যদের স্মৃতি থেকেও স্বাধীনতার সময়কার সেরা প্রজন্ম হারিয়ে যাচ্ছেন নানান অবহেলায়।
এজন্য শহীদ বুদ্ধিজীবীদের সন্তান, গবেষক, ইতিহাসবিদসহ সবাই চান জাতির সূর্যসন্তানদের ইতিহাস তুলে ধরতে তাদের তালিকা ও জীবনীগ্রন্থ প্রকাশ, পাঠচক্র আয়োজনসহ বছরজুড়ে ধারাবাহিক কার্যক্রম নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন।
স্মারকগ্রন্থ নিয়ে হতাশ সম্পাদক
কলেজ কর্তৃপক্ষ কেবল বিজ্ঞান ভবনের নামকরণ করার মধ্য দিয়েই দায় সেরেছে মন্তব্য করে জয়দুল হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "অন্তত ৯ জন শহীদ বুদ্ধীজীবী রয়েছেন, যাদের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এবং মুক্তিযুদ্ধোত্তর সরকার তাদের নামে ডাক টিকিটও প্রকাশ করেছে। তবে তাদের মধ্যে শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ছাড়া বাকিদের কথা খুব একটা জানেন না ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অধিকাংশ মানুষ।"
তিনি জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বাড়ি এমন শহীদ বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে রয়েছেন-সদর উপজেলার রামরাইল গ্রামের শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত, সরাইলের সৈয়দ আকবর হোসেন বকুল মিয়া, নবীনগরের যতীন্দ্রনাথ কুমার ভদ্র ও অসীম শান্তি রায়, নাসিরনগরের অতীন্দ্রনাথ ভদ্র, ঘাটিয়ারার এবিএম আব্দুর রহিম, খড়মপুরের আতাউর রহমান খান (খাদেম), কসবার শহীদ নুরুল আমিন খান, সুলতান উদ্দিন আহমদ ও একে লুৎফর রহমান।
জয়দুল আক্ষেপ করে বলেন, “শহীদ বুদ্ধিজীবীদের অনেকেই আড়ালে রয়ে গেছেন। আমরা শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস এলে সর্বোচ্চ জনা বিশেককে স্মরণ করি। খবরের কাগজে ছবি ছাপাই। টেলিভিশনে তাদের স্বজনদের ডেকে আনি।”
প্রায় তিন দশক আগে শহীদ লুৎফরকে নিয়ে একটি স্মারক গ্রন্থের পাণ্ডলিপি প্রস্তুত করলেও আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে সেটি এখনও প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, "শহীদ বুদ্ধিজীবী লুৎফর রহমানকে নিয়ে আমি একটি পাণ্ডুলিপি প্রস্তুত করেছিলাম নব্বইয়ের দশকে। তখন লুৎফর রহমানের ভাতিজা এটি প্রকাশের ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। পরে ওই ভাতিজাটি মারা যান। গ্রন্থটিও আর প্রকাশ হয়নি।
"১৯৯৬ সালের দিকে সরকারি কলেজের তৎকালীন অধ্যক্ষের সঙ্গে দেখা করে তাদের অনুরোধ করেছিলাম। তারাও রাজি হননি। তাদেরকে এটাও বলেছিলাম, সম্পাদক হিসেবে আমার নাম রাখতে হবে না। কলেজের নাম দিয়েই স্মারকগ্রন্থটি প্রকাশ করেন। তাতেও তারা আগ্রহ দেখাননি।"
তবে কয়েক মাস আগে লুৎফরের পরিবারের আরেক সদস্য এটি প্রকাশের ব্যাপারে আগ্রহী হয়েছেন বলে জানান জয়দুল। আগামী দু-তিন মাসের মধ্যে এটি প্রকাশ হতে পারে।
লুৎফর রহমান ছাত্রাবাস 'উধাও'
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কাউতলীতে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে শহীদ লুৎফর রহমানের নামে। নিজ গ্রামে প্রতিষ্ঠিত ওই স্কুলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন তিনি নিজেই। আর সরকারি কলেজে রয়েছে তার নামে বিজ্ঞান ভবন।
