বনানীর ১১ নম্বর ব্রিজ এলাকায় বেলা ১২ টার দিকে দুই পক্ষের মুখোমুখি অবস্থানের ফলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
Published : 21 Apr 2025, 03:58 PM
ঢাকার শুলশান এলাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধ করতে কর্তৃপক্ষের উদ্যোগের মধ্যেই ব্যাটারি ও প্যাডেল চালিত রিকশাচালকদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
সোমবার সকাল থেকে বনানী ১১ নম্বর সড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশা চালকরা বিচ্ছিন্নভাবে জমায়েত হতে থাকে।
একপর্যায়ে ১১ নম্বর ব্রিজ এলাকায় বেলা ১২ টার দিকে দুই পক্ষের মুখোমুখি অবস্থানের ফলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এ সময় কেউ ভিডিও বা ছবি তুলতে চাইলে হামলা চালানোর ঘটনাও ঘটেছে।
ট্রাফিক গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. জিয়াউর রহমান বলেন, “গুলশান সোসাইটি এলাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধে সোসাইটি কর্তৃপক্ষ, সিটি করপোরেশন ও পুলিশ মিলে যৌথভাবে চেষ্টা চালাচ্ছে। সেখানকার নির্ধারিত নিবন্ধিত কিছু প্যাডেলচালিত রিকশা আগে থেকেই চলাচল করে।
“বাইরের রিকশা প্রবেশ ঠেকাতে ১১ নম্বর ব্রিজে পুলিশের ক্রাইম বিভাগের একটি চেকপোস্ট ছিল। সেখানে ব্যাটারিচালিত রিকশা আটকানো থেকেই ঘটনার সূত্রপাত। এরপর ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকরা জমায়েত হলে এবং সোসাইটির প্যাডেলচালিত রিকশা চলাকরাও জড়ো হলে দুই পক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নেয়। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।”
সে সময় ১১ নম্বর সড়কে যান চলাচল বিঘ্ন ঘটলেও কিছুসময় পরেই যান চলাচলও স্বাভাবিক হয়ে যায় বলে জানিয়েছেন তিনি।
এদিকে রিকশাচালকদের এমন ঘটনাকে ‘তাণ্ডব’ বর্ণনা করে ফেইসবুকে উষ্মা প্রকাশ করতে দেখা গেছে অনেক প্রত্যক্ষদর্শীকে।
তাদের শেয়ার করা একাধিক ভিডিওতে দেখা গেছে, ১১ নম্বর ব্রিজের ট্রাফিক পুলিশের বক্সে লাঠিপেটা করা হচ্ছে। পুলিশের ব্যারিকেড টেনে সরিয়ে ফেলতে দেখা গেছে সে সব ভিডিওতে।।
এছাড়া একাধিক মোটরসাইকেল আরোহীর উপর লাঠি হাতে হামলা চালাতেও দেখা গেছে রিকশা চালকদের। এ সময় প্যাডেলচালিত রিকশা ও ব্যাটারিচালিত রিকশাও ভাংচুর করেছে দুই পক্ষ।
ট্রাফিক গুলশান জোনের সহকারি কমিশনার আবু সায়েম নয়ন বলেন, “শুনেছি যারা ছবি তুলতে কিংবা ভিডিও করতে চেষ্টা করেছে এমন কেউ নজরে আসলেই মারধর করেছে।”
বনানী থানার পরিদর্শক (অপারেশনস) এ কে এম মইনুদ্দিন বলেছেন, গুলশান সোসাইটি ব্যাটারিচালিত রিকশা প্রবেশ করতে দিচ্ছিল না। ফলে সকাল থেকেই ব্যাটারিচালিত রিকশার চালকরা বিচ্ছিন্নভাবে জমায়েত হওয়ার চেষ্টা করছিলেন।
“আস্তে আস্তে তাদের এগ্রেসিভনেস বাড়ছিল। প্যাডেলচালিত রিকশা দেখলে হামলা করার চেষ্টা করছিল। পরে বেলা একটার দিকে আমরা পরিস্থিতি কন্ট্রোলে নিয়ে আসি।”
এর আগে শনিবার সকাল থেকে শুলশান এলাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধ করার চেষ্টা নেয় কর্তৃপক্ষ।
সেদিন বনানী ১১ নম্বর, বাড্ডা-গুলশান লিংক রোড, গুলশান ২, কালাচাঁদপুর ও পুলিশ প্লাজাসহ কয়েকটি জায়গায় সকাল থেকে অবস্থান নেন পুলিশ ও সোসাইটির নিরাপত্তা কর্মীরা। ফলে এসব এলাকা দিয়ে গুলাশানে ঢোকা বন্ধ হয়ে যায়।
তবে বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন চালকরা। তারা দুপুরের দিকে বনানী ১১ নম্বর সড়ক থেকে রিকশা নিয়ে মিছিল বের করেন। চালকরা দাবি করেন, পায়েচালিত রিকশা চললে ব্যাটারি রিকশাকেও অনুমতি দিতে হবে।
ওইদিন কিছু চালক বিচ্ছিন্নভাবে ছড়িয়ে পড়েন এবং বেশ কিছু পায়েচালিত রিকশা ভাংচুর করেন। এ নিয়ে পুলিশ প্লাজাসহ বিভিন্ন এলাকায় হাঙ্গামাও হয়।
একপর্যায়ে চালকদের বিক্ষোভের মুখে দুপুরের পর থেকেই গুলশান ও বনানী এলাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশার চলাচল ‘স্বাভাবিক’ হয়ে ওঠে।
সেদিন গুলশান সোসাইটির সভাপতি ওমর সাদাত বলেছিলেন, ৫ অগাস্ট সরকার পতনের পর থেকেই ব্যাটারিচালিত রিকশার নিয়ন্ত্রণ সরকারের হাতে নেই।
“ডিপলোমেটরা নানাভাবে এসব রিকশার দ্বারা হয়রানির শিকার হচ্ছেন- এমন অভিযোগ আমাদের কাছে নিয়মিত আসছে। পাশাপাশি ব্যাটারি রিকশা নিয়ে আদালতের নির্দেশনা রয়েছে। এসব বিষয় বিবেচনা করে আমরা গুলশান এলাকায় ব্যাটিারি রিকশা চলাচল বন্ধের ব্যাপারে সিটি করপোরেশন ও পুলিশের সহায়তা নিয়ে কাজ শুরু করি।”
এ ব্যাপারে রিকশার চালক ও মালিকদের সঙ্গেও কথা হয়েছে বলে দাবি করেছেন ওমর সাদাত।
শনিবার দুপুরের পরের পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে ওমর সাদাত বলেন, “এক দিনেই সব হয় না; এটা চলামান প্রক্রিয়া। এ এলাকা সুন্দর ও নিরাপদ করতে আমাদের সব চেষ্টা থাকবে।”
তিনি বলেন, হোলি আর্টিজানে হামলার পর এ এলাকায় রিকশা চলাচলের ব্যাপারে নতুন নিয়মকানুন করা হয়। এ এলাকায় প্রায় সাড়ে চারশ নিবন্ধিত রিকশা রয়েছে। এসব রিকশার চালকদের তথ্য পুলিশের কাছেও আছে।