তদন্ত দলটি দ্রুততার সঙ্গে প্রযুক্তিগত তথ্যপ্রমাণ ও ফরেনসিক রিপোর্ট সংগ্রহের কাজটি নিশ্চিত করবে।
Published : 01 Jun 2024, 06:50 PM
সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে ‘বিশেষ তদন্ত দল’ গঠন করেছে ভারতের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
‘এসআইটি’ (স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম) নামের এ দল একজন আইজির নেতৃত্বে তিনজন ডিআইজি এবং বিভিন্ন পর্যায়ের ১০-১২ জন কর্মকর্তা নিয়ে গঠন করা হয়েছে। দলটি আনার হত্যার বিস্তারিত তদন্ত করবে বলে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের খবর।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তদন্ত দলটি দ্রুততার সঙ্গে প্রযুক্তিগত তথ্যপ্রমাণ ও ফরেনসিক রিপোর্ট সংগ্রহের কাজটি নিশ্চিত করবে। এ হত্যাকাণ্ডের প্রধান অভিযুক্ত আখতারুজ্জামান শাহীনকে ধরতে ঢাকার পুলিশ ও ইন্টারপোলের সঙ্গে সমন্বয় করবে তারা।
ঢাকা ও কলকাতার পুলিশের ভাষ্য, কলকাতার একটি ফ্ল্যাটে এমপি আনার খুন হওয়ার পর ঢাকা থেকে দিল্লি হয়ে কাঠমান্ডু, সেখান থেকে দুবাই হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান শাহীন।
টাইমস অব ইন্ডিয়া লিখেছে, নেপালে পালিয়ে আছেন শাহীনের সহযোগী সিয়াম হোসেন। তদন্তের জন্য সিআইডির বিশেষ তদন্ত দলটি শিগগির নেপালেও যাবে।
এদিকে তদন্তের অংশ হিসেবে এরই মধ্যে শনিবার নেপালের কাঠমান্ডু গেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের একটি দল।
শনিবার সকালে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার হারুন অর রশীদের নেতৃত্বে তিন সদস্যের দলটি ঢাকা ছাড়ে।
কাঠমাণ্ডু যাওয়ার আগে হারুন বলেন, “ঝিনাইদহের মাননীয় সংসদ সদস্য- ওনার হত্যাকাণ্ডের কয়েকজন আসামি কাঠমান্ডুতে গিয়ে কেউ চলে গেছে, কেউ থাকতে পারে। সেই বিশ্বাসে আমরা সেখানে যাচ্ছি।
“ইন্টারপোলকেও আমরা চিঠি দিয়েছি, ইন্টারপোলের মাধ্যমে আমরা কাঠমান্ডু পুলিশকে জানিয়েছি, এখানে সিয়ামসহ বেশ কয়েকজন আসামি, তারা কেউ চলে গেছে, কেউ আছে।”
আনন্দবাজার পত্রিকাও সিআইডির একটি বিশেষ তদন্ত দল গঠনের খবর দিয়ে বলেছে, দলটি এরই মধ্যে নেপাল সীমান্তে পৌঁছে গেছে। তারা সিয়ামকে ধরার বা হাতে পাওয়ার চেষ্টা করছে। তদন্তকারীদের একটি অংশের দাবি, বাংলাদেশ পুলিশও সিয়ামকে নিজেদের হেফাজতে নিতে চাইছে। দু’পক্ষই চেষ্টা করায় ওই প্রক্রিয়া কিছুটা ধাক্কা খাচ্ছে।
সংসদ সদস্য আনার হত্যার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে বাংলাদেশে তিনজন ও কলকাতায় একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কলকাতার সিআইডি ঢাকায় এসে ও ঢাকার ডিবি কলকাতায় গিয়ে সন্দেহভাজন গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।
বাংলাদেশে গ্রেপ্তার তিনজনকে প্রথম দফায় রিমান্ড শেষে শুক্রবার আরও ৫ দিন হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি পায় ডিবি।
গোয়েন্দাদের তথ্য অনুযায়ী, এমপি আনার হত্যার ‘মাস্টারমাইন্ড’ তার বাল্যবন্ধু ঝিনাইদহের কোর্টচাঁদপুরের আখতারুজ্জামান শাহীন, যিনি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। এ হত্যাকাণ্ড বাস্তবায়ন করেছেন চরমপন্থি নেতা আমানুল্লাহ ওরফে শিমুল ভূঁইঞা।
গ্রেপ্তারদের বরাতে পুলিশ বলছে, এমপি আনার কলকাতায় যাওয়ার পরদিন বৈঠক করার জন্য কলকাতার অভিজাত অ্যাপার্টমেন্ট ব্লক সঞ্জিভা গার্ডেনসে শাহীনের ভাড়া বাসায় যান। সেখানেই আসামিরা তাকে হত্যা করে। হত্যায় অংশ নেওয়া সন্দেহে গ্রেপ্তার অন্য দুজন হলেন তানভীর ভুঁইয়া (৩০) ও সেলেস্টি রহমান (২২)।
ভারত ও বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা আনারকে খুনের বিষয়টি নির্দিষ্ট করে জানালেও তার লাশের হদিস দিতে পারছিলেন না। তদন্তের অংশ হিসেবে কলকাতায় গিয়ে সঞ্জিভা গার্ডেনসের সেপটিক ট্যাংকে কয়েক কেজি মাংসের টুকরা উদ্ধার করার কথা জানায় হারুনের নেতৃত্বাধীন ডিবির প্রতিনিধি দল। সেগুলোর সঙ্গে আনারের স্বজনদের ডিএনএ পরীক্ষার বিষয়টি এখন প্রক্রিয়াধীন।
টাইমস অব ইন্ডিয়া লিখেছে, আনার ও সেলেস্টির মধ্যকার পুরো কথাবার্তা হাতে পেয়েছে কলকাতা সিআইডি। তাদের ধারণা, হত্যার পর আনারের ফোন থেকে যে ব্যক্তি হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ চালাচালি করেছিলেন, তিনিই সিয়াম হোসেন।
সংবাদমাধ্যমটির খবরে বলা হয়েছে, সিআইডির কাছে আরও তথ্য রয়েছে যে, চলতি বছরের প্রথম দিকে শাহীনের সহযোগী হিসেবে আরেক নারী কলকাতায় এসেছিলেন। সেই নারীকে খুঁজে বের করতে ঢাকার পুলিশকে অনুরোধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিআইডি। সেলেস্টির সঙ্গে ওই নারী মেসেজ আদান-প্রদান করেছে বলে তাদের কাছে তথ্য রয়েছে।
ঝিনাইদহ-৪ আসনের তিনবারের সংসদ সদস্য আনার কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। গত ১১ মে তিনি চিকিৎসার জন্য ভারতে যান। প্রথমে কলকাতার বরাহনগরে তার বন্ধু স্বর্ণ ব্যবসায়ী গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে ওঠেন। কিন্তু সেখান থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হন।এরপর স্থানীয় থানায় জিডি করেন গোপাল বিশ্বাস। তদন্ত শুরু হয় দুই দেশে। ২২ মে সকালে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে খবর আসে, নিউ টাউনের এক বাড়িতে খুন হয়েছেন এমপি আনার। এর পরেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ভারতের পুলিশের বরাত দিয়ে হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
আরও পড়ুন:
এমপি আনার হত্যার তদন্তে নেপালে হারুনের দল
আনার হত্যা: গ্রেপ্তাররা আরও ৫ দিনের রিমান্ডে
আনার হত্যা: পানির শব্দের সূত্র ধরে ট্যাংকে লাশের খোঁজ, ভাষ্য হারুনের