কলেজের একাধিক প্রাক্তন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শহীদ এ বুদ্ধজীবীর নামে টিন শেডের একটি ছাত্রাবাসও ছিল। বর্তমানে সেই ছাত্রাবাসের অস্তিত্ব নেই।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও আইনজীবী মোহম্মদ নাসির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সেই ছাত্রাবাস ভেঙে পরে কলেজের একাধিক সম্প্রসারিত ভবন হয়েছে। একাধিক ছাত্রাবাসও তৈরি হয়েছে, তবে বিলুপ্ত হয়ে গেছে লুৎফর রহমান ছাত্রাবাসটি।”
তার ভাষ্য, ছাত্রাবাসটি বিলুপ্ত করে বিজ্ঞান ভবনের নামকরণ অনেকটা গরু মেরে জুতা দান করার মতো। তিনি অবিলম্বে এই শহীদের নামে একটি ছাত্রাবাস নির্মাণের দাবি জানান।
তবে লুৎফর রহমান ছাত্রাবাসের ব্যাপারে কোনো তথ্য জানাতে পারেননি কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ এজেডএম আরিফ হোসেন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, "একটি টিন শেড ছাত্রাবাস এখানে ছিল বলে জেনেছি, সেটি লুৎফর রহমানের নামে ছিল কি না, তাৎক্ষণিকভাবে বলতে পারছি না। কলেজে তো নতুন ভবন হয়েছে, মেয়েদের একটি হোস্টেল হয়েছে। ঠিক কোন জায়গায় লুৎফর রহমান ছাত্রাবাস ছিল, জেনে বলতে হবে।"
ভবিষ্যতে কলেজের জন্য নতুন হোস্টেল নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে জানিয়ে আরিফ হোসেন বলেন, “পাওয়ার হাউজ রোডে কলেজের জন্য নতুন ছাত্রাবাস করার পরিকল্পনা আছে। শহীদ লুৎফর রহমান যেহেতু এই কলেজের শিক্ষক ছিলেন, তার নামে ছাত্রাবাস করার ব্যাপারে আমরা আলোচনা করব।"
শিক্ষার্থীদের মাঝে সাবেক এ শিক্ষকের বীরত্বগাথা জানাতে বছরের অন্যান্য সময় কোনো পাঠচক্র বা কোনো আয়োজন থাকে কি না জানতে চাইলে অধ্যক্ষ বলেন, "বছরের অন্যান্য সময় কোনো আয়োজন থাকে না। তবে আমরা কিছু পরিকল্পনা করছি, উনার বীরত্বগাথা কিভাবে শিক্ষার্থীদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া যায়। “কলেজে প্রতি বছর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের আলোচনা অনুষ্ঠানে লুৎফর রহমানকে নিয়ে আলোচনা করা হয়।"
আইন প্রণয়নের দাবি
নড়াইলের কালিয়ার শহীদ বুদ্ধিজীবী শেখ আব্দুস সালামকে প্রতি বছর দিবসকেন্দ্রিক কিছু আয়োজনে স্মরণ করা হয় বলে জানালেন তার মেয়ে শেখ তাসলিমা মুন।
‘আমি একটি বাজপাখিকে হত্যা করতে চেয়েছিলাম’ নামে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বইয়ের লেখক মুন বলেন, “১৯৭৫ সালের পর আমরা যখন বড় হচ্ছি, তখন নিজেদের শহীদের সন্তান বলে পরিচয় দিতে ভয় পেতাম। এমনকি পরবর্তী চার দশকে চাকরি-বাকরি পাব কি না এ নিয়ে সংশয়ে থাকতাম। তবে প্রতিকূল ওই সময়ে এলাকাবাসী আমার বাবার নামে কলেজ করেছে। এমন কী ‘সালামাবাদ’ একটি ইউনিয়নের নামও রাখা হয়েছিল আমার বাবার নামে।”
বর্তমানে সুইডেনপ্রবাসী শহীদকন্যা বলেন, “আমরা প্রথমবারের মতো বাবার প্রতি রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি অনুভব করেছি, ১৯৯৮ সালে যখন তাকে নিয়ে একটি স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশিত হল। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, যখন যে দলই ক্ষমতায় থাকুক না কেন, কিছু বিষয়, যেমন মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের শহীদ, শহীদ বুদ্ধিজীবী এইসব নিয়ে বিতর্ক করা যাবে না, এমন একটি আইন প্রণয়ন করা হোক।”
‘স্বীকৃতি দূরের কথা, তালিকায় নেই অনেক শহীদ বুদ্ধিজীবীর নাম’ এমনটাই জানালেন শহীদ সুরকার আলতাফ মাহমুদের মেয়ে শাওন মাহমুদ। উদাহরণ হিসেবে তিনি নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার বাগাচাড়া গ্রামের শহীদ আশরাফুল ইসলাম ফজলুর কথা বলেন। গীতিকার ও নাট্যকার আশরাফুল ইসলাম ফজলু পাকিস্তানিদের হাতে নিহত হন ১৯৭১ সালের ১৩ ডিসেম্বর ভোরে।
