কানকুনে তহবিল তৈরির ‘সমঝোতা’

তহবিল তৈরি এবং জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর কৌশল নির্ধারণে কমিটি গঠনের সিদ্ধান্তের মধ্যে দিয়ে শেষ হলো কানকুন সম্মেলন। কানকুন থেকে জানাচ্ছেন তানিম আহমেদ।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Dec 2010, 07:41 AM
Updated : 11 Dec 2010, 07:41 AM
কানকুন, ডিসেম্বর ১২ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- দরিদ্র দেশগুলোর জন্য তহবিল তৈরি এবং জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে দেশগুলোর খাপ খাওয়ানোর কৌশল নির্ধারণে কমিটি গঠনের সিদ্ধান্তের মধ্যে দিয়ে শেষ হলো কানকুন সম্মেলন।
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় এ পদক্ষপ ঠিক হলেও তা যথাযথ কি না- অংশগ্রহণকারী দেশগুলো এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
‘ভারসাম্যপূর্ণ তহবিল’ গঠনের প্রস্তাবসহ ‘কানকুন সমঝোতা’ নিয়ে সম্মেলনে অংশ নেওয়া দেশগুলো একমত হয় শনিবার।
কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ খুব একটা কমানোর লক্ষ্য বেঁধে দেওয়া না হলেও ‘কানকুন সমঝোতা’কে স্বাগত জানিয়েছে অংশগ্রহণকারীরা। কারণ এতে প্রমাণ হয়েছে উন্মুক্ত বহুপাক্ষিক অংশগ্রহণ প্রক্রিয়ায় এ ধরনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
বাংলাদেশের পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সচিব মিহির কান্তি মজুমদার জানিয়েছেন, কোপেনহেগেন জলবায়ু সম্মেলনে যে সমঝোতা হয়েছিলো খসড়ায় তার উলে¬খযোগ্য অগ্রগতির বিষয়টি ফুটে উঠেছে।
শুক্রবার শেষদিনের সর্বশেষ আলোচনায় যোগদানের প্রাক্কালে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “খসড়াটি গ্রহণযোগ্য হয়েছে। আমি মনে করি, আমরা এ নিয়ে কাজ করতে পারি এবং এগিয়ে যেতে পারি।”
‘সম্মেলনে কাজ হয়েছে’
জাতিসংঘের জলবায়ু বিষয়ক প্রধান ক্রিস্টিয়ানা ফিগুয়ের্স বলেছেন, “কানকুন সম্মেলনে কাজ হয়েছে।”
তিনি বলেন, “সদস্য রাষ্ট্রগুলো দেখিয়েছে যে সবার স্বার্থে একটি ঐকমত্যে পৌঁছাতে তারা একসঙ্গে কাজ করতে পারে।”
“সমন্বিত ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় কাজ করলে সবার জন্যই সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে।”
ফিগুয়ের্স বলেন, তবে এ বিষয়ে অধিকাংশ কাজই আগামী বছর দক্ষিণ আফ্রিকার ডারবানে অনুষ্ঠেয় জলবায়ু সম্মেলনের জন্য রয়ে গেছে।
“এটা শেষ নয়, বরং এটা হচ্ছে নতুন করে শুরু। আসলে যা প্রয়োজন ছিল এটা তা নয়, বরং এটা হচ্ছে সেই ভিত্তি যার ওপর গড়ে তুলতে হবে বৃহত্তর একটি সমন্বিত প্রত্যাশা।”
আশা করা হচ্ছে আগামী জলবায়ু সম্মেলনে একটি চুক্তিতে উপনীত হওয়া সম্ভব হবে যা কিয়োটো সনদের পাশাপাশি কাজ করবে। গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণ কমাতে আইনি বাধ্যবাধকতাসহ একমাত্র বিশ্ব চুক্তি এই ‘কিয়োটো প্রটোকল’।
২০১২ সালে কিয়োটো সনদের মেয়াদ শেষ হতে যাচ্ছে। এর আওতায় নতুন প্রতিশ্র“তির জন্য আগামী বছর পর্যন্ত আলোচনা অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নেয় দেশগুলো।
‘ভবিষ্যতে কার্বন নিঃসরণ কমাতে সম্মতি’
জাতিসংঘ ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন ক্লাইমেট চেঞ্জের (ইউএনএফসিসি) নির্বাহী সচিব বলেন, “ভবিষ্যতে যৌথভাবে নিঃসরণ কমাতে” সম্মত হয়েছে সদস্য দেশগুলো।
এছাড়া নিঃসরণ কমানোর ক্ষেত্রে পরিমাণ নির্ধারণের বিষয়ে একটি সমঝোতা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “তা পূরণের লক্ষ্যে তারা নিজেদের কার্যক্রমের জন্য পরস্পরের কাছে দায়ী থাকবে। বিষয়টি তারা এমনভাবে নির্ধারণ করেছে যা ভবিষ্যতের জন্য দেশগুলোকে আরো আশাবাদী হতে উৎসাহী করেছে।”
গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণের ফলে সূর্যের তাপ বায়ুমণ্ডলে আটকে গিয়ে জলবায়ু পরিবর্তন ঘটায়। আর এতে বৈষ্ণিক উষ্ণতা বেড়ে গিয়ে অতি বৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, বন্যা, ঝড় এবং আশঙ্কাজনকভাবে সমুদ্র সমতলের উচ্চতা বাড়ছে।
২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপর তাপমাত্রা বাড়লে তা পৃথিবীর জন্য ভয়াবহ দুর্যোগ বয়ে আনবে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা। তবে দ্বীপরাষ্ট্রগুলো ও আফ্রিকার দেশসহ দরিদ্র ও ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলো তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখার কথা বলছে।
উপাত্ত অনুযায়ী গত শতকে বিশ্বের তাপমাত্রা ০.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে।
কানকুন সম্মেলনে বিশ্ব তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখার কথা আলোচনা হলেও তাপমাত্রা বৃদ্ধির সীমা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখাই এখনও মূল লক্ষ্য।
ক্রিস্টিয়ানা ফিগুয়ের্স বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আসন্ন পরিস্থিতি মোকাবিলায় নেওয়া পদক্ষেপগুলো যথেষ্ট কিনা তা নিশ্চিত করতে দেশগুলো এর পর্যালোচনার জন্য একটি স্পষ্ট সময়সূচি নির্ধারণ করেছে।”
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/টিএ/পিডি/জেবি/এএমটি/পিডি/২২৩২ ঘ.