শাওন মাহমুদ বলেন, “শহীদ বুদ্ধিজীবীর সংজ্ঞা অনুযায়ী উনার নাম শহীদ বুদ্ধিজীবী তালিকায় থাকবার কথা। কিন্তু তালিকায় তার নাম নেই। এমন অগণিত মানুষ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে প্রাণ দিয়েছেন, যাদের কথা আমরা মনে রাখিনি, শ্রদ্ধাও জানাই না।”
তিনি বলেন, “রংপুরের শহীদ শিক্ষক কালাচাঁদ রায়, নেত্রকোনার শহীদ অধ্যাপক কামিনীকুমার চক্রবর্তী, চট্টগ্রামের শহীদ সংস্কৃতিকর্মী কাজী আলী ইমামের মতন অনেক অজানা শহীদ বুদ্ধিজীবীর নাম এবং জীবনের কথা হারিয়ে যায়।”
তরুণদের জানাতে হবে ইতিহাস
তালিকা তৈরি করলেই হবে না, তরুণ প্রজন্ম যেন শহীদ বুদ্ধিজীবীদের সম্পর্কে জানতে পারে, সেজন্য জীবনীগ্রন্থ প্রকাশ এবং স্কুল-কলেজ ও পাঠাগারে এ বিষয়ক পাঠচক্র আয়োজন করা উচিত বলে মনে করেন গবেষক শাহরিয়ার কবির।
তিনি বলেন, "শুধুমাত্র তালিকায় নাম প্রকাশ করলেই তো হবে না, তাদের জীবনী প্রকাশ করতে হবে। কী কারণে তাদের হত্যা করা হয়েছে? তার কারণ জীবনীগ্রন্থে তুলে ধরা হলেই তো তরুণ প্রজন্ম তাদের সম্পর্কে জানবে, সঠিক ইতিহাসও উঠে আসবে।"
মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তরুণ প্রজন্মের মাঝে জানানোর জন্য মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের মধ্যে একটি সমন্বয় দরকার।
পাশাপাশি বেসরকারি বিভিন্ন উদ্যোগকেও যুক্ত করা দরকার বলে মনে করেন লেখক ও গবেষক মুনতাসীর মামুন।
তিনি বলেন, "তরুণ প্রজন্মকে ইতিহাস জানাতে হবে। এর জন্য অগ্রণী ভূমিকায় থাকবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। আমি যতটুকু জানি, বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ১৬ ডিসেম্বর বন্ধ দিয়ে দেওয়া হয়। আবার চিঠি দিয়ে বলা হয়-বিজয় দিবস পালন করতে হবে। দিবসটি কীভাবে পালন হবে, শিক্ষকরা কীভাবে শিক্ষার্থীদের এই দিবসের তাৎপর্য বোঝাবে, তার সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকা উচিত।"
মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের কাজের কোনো ধারাবাহিকতা নেই বলে সমালোচনাও করেন মুনতাসীর মামুন।
তিনি বলেন, “মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কাজগুলোতে ধারাবাহিকতা থাকতে হবে। একটা দিবস আসলেই একটু নড়েচড়ে বসা, বাকি সময় সরব না থাকলে তো কাজটা হবে না। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আমাদের স্পিরিটটাও নষ্ট হয়ে গেছে।
“মন্ত্রণালয়ে যারা আছেন, তারা যেন কেবল চাকরি করে যাচ্ছেন। এই কাজটা তো ভেতর থেকে অনুভব করে করতে হবে। তালিকা প্রকাশ করলেই কি কাজ হয়ে গেল? মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে জানাতে হলে তো ধারাবাহিক কাজ করতে হবে, আরও অনেক পরিকল্পনা সাজাতে হবে।"
অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, “বুদ্ধিজীবীরা মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের অংশ। এই শহীদদের আমরা ভুলে যেতে চাচ্ছি। যদি শহীদদের ভুলে যাই, আমরা শুধু দুর্বল হব তাই নয়, কৃতঘ্ন হব। সেই কাজটা ঘটছে। আমরা ক্রমাগত ওই স্মৃতি থেকে দূরে সরে যাচ্ছি। তার একটা বড় কারণ হচ্ছে, আমরা ইতিহাস চর্চা করছি না। ইতিহাস ও সাহিত্য চর্চা সব মানুষের জন্য অপরিহার্য।”
শহীদ বুদ্ধিজীবীদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা কবে?
মুক্তিযুদ্ধে হারানো শহীদ বুদ্ধিজীবীদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা চূড়ান্ত করতে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি কমিটি কাজ করছে। সেই কমিটির একাধিক সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবারের বুদ্ধিজীবী দিবসেও শহীদ বুদ্ধিজীবীদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করা হচ্ছে না।
তালিকায় দেড় হাজারের বেশি নাম রয়েছে বলে গণহত্যা জাদুঘর ও আর্কাইভ এবং মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টরা জানান।
সেখান থেকে যাচাই-বাছাই করে পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করা হবে। এ পর্যন্ত ৩৩৪ জন শহীদ বুদ্ধিজীবীর নাম প্রকাশ করে গেজেটে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
বাকিদের নাম যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে বলে জানান কমিটির সদস্য ও গবেষক শাহরিয়ার কবির।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “এখন তো শহীদ বুদ্ধিজীবীর নতুন একটি সংজ্ঞা তৈরি করা হয়েছে। সেই সংজ্ঞা অনুযায়ী ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ থেকে ৩১ জানুয়ারি ১৯৭২ পর্যন্ত সময়কালে যারা বুদ্ধিবৃত্তিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন এবং এর ফলে দখলদার পাকিস্তানি বাহিনী কিংবা তাদের সহযোগীদের হাতে শহীদ কিংবা ওই সময়ে চিরতরে নিখোঁজ হয়েছেন, তারা শহীদ বুদ্ধিজীবী।”
উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, “কোনো গ্রামে হয়তো গণহত্যা হয়েছে, সেখানে ওই গ্রামবাসীর সঙ্গে একজন শিক্ষককেও হত্যা করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে তিনি বুদ্ধিবৃত্তিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিলেন না। তিনি শহীদের তালিকায় থাকবেন, কিন্তু শহীদ বুদ্ধিজীবীর তালিকায় তো রাখা যাবে না। এজন্য অনেক যাচাই-বাছাইয়ের ব্যাপার রয়েছে।
“আমাদের মনে রাখতে হবে বুদ্ধিজীবীদের ৬৬ ভাগই ছিলেন ‘টার্গেটেড কিলিং’ এর শিকার। এদেশকে মেধাশূন্য করে দেওয়ার জন্য টার্গেট করে হত্যা করা হয়েছে। তারা টার্গেট হয়েছিলেন, কারণ বুদ্ধিবৃত্তিক কাজের মধ্য দিয়ে তারা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন এবং পাকিস্তানিদের টার্গেটে পরিণত হয়েছেন।”
পূর্ণাঙ্গ তালিকা কবে নাগাদ হতে পারে? জানতে চাইলে শাহরিয়ার কবির বলেন, “সবশেষ বৈঠকে আমরা আলোচনা করেছি, এ মাসেই কিছু যাচাই-বাছাইয়ের কাজ যেন শেষ হয়। আগামী ২৬ মার্চের মধ্যে যেন একটা পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করা যায়। সেভাবে চেষ্টা করা হচ্ছে।
“গণহত্যা জাদুঘর ও আর্কাইভ থেকে একটি তালিকা করা হয়েছে। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের পরিবার থেকেও অনেকে মন্ত্রণালয়ে তথ্য দিয়েছেন। আমরা সেগুলোও যাচাই-বাছাই করছি।”
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শহীদ বুদ্ধিজীবীদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরির কাজ চলমান রয়েছে। একটি কমিটি এ নিয়ে কাজ করছে। বিস্তারিত এখনই জানানো সম্ভব হচ্ছে না।”